১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫: সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাবস্থায় সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আদালতে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে যে ধরণের আচরণ করেছেন সেটা শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের জন্য শোভনীয় নয়।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর চিঠি পাঠানো শোভনীয় হয়নি।
সোমবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির অপসারণ চেয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী চিঠি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তিনি এখন চাইলে বিষয়টি সংসদের কাছে পাঠাতে পারেন। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পন্থা নেই। কারণ বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা এখন সংসদ সদস্যদের হাতে। তাই রাষ্ট্রপতি চাইলে সেটা সংসদের কাছে পাঠাবেন।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বিচারপতির বিরুদ্ধে (অভিসংশনের) আবেদন করতেই পারেন। কিন্তু একজন আপিল বিভাগের বিচারপতির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারতির অপসারণ চেয়ে আবেদন এই প্রথম। কোন দেশের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অপসারণের জন্য আবেদন শোভনীয় নয়।
সুপ্রিমকোর্ট বার বিচারপতি মানিককে সংবর্ধনা দেবে না সেটা মেজরিটির সিদ্ধান্ত। তাই আমার একার সিদ্ধান্তে কিছু হবে না। আমার মতামতও তাদের (আইনজীবী সমিতির) পক্ষে রয়েছে।
খন্দকার মাহবুব বলেন, এর আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খাইরুল হককে আমরা সংবর্ধনা দেইনি। তিনি তা বুঝতে পেরে আগেই বলেছিলেন, আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আমি সংবর্ধনা চাই না। কিন্তু আমি তার আগেই গায়েবানা জানাযার মতো আমরা তার গায়েবানা সংবর্ধনা দিয়ে বলেছিলাম যে, আমরা তার শুভ কামনা করি। তেমনি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকেরও শুভ কামনা করি। ভবিষ্যতে তার এই আচরণ থেকে অন্য সবাই শিক্ষা নিবেন।
তিনি বলেন, ক্ষমতা জিনিসটা স্থায়ী না। ভয় রাখতে হয়। যে চেয়ারটায় তিনি আছেন এই চেয়ারটা চিরদিনের জন্য নয়।
সিনিয়র এই আইনজীবী আরো বলেন, আপিল বিভাগের রাযে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক জনকে খালাস দিয়ে রায় দেন। তার ১৩ মাস পরেও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী রায়ে স্বাক্ষর করেননি। তিনি অনেকের রায়ে স্বাক্ষর না করে বিচারপ্রার্থীদের অবর্ননীয় দুর্ভোগে ফেলেছেন। হাইকোর্টে থাকতে দেয়া অনেক মামলার রায় এখনো লিখে শেষ করেননি। শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অনেক মামলার জাজমেন্ট দেননি। তাই অনেক মামলার আসামিরা আপিল আবেদন করতে পারেননি।
তার আগে রোববার সন্ধ্যায় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক প্রধান বিচারপতির সংবিধান লঙ্ঘন, শপথ ভঙ, অসদাচারণের অভিযোগে তার অভিসংশন চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের আবেদনের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
রোববার বিচারপতি মানিককে সংবর্ধনা না দেয়ার পক্ষে আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত ঠিক করে রেজুলেশন পাস করেন। এতে বলা হয়, বিচারপতি এএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কার্যপকলাপ জনসন্মুখে প্রকাশ হওয়ায় এবং স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা ও কোর্টের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে।
শামসুদ্দিন চৌধুরী কারণে আইনজীবী এম ইউ আহমেদ মৃত্যুবরণ করেছেন। আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফসহ ১৪ জন বিজ্ঞ আইনজীবীকে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছিলেন। একই সঙ্গে আইনজীবী মোজ্জাম্মেলসহ অনেকের সঙ্গে অসদাচরণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে সভায় উপস্থিত সাধারণ আইনজীবী তাকে সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনার বিরোধীতা করেন।
তিনি বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের সুযোগ সুবিধা রক্ষা এবং উন্নয়নমূলক কাজে বিরোধীতা করেছেন।পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেছেন যে বিচারপতি পদে শপথ নেয়ার সময় তিনি ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন। ব্রিটিশ নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে শপথ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে যা দুঃখজন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তার উক্ত অনিয়মের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর বেতন ভাতা ও পেনশন প্রদান না করার জন্য প্রধান বিচারপতিকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছে সমিতি। দুদককে এই ব্যাপারে তদন্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছে।
উক্ত বিতর্কিত বিচারপতি তথ্য গোপন করে শপথ গ্রহণ করে দীর্ঘদিন কাজ করা অনৈতিক ও বে-আইনী মনে হওয়ায় সভায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা না জানানোর জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।