৯ জুন ২০১৫: বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাওয়ার চেয়ে তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের অনেক পদক্ষেপ নেয়ার আছে বলে মনে করছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একইসঙ্গে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করার প্রস্তাবটি বাতিল করে দিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
‘ম্যারি বিফোর ইওর হাউজ ইজ সোয়েপ্ট অ্যাওয়ে: চাইল্ড ম্যারেজ ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের ১৩৯-পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল বছর লন্ডনে এক বৈশ্বিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ একেবারে বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ এরপরও বিয়ের ন্যূনতম বয়স কমিয়ে আনার প্রস্তাবটি তার সে প্রতিশ্রুতি পূরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অর্থাৎ এভাবে প্রতিশ্রুতি রক্ষা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যে কারণে বাড়ছে বাল্যবিবাহ
দেশজুড়ে বাল্যবিবাহের শিকার একশোরও বেশি নারীর সাক্ষাৎকার নেয়ার পর প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের কারণ হিসেবে বেশ কয়েকটি বিষয় শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে আছে দারিদ্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার সুযোগ কম থাকা, সামাজিক চাপ, হয়রানি এবং যৌতুক প্রথা।
ইউনিসেফের তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ২৯ শতাংশ নারীরই ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে বিয়ে হয়ে যায়। আর ১১ বছরের আগে বিয়ে হয় ২ শতাংশ নারীর। আবার অনেকেরই তারও আগে বিয়ে হয়ে যায়। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা আর স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দুষ্কর্মে সহায়তা করার প্রবণতার কারণে বাল্যবিবাহের হার বাড়ছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও বাল্য বিবাহ দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। দারিদ্র্য পীড়িত বাবা-মা দুর্যোগে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার পর কিংবা ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় মেয়েদের তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বিদায় দিতে চান।
নারী অধিকারবিষয়ক গবেষক হিথার বার বলেন, ‘বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ মহামারি আকার ধারণ করেছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সাথে তা আরও ব্যাপকতা পাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার কিছু কিছু ব্যাপারে সঠিক কথা বলছে, তবে মেয়েদের বিয়ের ন্যুনতম বয়স কমানোর প্রস্তাবটি বিপরীত বার্তা উপস্থাপন করে। আগের মত আরও এক প্রজন্মের নারীরা এভাবে বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে হারিয়ে যাওয়ার আগেই সরকারের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’
বাল্যবিবাহের পরিণতি
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, অল্প বয়সে বিয়ের কারণে মেয়েরা শিক্ষাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। শরীরের গঠন মা হওয়ার উপযোগী হওয়ার আগেই তাদের বিয়ে হয়ে গেলে জীবনও হুমকির মুখে পড়তে পারে। বাল্যবিবাহের কারণে পারিবারিক ও যৌন সহিংসতার শিকার হতে হয় মেয়েদের। এমনকি বিবাহ পরবর্তী ধর্ষণেরও আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
বাল্যবিবাহের পর স্বামীর হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এমন এক নারীর বক্তব্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। ওই নারীর নাম রাশিদা। ১০ কিংবা ১১ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় তার। রাশিদা জানায় বিয়ের পর তার অভিজ্ঞতার কথা। ‘সে জোর করে যেওন সম্পর্ক স্থাপন করেছে। আমি খুব কান্না করছিলাম। আমার চোখের পানিতে চারপাশ ভিজে গিয়েছিল। এটা খুবই কষ্টকর ছিল। এভাবে প্রথমদিন, পরের দিন চলতে থাকলো। আমি হাঁটতে পর্যন্ত পারছিলাম না।’ বলে যায় রাশিদা।
১৪ বছর বয়সে বিয়ের শিকার হয়েছেন আরেক নারী সুলতানা। তিনি জানান, ‘আমার বাবার যা জমি-জমা ছিল সবই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেল। আর সেকারণে আমার বাবা-মা আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, বাল্যবিবাহের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সরকারের অনেক কিছু করার আছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার, মেয়েদের স্কুলে ধরে রাখাকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
London Bangla A Force for the community…
