সৈয়দ শাহ সেলিম আহমদ: মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের স্থানীয় আমানাহ ব্যাঙ্কুয়েটিং মিলনায়তনে ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্ট অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে স্পেশাল নেটওয়ার্কিং এবং ইউকেবিসিসিআইতে যুক্তরাজ্যের প্রবাসী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ছয় বাঙালি ব্যবসায়ীদের নতুন ডাইরেক্টর হিসেবে যোগদানকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের নানা প্রান্ত এবং নানান খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসায়িক কর্ণধার, সোশ্যালিষ্ট, শিল্প উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী এবং কমিউনিটির খ্যাতিমান নেতৃবৃন্দের ব্যাপক সমাগম ঘটে। ঘড়ির কাটায় ঠিক ১২.৫৫ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এর পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউকেবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট বজলুর রশিদ এমবিই, এর পর পরই বক্তব্য রাখেন ইউকেবিসিসিআইয়ের চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা ব্যাংকার ইকবাল আহমেদ ওবিই। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বজলুর রশিদ এমবিই বলেন, ইউকেবিসিসিআই প্রতিষ্ঠার অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং উদ্যোক্তা সহায়তায় যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ সহ ব্যবসায়ীক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ইউকেবিসিসিআই এর প্রয়াস অব্যাহত আছে। আজকের এই নেটওয়ার্কিং ইভেন্টের মাধ্যমে মূলতঃ উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও ব্যবসা সেক্টরে নতুন নতুন সেতু বন্ধন ও সুযোগ সুবিধা সৃস্টির প্রয়াস মাত্র। নতুন গ্র্যাজুয়েট ও মাস্টার্সধারীদের ইন্টার্নিশীপ ইউকে থেকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানে বা সেখান থেকে এদেশে নিউ এন্টাপ্রিনেরশীপের আওতায় ইন্টার্নিদের জন্য দরজা উম্মুক্ত করার ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ নিয়েছে- সেই চেষ্ঠা অব্যাহত থাকবে। বিশিষ্ট শিল্পপতি ইকবাল আহমেদ ওবিই তার বক্তব্যে বলেন, উভয় দেশের মধ্যে শুধু মাত্র সেতু বন্ধন নয়, বরং বিনিয়োগ এবং নিজেদের উপার্জিত মূলধন ও লভ্যাংশ যাতে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগ ও আগমন- নির্গমন সুচারু ও সহজ ব্যাংকিং লেন দেনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়- ইউকেবিসিসিআই সেজন্যে উভয় দেশের সরকার ও প্রশাসনে পলিসি মেকারদের পর্যায়ে লবিং চালু রেখেছে। ইকবাল আহমেদ তার বক্তব্যে যে পাউন্ড যেখান থেকে আয় করছেন, সেই পাউন্ডে যাতে বন্ড দেশে কিনতে পারেন এবং সে টাকা ব্রিটেনে নিয়ে আসতে পারেন- সেই দাবী সোচ্চার করেন এবং তাদের কাজের সফলতার কথাও তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি ইউকে ইকোনোমিক জোনের দাবীও জানান। অনুষ্ঠানে কি নোট উপস্থাপন করেন ইউকে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টম্যান্টের ইন্টারন্যশনাল ট্রেড এডভাইসর অ্যালেন রাইড।তিনি তার বক্তব্যে ইউকেবিসিসিআইয়ের নানা পর্যায়ের লবিং বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে সব পদক্ষেপ ও সুপারিশ প্রদান করেছে, সেটা উভয় দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্যে উপকারী ও ব্যবসাবান্ধব বলে মন্তব্য করেন। এ সময় অ্যালেন রাইড বলেন, এক সময় আমরা শুধু মাত্র এক্সপোর্ট এবং ইম্পোর্ট সংক্রান্ত নানা তথ্য যেমন শেয়ার ও তার আলোকে যে সব রিকমেন্ডেশন আসতো সেগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সুযোগ সুবিধা প্রদানে কাজ করেছি। বর্তমানে কনজারভেটিভ সরকার মনে করে, আপনারা রপ্তানি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যেমন ভুমিকা রাখতে পারেন, পাশাপাশি লভ্যাংশ সহ বিনিয়োগ অর্জিত ফল ব্রিটিশ সোসাইটিতে অবদান রাখবেন- আমরা সেটাই চাই।আমাদের স্থানীয় কন্স্যুলারের মাধ্যমে সকল সুযোগ সুবিধা ও সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি আশ্বস্থ করেন। অ্যালেন রাইডের বক্তব্যের আগে সদ্য যোগ দেয়া ব্রিটেনের ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রবাসী বাংলাদেশী ছয় ব্যাবসায়ীদের ইউকেবিসিসিআইয়ের নতুন ডিরেক্টর হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়। বিপুল করতালির অনুষ্ঠানে ইউকেবিসিসিআইয়ের কর্ণধারেরা তাদের পরিচয়ও করিয়ে দেন। যে ছয়জন নতুন ডিরেক্টর হিসেবে ইউকেবিসিসিআইতে শরিক হলেন,তাদের মধ্যে রয়েছেন যথাক্রমেদুবাইয়ের বিখ্যাত আল-হারামাইন ইন্টারন্যশনালের ব্যবসায়ী ব্রিটেন প্রবাসী মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান (নাসির), বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম এ গনি, ডঃ এম এ মৌলা মিয়া, আব্দুল কাইয়ূম খালিক (জামাল), হারুন মিয়া এবং নাজিনুর রহিম। ছয়জনই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িকের পাশাপাশি কমিউনিটির নানা প্রতিষ্ঠানের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।ইউকেবিসিসিআই আশা করছে সদ্য যোগ দেয়া নতুন ছয় ডিরেক্টরের মাধ্যমে এই সংস্থার কার্যক্রম আরো গতিশীল এবং বেগবান হবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন(বিসিএ) এর প্রেসিডেন্ট পাশা খন্দকার, ক্যানারি ওয়ার্ফ গ্রুপ পিএলসির হেড অব কমিউনিটি এফেয়ার্স জাকির খান, ব্যারোনেস উদ্দিন, বাংলাদেশের হাই কমিশনার এইচ ই মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান।বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ হান্নান বলেন, ভুলে যান অতীত, চিন্তা করুন এখনকার সময় ও আগামীর স্বপ্নের বাংলাদেশ ও নতুন প্রজন্মের কথা। আসুন ইউকেবিসিসিআই এবং বাংলাদেশ হাই কমিশন এক সাথে কাজ করি, যাতে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি আনয়ন এবং প্রধানমন্ত্রী যে টার্গেট ঘোষণা করেছেন, নিম্ন নয় মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া- আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেই চেষ্ঠা সফল হবে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠণের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুর রউফ জেপি। বেলা ২টায় অভ্যাগত ও আমন্ত্রিত অতিথিদের লাঞ্চ প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।