ব্রেকিং নিউজ
Home / অপরাধ জগৎ / সম্পত্তি আত্মসাতের লক্ষ্যে ৫ বছর যাবত কোমরে শিকল বেঁধে ঘরে তালাবদ্ধ যুবক বিজয়

সম্পত্তি আত্মসাতের লক্ষ্যে ৫ বছর যাবত কোমরে শিকল বেঁধে ঘরে তালাবদ্ধ যুবক বিজয়

সম্পত্তি আত্মসাৎ করার লক্ষে ৫ বছর যাবত কোমরে শিকল বেঁধে ঘরে তালাবদ্ধ করে যুবক বিজয়কে আটকে রেখেছে চাচা-চাচীরা
নরসিংদীর শিবপুরে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার লক্ষে বাবা-মা’র রেখে যাওয়া একমাত্র সন্তান বিজয় (২৪) কে দীর্ঘ ৫ বছর যাবত একটি ঘরের ভিতর শিকল বন্দী করে পাগল বানিয়ে রাখা হয়েছে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিজয় মৃত্যুবরণ করেল যাতে যার সম্পত্তি তার চাচা-চাচীরা ভোগ করতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তার চাচা-চাচীরাসহ বাড়ীর লোকজন।

মাতা চম্বা ভাস্করের ৩ মাসের গর্ভে থাকা অবস্থায় বিজয়ের বাবা বাদল ভাস্কর মারা যায়। পরবর্তীতে বিজয় ভুমিষ্ট হলে তাকে মা-চাচারা লালন পালন করে। বিজয়ের চাচা শিবু ভাস্কর ও স্বপন ভাস্কর বিজয়ের মায়ের নামে নানা অপবাদ রটনা করে তাকে স্বামীর বাড়ী থেকে নরসিংদীর সদর উপজেলার হাজীপুর গ্রামে বাবার বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় মেয়ের সুখ শান্তি ও বিজয়ের সুখ শান্তি বিবেচনা করে চম্পার মা-বাবা চম্বাকে কুড়িগ্রাম জেলার ভূরিংগা বাড়ীতে দ্বিতীয় বিয়ে দেয়। দ্বিতীয় বিয়ে দেয়ার সময় বিজয়কেও লালন পালনের দায়িত্ব নেয় তার বর্তমান স্বামী। কিন্তু বিজয়ের চাচা ও চাচী ও বাড়ীর অন্যান্যরা বিজয়কে মা চম্পার সাথে না দিয়ে তাদের সাথেই রেখে দেন। এদিকে বিজয় একটু বড় হয়ে উঠার পর তাকে তার নানা-নানীরা শিবপুর থেকে হাজীপুর নিয়ে আসতে চাইলে বাদ সাধে চাচা-চাচীসহ অন্যান্যরা। যে কারনে বিজয়কে আর হাজীপুর আনা সম্ভব হয়নি। এদিকে বিজয়ের বয়স ৭/৮ বছর হবার পর তাকে একটি ঘরে কোমড়ে শিকল বেধে আটক করে তালাবন্দী করে সার্বক্ষণিক আটক রাখে চাচা-চাচীরা। তার খাবারের সাথে নেশা ও বিষাক্ত দ্রব্য খাওয়ানোর ফলে বিজয় দিন দিন ক্ষিণ ও পাগলের আকার ধারণ করেছে। নোংরা পরিবেশে নামমাত্র খাবার দিয়ে বিজয়ের জীবনকে প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে তার চাচা শিবু, স্বপনসহ বাড়ীর অন্যান্যরা। ঘরটি সার্বক্ষণিক তালা বদ্ধ করে রাখার কারনে কেউই তার খোঁজখবর নিতে পারছে না। খাবারের সময় হলে শুধু তালাটি খুলে সময় সময়ে তাকে কিছু খাবার পরিবেশন করা হয়। তাও নোংরা পরিবেশে পলিথিনের মাজে। দীর্ঘ দিন যাবত তাকে গোসল করানো হয়না বলে অভিযোগ করেছেন তার মামী মিনতী ভাস্কর। এ ব্যাপারে বিজয়ের মামী বিজয়কে বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করে তাকে উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য আবেদন জানিয়েছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগনের কাছে। তার আবেদন বিজয়কে সু-চিকিৎসা প্রদান করা হলে বিজয় সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।

জানা যায়, শিবপুর সদরের শিবপুর বাজার গ্রামের বাদল ভাস্করের সাথে বিগত ২৫ বছর পূর্বে নরসিংদীর সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের চম্পা ভাস্করের সাথে বিয়ে হয়।

এ ব্যপারে বিজয়ের মা চম্পা ভাস্কর বলেন, আমার ছেলে বিজয় সুস্থ ছিল। তার বয়স যখন সাত তখন তার দাদী ও চাচা শিবু তাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। তারা আমার ভাল সুস্থ ছেলেকে পাগল বানিয়েছে। তারা একটি ঘরে আমার ছেলে বিজয়কে শিকল বন্দী করে নির্যাতন ও খাবারের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে তাকে খেতে দেয়া হতো। এতে সে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যায়। তিনি তার ছেলেকে বন্দী দশা থেকে মুক্ত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অপর দিকে বিজয়ের মামী মিনতী ভাস্কর জানান, আমার ভাগিনা বিজয়কে জোরপূর্বক ঘরে বন্দী রেখে অমানসিক নির্যাতন করছে বিজয়ের চাচা শিবু ভাস্কর। কারণ বিজয়ের সম্পত্তি গ্রাস করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। বিজয়কে একটি ঘরে উলঙ্গ অবস্থায় কোমরে ছিকল লাগিয়ে ঘরের খুটির সাথে বেধে রাখা হয়েছে। তার খানা-পিনাতেও তারা অনিহা দেখাচ্ছে। তাকে পলিথিনের কাগজে নোংরা পরিবেশে সময় সময় নাম মাত্র কিছু খাবার দেয়া হলেও তা একেবারেই নগন্য। আমরা তার সাথে দেখা করতে গেলে আমাদেরকে দেখা করতে দেয়া হয় না। আমরা তার চিকিৎসার জন্য তাকে নিতে চাইলেও বিজয়ের কাকা শিবু অনিহা প্রকাশ করে। এসময় বিজয়ের মামী মিনতী ভাস্করের সাথে তার মামাতো ভাই রনি ভাস্করও ছিল।

এ ব্যপারে বিজয়ের চাচা শিবু ভাস্কর এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিজয়ের মা মিথ্যা কথা বলেছে। বিজয় মানসিক রোগী সে বাজারের মানুষকে অহেতুক মারপিট করে থাকে। সে কারনে তাকে শিকল বন্দী করে ঘরের ভিতরে রাখা হয়েছে।