রাত পোহালেই শুরু হবে তিন সিটিতে ভোটগ্রহণ। ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কারা পরিচালনা করবেন তা নির্ধারিত হবে কালই। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণের সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ২০ দলও প্রস্তুত ভোট রক্ষায়। সরকার বিরোধী এ জোটের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া গতকাল তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জোটের কর্মী ও সচেতন ভোটারদের কেন্দ্র পাহারা দেয়ার নিদের্শ দিয়েছেন। বলেছেন, ভোট গণনা না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র ত্যাগ করা যাবে না। কোনো ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করার নির্দেশও দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
এদিকে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র প্রার্থীদের বিজয়ী করতে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের রাজনৈতিক মিত্র দলগুলো মাঠে সক্রিয় রয়েছে। যদিও বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষ থেকে বার বারই অভিযোগ করা হচ্ছে যে, সরকারি দলের লোকেরা জোট সমর্থিত প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সম্ভাব্য কিছু পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে।
তবে কোনো হুমকি ও ভায়ভীতি বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে রাখতে পারবে না বলে জানিয়েছেন আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের একজন জেষ্ঠ্য নেতা। নেতাকর্মীদের সব বাধা উপেক্ষা করে মাঠে থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নির্বাচন পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণের জন্য বিএনপি-জামায়াত এবং আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সমন্বয়ে একাধিক মনিটনিং সেল গঠন করা হয়েছে। আদর্শ ঢাকা আন্দোলন ও বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় বিশেষ মনিটনিং সেল থাকবে। তাছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের বাসায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য মনিটরিং সেল থাকবে।
একইভাবে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের তেজগাঁও এর অফিসেও থাকবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ টিম দুই সিটিতে ঘুরে ঘুরে নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। কোথাও কোনো অনিয়ম বা অসঙ্গতি পাওয়া মাত্রই রিটার্নিং অফিসারের নিকট অভিযোগ করবে তারা। এমনকি ভোটগ্রহণ স্লো বা ভোট কারচুপি হলেও তারা অভিযোগ করবে বলে জানিয়েছেন তারা।
আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের সিনিয়র একজন নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, একটি নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য যেসব প্রস্তুতি দরকার তা সবই গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে ২০ দল সমর্থিত প্রার্থীদের সহজে চিনতে পারে সেজন্য মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতীকসহ পোস্টার একই রশিতে ঝুলানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। গতকাল ২০ দলের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সাবেক কয়েকজন আমলা এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন বলে জানা গেছে। ফজরের নামাজের পরপরই ভোট কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে কর্মীদের। আর ভোটারদের বলা হয়েছে সকাল আটটা থেকে দুপুর বারোটার মধ্যে ভোট দেয়া শেষ করতে।
এদিকে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলনে’র আহ্বায়ক প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোলিং এজেন্ট তাদের কাছে প্রস্তুত রয়েছে। রিজার্ভও রাখা হয়েছে কর্মী বাহিনী। সরকার সমর্থক প্রার্থীদের লোকেরা কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা চালানোর চেষ্টা করলে মোকাবেলার প্রস্তুতিও রয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে কেন্দ্রে আসতে পারে সেজন্য তাদের পূর্ব থেকেই অভয় দেয়া হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দল যখন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত ঠিক তখনই হঠাৎ করে সরকার সিটি নির্বাচনের আয়োজন করেছে। শুরুতে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সিটি নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে যাওয়াই যুক্তিযুক্ত মনে করেছে তারা।
শুরুতে চট্টগ্রামের প্রার্থী সমর্থন দিলেও বেকায়দায় পড়ে ঢাকার দুই সিটির প্রার্থী নিয়ে। শেষ পর্যন্ত ঢাকা উত্তরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর পুত্র তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনের প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়েছে। বিশেষ করে গত ১৮ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সরাসরি ভোটারদের কাছে গিয়ে দল সমর্থিত প্রার্থীদের জন্য ভোট চাওয়ায় পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে গেছে। সরকার শুরুতে ভোটের যে অঙ্ক কষেছিলো তাও আর ঠিক থাকেনি।