আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নাশকতা ও ফৌজদারি অপরাধের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদের কোনো ছাড় দেবে না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নাশকতা মামলার কোনো আসামি নির্বাচন উপলক্ষে আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এলেই গ্রেফতার করা হবে। রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে চলমান নৈরাজ্যে যারা এরই মধ্যে ইন্ধনদাতা, অর্থদাতা ও সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত, সিটি নির্বাচন কেন্দ্র করে তারা রাজনীতির মাঠ গরমের চেষ্টা করলে পুলিশ-র্যাব তাদের আইনের আওতায় নেবে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পুুলিশ সদর দপ্তরে প্রাক-নির্বাচনী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক। সভায় র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজধানীর সব ক্রাইম ডিভিশনের ডিসিরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করতে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জীবনালেখ্য তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যাতে ‘গডফাদার’ হয়ে দূর থেকে নির্বাচনে কোনো প্রভাব রাখতে না পারে, সে ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওয়ার্ডভিত্তিক সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করে তাদের এখনই নজরদারির মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে।ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা যা দরকার, তা-ই করবে। সন্ত্রাসী ও অবৈধ সন্ত্রাসী, এমনকি বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যাতে নির্বাচনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না রাখতে পারে, সে ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক থাকবে। নাশকতা ও অন্যান্য ফৌজদারি মামলার আসামিদের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সম্ভাব্য প্রার্থীরা যাতে সন্ত্রাসী, অপরাধী ও দুর্বৃত্তদের ভাড়া করতে না পারে, সে ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৈধ অস্ত্রধারীদের ব্যাপারে খোঁজ নেবে পুলিশ-র্যাব। নির্বাচনে যাতে বৈধ অস্ত্র-গুলির অবৈধ ব্যবহার না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে এখন থেকেই মাঠে নামতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সিটি নির্বাচন ঘিরে অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে আলাদা কোনো পৃথক অভিযান নয়, নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের চলমান অভিযানেই তা সম্পন্ন হবে। কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা যাতে নির্বাচনে কোনো প্রভাব রাখতে পারে, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকবে পুলিশ-র্যাব।
বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, জটিল সময়ে এবারে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হচ্ছে। সব গোয়েন্দা সংস্থা তাই মাঠে নেমেছে। পুরনো তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের পাশাপশি নতুন তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুই মহানগরীতেই তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি ভাড়াটে অপরাধীরা বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে নির্বাচনে ভয়ভীতি দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চালাতে পারে। এ ধরনের যে কোনো পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর থানাগুলোর চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, অস্ত্র ও বোমাবাজদের তালিকা হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেই বাংলা নববর্ষ। এই দিনটিতে রাজধানীসহ সারাদেশেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। এবার পহেলা বৈশাখের আগেই রাজধানীতে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। নির্বাচনের অন্তত ১৫ দিন আগেই দুই সিটি করপোরেশনে বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে জঙ্গিরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি হয়ে না উঠতে পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে পুলিশ-র্যাব।
London Bangla A Force for the community…
