ব্রেকিং নিউজ
Home / ব্রিটেন সংবাদ / ‘জিহাদ – এ ব্রিটিশ স্টোরি’ ও ব্রিটিশ বাঙালী মুনতাসির

‘জিহাদ – এ ব্রিটিশ স্টোরি’ ও ব্রিটিশ বাঙালী মুনতাসির

নাজমুল হোসেন :  আবু মুনতাসির ১৯৮৪ সাল থেকে জিমাস নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করে কাজ করছেন। দায়িত্ব পালন করছেন সভাপতি হিসেবে।ব্রিটেনের সাফোকে বসবাসকারী এই মুনতাসির এখন তরুণ মুসলিমদের স্টাডি সার্কেলে ডাকছেন, করছেন স্টাডি সার্কেল, নতুন মুসলিমদের দিচ্ছেন সাহায্য ও সহযোগীতা, কমিউনিটিতে করছেন ভাল কাজের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত।বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে একত্রে শান্তিতে বসবাস করার ডাক দিয়ে যাচ্ছেন।

১৯৫৯ সালে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া ৫৫ বছর বয়সি মুনতাসিরকে নিয়ে ব্রিটেনের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম প্রচার করেছে বিশেষ প্রতিবেদন।

কিন্তু এক সময় তাঁর জীবন এ রকম ছিল না। ৮০ ও ৯০-এর দশকে মুনতাসির ছিলেন তরুণ যোদ্ধা। সে সময় তিনি আফগানিস্তান, কাশ্মির, তৎকালীন বার্মা (মিয়ানমার), বসনিয়া ও চেচনিয়ায় কয়েক হাজার ব্রিটিশ তরুণ তরুণীকে ‘যোদ্ধা’ হিসেবে পাঠাতে সহায়তা করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরাক ও সিরিয়ায় তৎপর আইএসআইএলে লোকভর্তির কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

কিন্তু পরবর্তীতে বার্মার জংগলে যখন যুদ্ধ করছিলেন, তখন একদিন উপলব্ধি করেন, তিনি যা করছেন তা মানুষ হত্যা এবং তরুণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
এমি পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা দিয়াহ খান তাঁকে নিয়ে দুই বছর সময় নিয়ে ‘জিহাদ – এ ব্রিটিশ স্টোরি’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন যা ১৫ জুন আইটিভি’তে প্রচারিত হয়েছে।
আবু মুনতাসির এখন অবশ্য তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছেন। ধর্মের নামে এই সহিংস পথ অবলম্বন করার জন্য তিনি লজ্জিত ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন সহিংস পথের চেয়ে সেবার পথই শ্রেয়।

তিনি আরো বলেন, আফগানিস্তান যুদ্ধ থেকে ব্রিটেনে ফিরেই বিভিন্ন দেশে চলমান যুদ্ধে যাওয়ার দরজা খুলে দেই এবং বহু লোক এসব যুদ্ধে যোগ দেয়। আমি মানুষকে যুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি টাকা সংগ্রহ করে অস্ত্র কেনার কাজ করতে থাকি। দীর্ঘ ১৫-২০ বছর ধরে এ কাজ করার পরও নিরাপত্তা বাহিনী আমাকে কেন গ্রেফতার করেনি তা আমি জানি না।”
তিনি ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ দেখেছেন যখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। এরপর ১৯৭১ সালে ধর্মের নামে আরেক যুদ্ধের রূপ দেখেছেন। দেখেছেন কেবলমাত্র ধর্মের কারনে খুন হয়েছে মানুষ,লাশের পর লাশ দেখেছেন, দেখেছেন কুকুরে খাচ্ছে মানুষের মৃতদেহ। সে যুদ্ধে তার ২২ জন আত্মীয়কে তিনি হারান।
আবেগঘন কণ্ঠে তিনি জানান, এরপর হত্যা করা হয় তার আপন বড় ভাইকে। বড় ভাইয়ের এই মৃত্যুর ঘটনা তাকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে। কারণ ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল খুবই গভীর।

যুদ্ধের বিভীষিকা দেখে অভ্যস্ততা ও স্বজন হারানোর বেদনা মানুষের অনুভুতির লোপ ঘটাতে পারে আর তারজন্যই মুনতাসির জিহাদের নামে যুদ্ধের সহিংসতায় তরুণ জীবনে জড়ানোর অন্যতম কারন হতে পারে বলে লন্ডনে কর্মরত মনোবিজ্ঞানী জাকিয়া সুলতানা জানান।