বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্যে আবারও ‘অবরুদ্ধ’র ইতিহাসই লেখা হতে যাচ্ছে। সিটি নির্বাচনের সময় তাকে আবার চার দেয়ালে আটকে দেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি দেখে এমনটাই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ পদক্ষেপে এ লক্ষণই ফুটে উঠছে।
কমিশন সূত্র জানায়, খালেদার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশনা দিচ্ছে ইসি। এক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্দেশনা পাবেন রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে।
গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিরাগভাজন হয়েছেন খালেদা। তার এ আচরণকে নির্বাচনী ‘আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু থামেননি খালেদা।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) থেকে বুধবার (২২ এপ্রিল) টানা প্রচারণা চালান তিনি। সোমবার (২০ এপ্রিল) তৃতীয় দিনের মতো বেরিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে হামলার শিকার হন।
হামলায় খালেদার গাড়িবহরের ৬টি গাড়িই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেসব ভাঙা গাড়ি নিয়ে মঙ্গল ও বুধবার (২১ ও ২২ এপ্রিল) প্রচারণায় নেমে পড়েন খালেদা। ফকিরাপুল ও বাংলামটরেও হামলার শিকার হন তিনি।
বুধবারের ঘটনায় খালেদাকে বহনকারী গাড়ি ও তার সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যরা আহত হন। সেসব কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) মাঠে নামেননি। কিন্তু পরদিন শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) খালেদা জিয়া আবারও ভোটের নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়লেন খোলা গাড়িগুলো নিয়ে।
যেহেতু কোনোভাবেই থামছেন না খালেদা, নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন না। তাই তাকে বোঝাতে না পেরে কমিশনকেই ভিন্ন পথে হাঁটতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
ওই সূত্র বলছে, ইসি’র বর্তমান পদক্ষেপ অনুযায়ী-গাড়িবহর নিয়ে প্রচারণায় নামলে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ আসতে পারে খালেদার প্রতি। এছাড়া তিনি যদি ‘বারাবারি’ করেন তবে সিটি নির্বাচনের সময় তার বাসার সামনে পাহারা বসানো হতে পারে।
অপর একটি সূত্র দাবি করছে, ‘শুধু পাহারা নয়, খালেদার বের হওয়ার বিষয়ে বাধা আসতে পারে বা বাসার সামনে ব্যারিকেড দেওয়াও হতে পারে।’
অবশ্য গত বছরের ৫ জানুয়ারির আগে-পরে এমন পরিস্থিতি দেখেছেন খালেদা। চলতি বছরেরও একই সময়ে পরিস্থিতি অনেকটা সেরকমই ছিল। পার্থক্য ছিল- আগেরবার বাসায় ‘অবরুদ্ধ’ ছিলেন তিনি, পরেরবার গুলশান কার্যালয়ে।
অতীত বিশ্লেষণ করলে ভোটের আগে-পরে মিলিয়ে খালেদার মুক্ত বিচরণ হয়তো দেখা যাবে না।
তবে উত্তরের ভোটার হিসেবে খালেদা ভোট দিতে যেতে পারবেন নিয়মানুযায়ী। নির্বাচনে স্বাভাবিক নিয়মেই গাড়িবহর নিয়ে কেউ ভোট দিতে যেতে পারেন না। তবে নিয়মনীতি মেনে ভোট দিতে গেলে কোনো বাধা পাবেন না খালেদা জিয়া।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শুধু খালেদার ক্ষেত্রেই নয়, গাড়িবহর নিয়ে কেউই যেন প্রচারণায় অংশ না নেন, সে নির্দেশনা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সুতরাং খালেদা বলে নন, নিয়ম বলেই বহর নিয়ে প্রচারণায় বাধা পাবেন তিনি। যেহেতু তার নিরাপত্তার বিষয়টি রয়েছে-সেহেতু তাকে এক গাড়ি নিয়ে ঢাকা শহর ঘোরার চিত্রে দেখার সম্ভাবনাও খুবই কম। বহর না নিয়ে তিনি প্রচারে নামবেন- এমনটি নিশ্চয়ই তার কাছের মানুষরাও ভাবছেন না।
ইসি’র উপ-সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণার জন্য রাস্তা বন্ধ করে জনগণের অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারেন না। এছাড়া, গাড়িবহর নিয়েও প্রচারণায় অংশ নেওয়াও নির্বাচনী বিধির পরিপন্থি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যেভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন বা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যেভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ব্যক্তিগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নিলেও ভবিষ্যতে যেন প্রচারণা না চালাতে পারেন সে ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসি। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশনা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে কমিশন নির্দেশনা দেবে। কারণ তিনি (খালেদা জিয়া) যে কাজ করেছেন, তা আচরণবিধির লঙ্ঘন। এছাড়া হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে যদি সতর্ক করে চিঠি দেওয়া যায়, তবে তাকে কেন নয়?
সূত্র জানিয়েছে শনিবারের মধ্যেই চিঠিটি খালেদার হাতে পৌঁছে যাবে।