নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে থাকা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পুলিশের আবেদনের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
আদেশে বলা আছে, ‘মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, পিতা আ. রশিদ, পোস্ট- সফুরা, থানা- বোয়ালিয়া, জেলা- রাজশাহী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র। যেহেতু তার বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা নম্বর ৩৮, ৩৭, ৪১, ০৮- এর চার্জশীট চিফ মেট্রোপলিট্রন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এবং চিফ মেট্রোপলিট্রন আদালতে তা গৃহিত হয়েছে, সেহেতু মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনকে স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন) ২০০৯ এর ধারা ১২ উপধারা (১) এর প্রদ্ত্ত্ব ক্ষমতা বলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হল।’
সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়, মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অপসারিত হচ্ছেন এমন গুঞ্জণ এক সপ্তাহ থেকে শোনা যাচ্ছিলো। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্যানেল মেয়ররা দায়িত্ব পেতে পারেন। সিটি মেয়রের বিরুদ্ধে আদালত চার্জশিট গ্রহণ করায় পুলিশের আবেদনের পর তাকে সাময়িক অপসারণের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
রাসিক সূত্রটি আরো জানায়, স্থানীয় সরকারের আইনে (সিটি করপোরেশন) যে কোনো মেয়র বা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় আদালত চার্জশিট গ্রহণ করলে তাকে সাময়িক অপসারণের বিধান আছে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা ১২ তে মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাময়িক বরখাস্তকরণের বিষয়টি এতে উল্লেখ করা হয়েছে। নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলায় রাজশাহী সিটি মেয়র পলাতক রয়েছেন।
রাজশাহীতে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে নাশকতা, সহিংসতা, জানমাল ও সম্পদ বিনষ্টে ভয়াবহতা এবং বিস্ফোরক আইনে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বিরুদ্ধে রাজশাহী মডেল থানায় কয়েকটি মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশের দেয়া চারটি মামলার চার্জশিট আদালত গ্রহণ করেন। সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমেদ বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। এতে মেয়র বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্তের কথা বলা হয়েছিলো।
সাময়িক বরখাস্তকরণের প্রস্তাবনায় স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছিলো, ‘যে ক্ষেত্রে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র অথবা কাউন্সিলরগণের অপসারণের জন্য ধারা-১৩-এর অধীন কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়েছিলো অথবা তাহার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হয়েছে, সেই ক্ষেত্রে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে, ক্ষেত্রমতে, মেয়র বা কোনো কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।
এ প্রেক্ষিতে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, পিতা মৃত আ. রশিদ, সাং-উপশহর, থানা-বোয়ালিয়া মহানগর রাজশাহী, এর বিরুদ্ধে অভিযোগের অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে বিধায় স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯এর ১২৯(১) ধারা অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা যেতে পারে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র বুলবুলের বিরুদ্ধে নাশকতা ও সহিংসতাসহ বিভিন্ন ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় চারটি মামলা হয়েছে। এগুলো হলো- মামলা নং ৩৮, এটি ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর দায়ের করা হয়। ধারা ১৪৭/১৪৮/১৪৮/১৮৬সহ আরও কিছু ধারা। গত ২৫ মার্চ আদালত এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। মামলা নং-৩৭, ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর দায়ের করা হয়।
১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানবলী আইনের ৩ ধারায় মামলা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টম্বর এ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে। মামলা নং-৪১, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল মামলাটি দায়ের করা হয়। ধারা ১৪৩/১৫৩/৩৩২/৪২৭/৩৪ দঃবিঃ। এই মামলায় ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ আদালত মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। মামলা নং-০৮, এটি ২০১১ সালের ৪ দায়ের করা হয়। ধারা, ১৪৩/১৫২/১৫৩সহ আরো ধারা রয়েছে। ২০১৪ সালের ১০ মার্চ আদলত চার্জশিট গ্রহণ করেন।
এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি মেয়র বুলবুলের বরখাস্তের আদেশ চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নামে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ সরকার হত্যাসহ বিস্ফোরক আইনে চারটি মামলা রয়েছে- এমন তথ্য দিয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র পদে কর্মরত থাকলে মামলাগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য তাকে সাময়িক বরখাস্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।