৭ জুলাই ২০১৫: ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক যেন জয়ী হতে না পারে সেজন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ভোটারদের ওপর হামলা করেছিল বলে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় বাজেট অধিবেশনে এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘তাকে (টিউলিপ) সেখানে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। আপনারা জানেন, রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে ওখানে সব রকমের চেষ্টা করেছে টিউলিপ যেন জিততে না পারে। এমন কি ভোটারদের ওপর লোক পাঠিয়ে হামলা পর্যন্ত করিয়েছে। বাংলাদেশের একটি মেয়ে নির্বাচন করছে, অথচ এরাতো আসলে বাংলাদেশ বা স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না।’
তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত নারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানানোর প্রস্তাব তোলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য দীপু মনি।
প্রস্তাবটি ছিলো, ‘সংসদের অভিমত এই যে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তিনজন নারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্স এর সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মাননীয় সদস্যবৃন্দ রুশনারা আলী, রূপা হক ও টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিককে ধন্যবাদ জানানো হোক।’
ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু ইংল্যান্ড নয়, ইউরোপের সব প্রবাসী বাংলাদেশি টি্উলিপে পাশে দাঁড়িয়েছে, তাকে সমর্থন জানিয়েছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো সব হারিয়েছি। এই বাংলার মানুষের মাঝেই আমরা পিতা-মাতা-ভাই-বোন খুঁজে পেয়েছি। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের জন্য কাজ করা ‘
সংসদ নেতা বলেন, ‘টিউলিপকে আমি দেখেছি, তার এলাকায় প্রতি ঘরে ঘরে গেছে। প্রতিটি মানুষের কাছে গেছে। ভোট চেয়েছে। তার এই যে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা কর্মদক্ষতা এটা সত্যিই বিস্মিত হতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘খুবই অবাক লাগে সেই ছোট্ট টিউলিপ আজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। সেখানে বক্তৃতা দিয়েছে, এত সাবলীলভাবে চমৎকারভাবে কথাগুলো বলেছে। গর্বে আমাদের বুক ভরে গেছে। জয়-পুতুল-ববি আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম। এটা বিরল সম্মাননা সেখানে বসে দেখেছি।’
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে নিজের বোন শেখ রেহানার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাবা সততার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। আমাদের এমন কোনো আর্থিক সঙ্গতি ছিল না বিদেশে পড়াশোনা করার।’
তিনি বলেন, ‘রেহানার বিয়ের ব্যাপারে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সাহেব আগেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিলে। আমাদের তখন কিছু নেই, কেউ নেই। পড়াশোনার খরচ দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। আমার বাবার একজন বন্ধু, তিনিও নির্বাচিত ছিলেন, তিনি রেহানাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেন।’
তিনি বলেন, ‘দুটি ছেলে মেয়ে নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার সঙ্গতি আমার ছিল না। সেখানে গিয়ে কোথায় থাকব। সম্পূর্ণ একা একা ওর (শেখ রেহানা) বিয়ে হয়। চাকরি করেই জীবন কাটায়। নিজের স্বামীর পড়াশোনার ব্যাপারে সহযোগিতা করে। ’৮২ সালে টিউলিপের জন্ম হয়। সেসময় আমি ওর পাশে ছিলাম। ছোট্ট টিউলিপ লেখাপড়া শিখেছে। নিজে চাকরি করেছে। অতটুকু একটা ছোট মানুষ কি যে কষ্ট করতে পারে ভাবলে অবাক লাগে।’
ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশি তিন কন্যা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ব্রিটিশ র্পালামেন্টে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের মানুষের মুখকে উজ্জল করেছেন। যে ব্রিটিশ দু’শো বছর এদেশেকে শাসন করেছে, বাঙালিরা সেই দেশে নির্বাচিত হয়ে গৌরব এনেছে। রুপা হকের বাড়ি পাবনা, রওশন আরার বাড়ি সিলেট, টিউলিপ কিন্তু মূলত ঢাকার মেয়ে। তিন কন্যার জন্য আমি দোয়া করি, তারা বাংলাদেশের জন্য গৌরব এনেছে, বাংলাদেশের মানুষের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’