টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ২৩৭টি কমিউনিটি সংগঠন ও প্রজেক্টের গ্রান্ট কর্তনের প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল রোডস্থ একটি রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গ্রান্ট কর্তনের প্রতিবাদে গঠিত এ্যাকশন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও সেন্ট পিটার্স বেঙ্গলী এসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা আলহাজ্ব আতিক মিয়া। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এ্যকশন কমিটির সেক্রেটারি টেমস বাংলাদেশী এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি আবু হোসেন, গ্লোব টাউন এলডারলি ক্লাবের সভাপতি আব্দুল লতিফ, শাডওয়েল গার্ডেন টেনেন্ট এন্ড রেসিডেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বুরহান উদ্দিন, শাহপরান মসজিদ ট্রাস্টের সেক্রেটারি কাউন্সিলার মোস্তাকিম প্রমানিক, সিলেটি বাউল সংগীত গোষ্ঠী ইউকের চেয়ারম্যান বাউল শাহ দিলওয়ার আলী, এসোসিয়েটস অব কমিউনিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, হরউড বাংলা স্কুলের প্রেসিডেন্ট আমির আলী, সেক্রেটারি মো: আরমান আলী, কোষাধ্যক্ষ সোলেমান মিয়া প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এভাবে একসঙ্গে এত সংগঠনের গ্রান্ট কর্তনের ঘটনা টাওয়ার হ্যামলেটসের ইতিহাসে এই প্রথম। ২০১৫-১৮ সালের জন্য ৩৬৮ প্রজেক্ট ও সংগঠন মেইনস্ট্রীম গ্রান্টের জন্য আবেদন করে। তন্মধ্যে মাত্র ১৩১টি প্রতিষ্ঠানকে গ্রান্ট প্রদান করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ৩০-৩৫ বছর ধরে অত্যন্ত সুনামের সাথে কাউন্সিলের বাসিন্দাদের সেবা দিয়ে আসছে তাদেরও এ গ্রান্ট থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যার ফলে শত শত প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রায় ১৬টি বাংলা ও চাইনিজ স্কুল, লাঞ্চন ক্লাব, ইয়ুথ ক্লাব, এডভাইস সেন্টার, হেলথ ক্লাব, ডিসএবল প্রতিষ্ঠান, হোমওয়ার্ক ক্লাব ও বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থার সেবা প্রদান বন্ধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে গ্রান্ট বঞ্চিত সংগঠনগুলো গত ২৯ জুলাই কাউন্সিলের গ্রান্ট কমিটির কাছে আপীল করলেও আজ পর্যন্ত কোন উত্তর পাওয়া যায় নি। বিভিন্ন বাংলা স্কুলে কাউন্সিলের নিয়োগকৃত শিক্ষক আছেন, কিন্তু রেন্টের অর্থের অভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
মেইন স্ট্রীম গ্রান্টের আওতায় বিভিন্ন সংগঠন কাউন্সিল থেকে পরিচালনা খরচের মধ্যে শুধু ভাড়া বাবদ ৩-৪ হাজার পাউন্ড পেত। লিবারেল, লেবার ও স্বতন্ত্র মেয়রের আমলে এসব সংগঠন কখনও গ্রান্ট থেকে বঞ্চিত হয়নি। এ বছর কোন অদৃশ্য শক্তির কারসাজিতে এসব সংগঠনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বর্তমান নির্বাহী মেয়র, ডেপুটি মেয়র, কমিশনার ও অফিসারদের কাছে চিঠি লিখেও কোন সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। কাউন্সিলের এ গ্রান্ট না পাওয়ার কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ও জ্ঞান লাভ থেকে তারা বঞ্চিত হবে। বয়স্ক লোকেরা বঞ্চিত হবে বিভিন্ন সেবা থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ জানান, যেসকল সংগঠনকে গ্রান্ট দেওয়া হয়নি তাদের মধ্যে কিছু সংগঠনকে ইনএলিজেবল বা অযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কিছু সংগঠনকে বলা হয়েছে নট-রিকোমেন্ডেড (নির্দেশনা নেই)। অনেক গ্রিন-রেইটেড সংগঠন রয়েছে যেগুলোকে ঢালাওভাবে ইনএলিজেবল ও নট রিকোমেন্ডেড ক্যাটাগরির আওতায় এনে গ্রান্ট কর্তন করা হয়েছে। তারা বলেন, নট রিকোমেন্ডেড অর্থ হচ্ছে সংগঠন যোগ্য আছে কিন্তু কাউন্সিলের কর্তা ব্যক্তিরা রহস্যজনক কারণে তাদের প্রাপ্য গ্রান্ট আটকিয়ে দিয়েছেন। সংগঠনগুলোর মধ্যে সেন্ট পিটার্স বেঙ্গলী এসোসিয়েশনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এটি একটি গ্রীন রেইটেড সংগঠন। এখানে ওয়েলফেয়ার এন্ড এডভাইস সার্ভিস, ইকোনোমিক এনগেইজমেন্ট প্রজেক্ট, প্রিভেনশন অব হেলথ এন্ড ওয়েলবিং ও লাঞ্চিং ক্লাব প্রজেক্ট অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই সংগঠনে ওয়েলফেয়ার এন্ড এডভাইস সার্ভিস প্রজেক্টে গত ২৭ মাসে ৩৫০ জন্য রেসিডেন্টকে সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও ৫২৫জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে। অথচ উক্ত সংগঠনকে কোন গ্রান্ট প্রদান করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে উক্ত সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কাউন্সিলের কমিশনার ও নির্বাহী মেয়রকে গ্রান্টের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহবান জানান। এ লক্ষ্যে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকাল ৫টায় মাইল এন্ড রোডের ব্লু মুন সেন্টারে অনুষ্ঠিতব্য জনসভায় যোগদানের আহবান জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি