ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন আগেই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। এবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে সেমিফাইনাল। তবে সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে হলে বেশ কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে টাইগারদের।
বৃহস্পতিবার মেলবোর্নে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের দেওয়া ৩০৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করছে বাংলাদেশ।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৪৪.৪ ওভার শেষে টাইগারদের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ১৯৩ রান। ব্যাট করছেন তাসকিন ও সাব্বির রহমান।
অাউট হয়ে ফিরে গেছেন তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, নাসির হোসেন, মাশরাফি ও রুবেল।
লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালোই করেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। তবে উমেশ যাদবের করা ইনিংসের সপ্তম ওভারে পর পর দুই বলে বিদায় নেন এই দুজন। ওই ওভারের তৃতীয় বলে ধোনির গ্লাভসবন্দি হন তামিম (২৫)। পরের বলেই সৌম্য সরকারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি করে রানআউটের শিকার হন ইমরুল (৫)। বিদায় নেওয়ার ৩৩ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন দুজন। দ্বিতীয় উইকেটে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য সরকার। তবে দলীয় ৭৩ রানে বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ (২১)। মোহাম্মদ সামির বলে বাউন্ডারিতে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে ধরা পড়েন তিনি। এ জুটিতে আসে ৪০ রান।
এরপর সাকিবের সঙ্গে ১৭ রানের জুটি গড়ে সৌম্যও বিদায় নেন। মোহাম্মদ সামির বলে ধোনির গ্লাভসবন্দি হন ২৯ রান করা সৌম্য। ৩টি চার ও একটি ছক্কায় এ রান করেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। সৌম্যর বিদায়ের পর সাকিবও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। দলীয় ১০৪ রানে জাদেজার বলে সামির হাতে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব (১০)। দলীয় ১৩৯ রানে উমেশ যাদবের শর্ট বলে ধোনির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। সাব্বির রহমানের সঙ্গে ৩৫ রানের একটি জুটি গড়েন তিনি। দলীয় ১৮৯ রানে জাদেজার বলে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন নাসির হোসেন। সাব্বির রহমানের সঙ্গে ৫০ রানের একটি জুটি গড়েন। এরপর মোহিত শর্মার বলে ধোনির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরত যান মাশরাফি। দলীয় ১৯৩ রানে উমেশ যাদবের বলে অশ্বিনের হাতে ধরা পরেন রুবেল।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৩০২ রান সংগ্রহ করে ভারত।
ব্যাট করতে নেমে ভারতকে ভালো সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা। উইকেটের সন্ধানে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভার থেকেই এক প্রান্তে স্পিন আক্রমণ শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। শুরুতে সফলতা না এলেও ইনিংসের ১৭তম ওভারে শিখর ধাওয়ানের উইকেট তুলে নেন সাকিব। সাকিবের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে শট খেলতে যান ধাওয়ান। ভারতীয় ওপেনার বল মিস করায় সুযোগটি কাজে লাগান উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। ধাওয়ানকে স্ট্যাম্পিং করেন তিনি। ফলে ধাওয়ান-রোহিত শর্মার ৭৫ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙে। ৫০ বলে ৩০ রান করেন ধাওয়ান।
এরপর দলীয় ৭৯ রানে নতুন ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকে সাজঘরের পথ দেখান রুবেল হোসেন। রুবেলের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের একটি বলে শট খেলতে গিয়ে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি হন কোহলি। ৮ বলে মাত্র ৩ রান করেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তৃতীয় উইকেটে অজিঙ্কা রাহানেকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন এক প্রান্ত আগলে রাখা রোহিত শর্মা। তবে রাহানেকে ফিরিয়ে ৩৬ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। রাহানেকে কভারে সাকিবের ক্যাচে পরিণত করেন তাসকিন। ৩৭ বলে ১৯ রান করেন রাহানে।
চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন রোহিত শর্মা ও সুরেশ রায়না। ইনিংসের ৪০তম ওভারে রুবেলের বলে আম্পায়ারের একটি ‘বিতর্কিত’ সিদ্ধান্তের কারণে আউট হয়েও বেঁচে যান রোহিত! তখন রোহিতের সংগ্রহ ছিল ৯০ রান। রুবেলের ফুলটস বলে ডিপে ইমরুল কায়েসকে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত। কিন্তু হাইটের কারণে তা নো বল কল করেন পাকিস্তানি লেগ আম্পায়ার আলিম দার। পরে ইংল্যান্ডের আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড সেটা নো বল ঘোষণা করেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি রোহিতের কোমড়ের নিচেই ছিল! আম্পায়ারের কল্যাণে নতুন জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি করেন রোহিত। অবশ্য রায়নাকে ফিরিয়ে ১২২ রানের জুটি ভাঙেন মাশরাফি। ৬৫ রান করা রায়নাকে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
দলীয় ২৭৩ রানে সেঞ্চুরি করা রোহিত শর্মাকে বোল্ড করেন তাসকিন। ১২৬ বলে ১৪ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩৭ রান করেন রোহিত। ইনিংসের ৪৯তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ২৯৬ রানে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ফেরান ওই তাসকিন। শেষ পর্যন্ত ২৩ রানে অপরাজিত থেকে ভারতের স্কোর ৩০০ রান পার করেন রবীন্দ্র জাদেজা।
ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৩৭ রান করেন রোহিত শর্মা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৫ রান আসে সুরেশ রায়নার ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলে একটি পরিবর্তন এসেছে। তাইজুল ইসলামের পরিবর্তে দলে ফিরেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান রুম্মান, নাসির হোসেন, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ।
ভারতীয় দলে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
ভারতীয় দল: শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, অজিঙ্কা রাহানে, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, মোহাম্মদ শামি, মোহিত শর্মা ও উমেশ যাদব।
বিশ্বকাপের এ আসরে এখন পর্যন্ত অপরাজিত দল ভারত। গ্রুপ পর্বে ছয় ম্যাচের সবগুলোতেই জেতে মহেন্দ্র সিং ধোনি দল। বাংলাদেশও কম যায়নি। শ্রীলঙ্কার কাছে হার ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচ পরিত্যক্ত হলেও আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ আটে ওঠে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকেও কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন টাইগাররা।
এদিকে আজ নিজেদের ৩০০তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। টাইগাররা তাদের ১০০ ও ১৫০তম ম্যাচে এই ভারতকেই পরাজিত করে। আজ ৩০০তম কী হয়, সেটাই দেখার বিষয়!
বিশ্বকাপে এর আগে দুবার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে বাংলাদেশ ৫ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় পায়। আর ২০১১ বিশ্বকাপে ঢাকায় ৮৭ রানে জেতে ভারতীয়রা।