জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজ হওয়ার বিষয়টি সংক্ষিপ্ত রায়ের চেয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় লিখে প্রকাশ করার পক্ষে বিচারপতিগণ। সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি ও আরো একজন বিচারপতিও চাইছেন রিভিউ খারিজ হওয়ার বিষয়টির পূর্নাঙ্গ রায়টি লিখে সেটাকে স্বাক্ষর করতে। আর সেটা লিখে তারা সেটি পাঠাবেন রেজিস্ট্রারের কাছে। রেজিস্ট্রার চাইলে তিনি সরাসরি রায়টি কারাগারে পাঠাতে পারেন। এর ভিত্তিতে কামারুজ্জামান পুরো রাটি দেখে যদি মনে করেন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন সেটা চাইতে পারেন। আর যদি না চান সেটা তিনি নাও চাইতে পারেন।
আবার রেজিস্ট্রার সরাসরি না পাঠিয়ে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমেও পাঠাতে পারেন। তবে সংক্ষিপ্ত রায়ের ভিত্তিতে রায়ের ভিত্তিতেও রায় কার্যকর করতে বাঁধা নেই।
এদিকে একটি সূত্র বলছে, রিভিউ খারিজ করার রায়ের একটি খসড়া রায় লিখে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার -৩ মেহেদী হাসান বলেন, আমার কাছে এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোন খবর নেই। কারণ রায় লেখার পর স্বাক্ষর হলে সেটা আমাদের কাছে আসবে। সেটা আমরাই কারাগারে পাঠাবো। আর কারাগার পরবর্তী ব্যবস্থা নিবে। তিনি বলেন, আমি বিকেলের (মঙ্গলবার) পর থেকে বাসায়ই আছি। এই ধরনের রায় স্বাক্ষর হলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে অফিস থেকে জানালে আমি সেখানে যাবো। আনুষ্ঠানিকতা করবো। তিনি বলেন, সোমবার কামারুজ্জামান এর বিষয় নিয়ে গণমাধ্যম অনেক কথা অগ্রিম প্রকাশ করে বিভ্রান্ত্রি ছড়ায়। মঙ্গলবারও তেমনটি করছেন কিনা আমি জানিনা। কারণ রায় স্বাক্ষর হলে আমরা জানবো। আর রায়ের খসড়া প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে সেটা আমরা জানবো না। কারণ বিচারপতিদের ওখানে কি হয় সেটা আমরা এই ব্যাপারে জানতে চাই না।
চুড়ান্ত রায় লিখতে দেরী হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রায় লিখতে কেন দেরী হচ্ছে সেটা আমার জানা নেই। আসলে এটা লিখতে এত দেরী হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, আদালতের বিচারপতিগণ চাইলে ‘রিভিশন ডিসমিস’ এটা লিখে শর্ট রায় লিখে চারজন যদি সাইন করে দেন তাহলে রায় কার্যকর করতে বাঁধা থাকবে না। কেবল শর্ট রায় হলেই হয়। শর্ট রায় চুড়ান্ত হচ্ছে না কেন এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাও আমি ঠিক বলতে পরবো না।
আইন মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্ব সূত্র জানান, বিচারপতি চাইলে এক ঘন্টায়ও শর্ট রায় লিখতে পারেন। রায় কার্যকর করার জন্য রিভিউ খারিজ করার জন্য কেন খারিজ করা হলো এর পূর্নাঙ্গ রায় লাগবে না। এটা রায় কার্যকর করার পরও লেখা হলেও সমস্যা নেই। তিনি বলেন, এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, আপিল বিভাগের একটি পূর্নাঙ্গ রায় কিন্তু আগে থেকেই আছে।
এদিকে আইন মন্ত্রণালয়ের ওই সূত্র জানায়, এর আগেই একজন বিচারপতি অন্যান্য বিচারপতিদের সঙ্গে একমত হননি। তিনি নোট অব ডিসেন্ট দেন। সেটা এখনও বহাল আছে। এই জন্য রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিলেও তার সেটা বহাল আছে। তিনি বলেন, কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন যে, রিভিউ খারিজ করে দিলেও অনেকেই মনে করছেন এটা কার্যকর নেই। এটা ঠিক না। এটা সব সময়ের জন্য বহাল থাকবে। রিভিউ পিটশন খারিজ করার কিংবা রিভিশন ডিসমিস করার যে আদেশ হয়েছে সেখানে ওই বিচারকের আপত্তির কথাটির বিবরণ থাকবে।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গতকাল বিচারপতি গণ চুড়ান্ত রায় লিখে শেষ করেননি এবং স্বাক্ষরও করেননি। আর তা না করায় সেটা কারাগারে পাঠানো সম্ভব হয়নি। কোন কোন গণমাধ্যম বলছে খসড়া রিপোর্ট লিখে সব বিচারপতিকে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায়। বুধবারও হবে কিনা এটাও নিশ্চিত নয়। তবে এটর্নী জেনারেল এডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, আমি রেজিস্ট্রার অফিসেও মঙ্গলবার রাতে খবর নিয়েছি। সেখান থেকে জানানো হয়েছে চুড়ান্ত রায়টি এখনও লেখা হয়নি ও স্বাক্ষর হয়নি বলে তারা পাননি। আর পাননি বলেই তারা এই কারাগারেও পাঠাতে পারেননি। একজন বিচারপতির নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি পূর্নাঙ্গ রায় দেওয়ার সময় নোট অব ডিসেন্ট দেন। সেটা সব সময়ের জন্য বহাল। এখন যে রিভিশন খারিজ হলো তাতেও সেটা বহাল আছে।
রায় লেখার বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিচারপতিগন যদি তাদের শর্ট রায় লিখেন প্রথমে, সেখানে যদি তারা লিখে দেন রিভিউ ডিসমিস তাহলেই হবে। আর সেটা দিয়েই রায় কার্যকর করা যাবে। এতে কোন সমস্যা তৈরি হবে না।
মঙ্গলবার রাতে ও কিংবা বুধবার কার্য দিবসের শুরুতেই চুড়ান্ত রায় স্বাক্ষর হতে পারে কিনা জানতে চাইলে এটর্নী জেনারেল বলেন, তিনি বলেন, মঙ্গলবারে আর কোন সম্ভাবনা নেই। বুধবারে কার্যদিবসের শুরুতে হবে কিনা জানি না। তবে বুধবার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর এই জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে।
একজন বিচারপতি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন কিনা এই ব্যাপারে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রী বলেন, তিনি আগেও পূর্নাঙ্গ রায় দেওয়ার সময় নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। সেটা বহাল আছে। শুনেছি এবারও তিনি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে এবং তিনি ঠিক কি লিখেন কিংবা বলেছেন, সেটা সম্পর্কে আমাকে আরো খবর নিতে হবে।
এদিকে সূত্র জানায়, সরকারের তরফের কেউ কেউ শর্ট রায় স্বাক্ষর হয়ে বের হলে সেটা রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠিয়ে এরপর কামারুজ্জামানকে শুনিয়ে তারপর তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে সেটার সুযোগ নিবেন কিনা এটা কারা কর্তৃপক্ষ জানতে চাইবেন। তিনি প্রাণভিক্ষা না চাইলেতো সময় বেশি লাগবে না। সব সব আনুষ্ঠানিকতা করবে।
এদিকে একটি সূত্র বলেছেন, সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বিচারের রায় নিয়ে ও তা কার্যকর করা নিয়ে কোন ধরনের সমালোচনা হোক সেটা চাইছেন না। আর এই কারণে তিনি চাইছেন রিভিউ ডিসমিস হওয়া, এরপর রায় হওয়া, রায় কার্যকর জন্য যত রকম আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার তা যেন হয় সেটাও নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এনিয়ে কোন ধরনের তড়িঘড়ি করতে চাইছেন না। বিচারকরা যে ভাবে কাজ করছেন তিনি সেটাই চাইছেন। সূত্র জানায়, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর যে সমালোচনা হয়েছিল এই ক্ষেত্রে যাতে সেটা না হয় তিনি সেটাই চাইছেন। সূত্র জানায়, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছিল ওই রায় দেওয়ার পর তিনি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন। তার রিভিশনটি আদালত খারিজ করে দেন। আর ওই খারিজের আদেশের পর আদালত সংক্ষিপ্ত রায় দেন। সেটা দেওয়ার পর ওই রায় কারাগারে পাঠিয়ে ওই দিন রাতেই রায় কার্যকর করে সরকার। এনিয়ে সরকারকে সমালোচনায়ও পড়তে হয়। এবার সেটি করতে চাইছে না।
এই ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্ট বারের সভাপতি ও কামারুজ্জামানের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কামারুজ্জামানের রিভিউ আদালত খারিজ করে দিয়েছে। কিন্তু তা দিলেও এখন ওই একটি সংক্ষিপ্ত রায় দিয়ে সেটা কার্যকর করা ঠিক হবে না। সরকার চাইলে সংক্ষিপ্ত রায়ের ভিত্তিতে কার্যকর করতে পারে। কিন্তু সংক্ষিপ্ত রায় এখনও হয়নি। এটা হতে আরো সময় লাগবে।
কেন চুড়ান্ত রায় লিখতে ও স্বাক্ষর লিখতে দেরী হচ্ছে এই ব্যাপারে তিনি জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আদালত রায় বিলম্বে লেখার কারণ অবশ্যই আছে। কারণ আমি এই মামলায় বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি দিয়েছিলাম। ওই সব আপত্তির বিষয়টি সুরাহা হয়নি। আদালত রিভিশন খারিজ করে দেওয়ার কারণে আমি যেসব বিষয়ে আপত্তি দিলাম এই ব্যাপারেতো বিচারপতিগন ব্যাখ্যা দিবেন। সেটা তারা সংক্ষিপ্ত রায়ে দিতে পারবেন না। সেটা দিতে হলে রিভিশন খারিজের পূর্নাঙ্গ রায়ে লিখতে হবে। আর সরকার যদি মনে করে সেটা ছাড়াই কার্যকর করতে সেটা তারা কার্যকর সংক্ষিপ্ত রায়ের আলোকেই করে দিতে পারে। কিন্তু সেটা ঠিক হবে না।
খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে কামারুজ্জামানের ফাঁসির দন্ড কার্যকর করা উচিত হবে না। রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনে যে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি তা খন্ডন করা হয়নি। সেটা খন্ড না করে এবং পূর্ণাঙ্গ রায় ছাড়া ফাঁসির কার্যকর করা উচিত হবে না। রিভিউ আবেদনের শুনানিতে আমরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। তা খন্ডনের বিষয়টি জানতে হবে। আর এ জন্য পূর্ণাঙ্গ রায় ছাড়া দন্ড কার্যকর উচিত হবে না। রায় পুনর্বিবেচনা খারিজের সংক্ষিপ্ত আদেশে জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তাদের পক্ষে সম্ভব। ওটাও ঠিক ছিল না।
কোন কোন বিষয়ে আপত্তি দিয়েছেন, তিনি বলেন, আমি বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি দিয়েছি। আর এই মধ্যে একটি হচ্ছে প্রথমে দশ জন স্বাক্ষী ছিলেন। এরপর আরো নতুন করে তিনজন নারী স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, একজন আইউইটনেস নয় আর একজন বলেছেন, স্বাধীনতার পর তিনি কামারুজ্জামানের নাম শুনেছেন। আরো একজনও প্রায় একই রকম কথা বলেছেন। এই অবস্থায় আমি অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, আমি যে সব বিষয়ে আপত্তি দিয়েছি। ওই সব বিষয়ের ব্যাপারে আদালতকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। আর সেটা দিয়ে এরপর সকল বিচারপতির স্বাক্ষর হতে হবে। সেটা হলে সুবিধা হবে। এখন পুর্ণাঙ্গ রায়টি দরকার। তিনি বলেন, আরো বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে। আর এই কারণেই আমি মনে করি রিভিউ বাতিল করার পূর্নাঙ্গ রায় লিখে দিলে এরপর তা কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে পারে।
তিনি বলেন, আদালত আমার সাজেশন গ্রহণ না করে আগের রায় বহাল রাখেন এবং রিভিশন ডিসমিস করেন। এখন হয়তো বিচারকরা বিবেচনা করবেন যে, তার রায় কার্যকর করার আগে পূর্নাঙ্গ রায়টি লিখে এরপর কারাগারে পাঠালে কামারুজ্জামান এটা বিবেচনা করবেন মার্সি পিটিশন করবেন কিনা সিদ্ধান্ত নিবেন।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি একজন অত্যন্ত বিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। তিনি কোন ভাবেই কোন মামলা নিয়ে ও রায় নিয়ে তাড়াহুড়া করবেন না। নিয়ম অনুযায়ী রায় লিখবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই কারণেই তিনি পূর্নাঙ্গ রায় লিলেকই রায় দিতে পারেন।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, সংক্ষিপ্ত রায় হলে সব বিচারপতি স্বাক্ষর করলেই হবে। তখন সেটা কার্যকর করা যাবে। আর যদি পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা হয় তাহলে জুনিয়র বিচারপতি থেকে শুরু করে সিনিয়র বিচারপতিদের কাছে যাবে। তারা স্বাক্ষর করে দিলে সেটা ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমেও কারাগারে যেতে পারে আর সেটা না হলে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের মাধ্যমে যেতে পারে।
একজন বিচারপতি নাকি রিভিউ পিটিশন খারিজের ব্যাপারে নোটি অব ডিসেন্ট দিয়েছেন এই ব্যাপারে খন্দকার মাহববু হোসেন বলেন, তিনি পূর্নাঙ্গ রায়ের সময়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। এটাকে বলা হয় ডিসটিং জাজমেন্ট। রিভিশন খারিজ হলেও তা বহাল আছে। তার ওই নোট অব ডিসেন্ট বহাল থাকায় সেটারও পূর্নাঙ্গ ব্যাখ্যা রিভিশন খারিজ করার রায়ে থাকবে। এছাড়াও তিনি যে রিভিশন খারিজ করে দিলেন বিচারপতি গন সেখানেও তিনি নোট অব ডিসেন্ট দেন। কারণ তিনি অন্য বিচারপতি গনের সঙ্গে একমত নন। তবে যেহেতু সংখ্যঅ ঘরিষ্ট বিচারপতিদের মতামতের ভিত্তিতে রায় কার্যকর হবে। সেই ক্ষেত্রে এই বিষয়টি নিয়ে রায় কার্যকর করতে কোন প্রভাব ফেলবে না।
London Bangla A Force for the community…
