ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / সজিব ওয়াজেদ জয়ের গোপন তথ্য সংগ্রহকারি সেই সিজার

সজিব ওয়াজেদ জয়ের গোপন তথ্য সংগ্রহকারি সেই সিজার

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের ব্যক্তিগত ব্যাংক তহবিলের হিসাব-নিকাশসহ তার নানা রকম গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য এফবিআই এজেন্টদের ঘুষ দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে এবং প্রবাসে বেশ আলোচিত নাম রিজভী আহমেদ সিজার।

ঘুষ দেওয়ার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় এই বাংলাদেশিকে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ৪২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে তার কারাবাস শুরু হওয়ার কথা।
এরইমধ্যে গত শনিবার বিকেলে নিউ ইয়র্কে একটি সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন সিজার।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭ টায় বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের ফুডকোর্ট রেস্তোরাঁয় যথারীতি সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন তিনি। পাশে বসা ছিলেন তার বাবা সাবেক বিএনপি নেতা মাহমুদ উল্লাহ মামুন।
লিখিত বক্তব্যের কপি সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণ শেষে সেটি পড়া শুরু করা মাত্রই আওয়ামী লীগের একদল নেতা-কর্মী হামলা চালিয়ে সংবাদ সম্মেলন ভণ্ডুল করে দেয়। হামলায় নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। তাদের হামলার মুখে সিজার ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সেখানেই বক্তৃতা করেন ড. সিদ্দিকুর রহমান।
প্রসঙ্গত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার বাংলাদেশের জনৈক রাজনীতিকের বিষয়ে গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের দুই এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রায় দেড় বছর আগে। সেই মামলায় ঘুষ প্রদানের অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়ার পর গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কের একটি আদালত সিজারকে ৪২ মাসের কারাদণ্ড দেয়। এই ঘটনায় বাংলাদেশে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের ব্যক্তিগত গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্যই এফবিআই এজেন্টকে ঘুষ দিয়েছিলেন সিজার। এর বিনিময়ে তিনি এফবিআই এজেন্টদের কাছ থেকে জয়ের ব্যক্তিগত ব্যাংক তহবিলের হিসাব, বিভিন্ন ধরণের তৎপরতার রেকর্ডসহ অনেক তথ্য হাতিয়ে নিতেও সক্ষম হন বলে খবরে প্রকাশ করা হয়। এছাড়া এফবিআই এজেন্টদের মাধ্যমে জয়কে অপহরণেরও চেষ্টা করা হয় বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
এরই প্রেক্ষিতে রিজভী আহমেদ সিজার শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫ টায় নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস এর ফুডকোর্ট রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন আহবান করেন। এই খবর পেয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মী ফুডকোর্ট রেস্তোরাঁয় ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করেন।
এ সময় তারা প্রকাশ্যেই ঘোষণা দেন যে, আজ এখানে আমরা বাংলাদেশি স্টাইলে এই সংবাদ সম্মেলন প্রতিহত করবো। আওয়ামী লীগের এমন মারমুখী অবস্থানের খবর পেয়ে রিজভী আহমেদ সিজার সংবাদ সম্মেলনস্থলে আসতে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্ব করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি দু’জন পুলিশ সদস্য বেষ্টিত হয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তার বাবা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন আগে থেকেই সেখানে বসা ছিলেন। তবে স্থানীয় বিএনপির কোনো নেতাকে সেখানে দেখা যায়নি। চেয়ারে আসন গ্রহণ করে সিজার তার লিখিত বক্তব্যের কপি সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণ করেন। এরপর তিনি ওই বক্তব্য পড়া শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সেখানে হামলা চালায়। তারা টেবিল-চেয়ারগুলো ওলটপালট করে ফেলেন। শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনকে এবং তার মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয় দেখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নিউ ইয়র্ক পুলিশের দুই সদস্য শেষ পর্যন্ত রিজভী আহমেদ সিজারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান। এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান সেখানে বক্তৃতা করেন।
নিজের লিখিত বক্তব্যে রিজভী আহমেদ সিজার বলেন, ‘নিউ ইয়র্ক ও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় ও আমাকে নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এসব তথ্যের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবতার কোন মিল নাই। কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যমে আদালতের মূল রায়কে পাশ কাটিয়ে কিছু উদ্দেশ্যমূলক অসত্য তথ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জয় বা তার পরিবারের কাউকে অপহরণ কিংবা তাদের কোনো ক্ষতি করার অথবা ভীতি প্রদর্শনের কথা আদালতের রায়ে উল্লেখ নেই। অথচ কোনো কোনো সংবাদপত্র আমার স্বীকারোক্তি হিসাবে এ ধরণের কথা প্রকাশ করেছে, যা দু:খজনক।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ একটি গরীব দেশ। সেই দেশের নি:স্ব মানুষের অর্থ লুণ্ঠিত হচ্ছে। আমাদের দেশে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা মুখে যাই বলুক, বাস্তবে মহাডাকাত। তারা কিভাবে দেশকে লুণ্ঠন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবিশ্বাস্য ধরনের বিশাল অংকের অর্থ সঞ্চয় করেছেন, তেমন কিছু কথা গল্পেচ্ছলে জানতে পেরে আমি ভীষণ দু:খ পাই। তাদের এই মহাডাকাতি আমার বিবেককে নাড়া দেয় এবং মনকে ক্ষুদ্ধ করে। তাই দেশের প্রতি ভালবাসার টানে স্বত:প্রণোদিত হয়ে এসব লুটেরাদের অন্যতম মোড়ল সজিব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ায় মনোনিবেশ করি। সেই প্রচেষ্টায় যতটুকু তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি তাতেই আমি খুশি। রায়ে আমার সাফল্য সম্পর্কে আদালত আকারে-ইঙ্গিতে মন্তব্য করেছেন। ওইখানে ৩’শ মিলিয়ন ডলারের দুর্নীতির স্পষ্ট উল্লেখ আছে। সুতরাং জয় কিভাবে বাংলাদেশের অর্থ বাইরে নিয়ে গেছেন তা প্রমাণের জন্য আর কোনো দলিলের প্রয়োজন নেই। আদালতের রায়েই তা স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহাডাকাতদের মুখোশ উন্মোচন করতে পেরে আমি গর্বিত। যেসব রেকর্ড সংগৃহীত হয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য তা-ই যথেষ্ট।’
সিজার সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করার পর সেখানে দেয়া বক্তব্যে ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রিজভী আহমেদ সিজার একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সে কোর্টের পারমিশন ছাড়া কিভাবে প্রেস কনফারেন্স করতে চায়? এ রকম একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আমরা সংবাদ সম্মেলন করার সুযোগ দিতে পারি না। সংবাদ সম্মেলন করতে হলে তাকে কোর্টের পারমিশন নিয়ে আসতে হবে।
তবে সিজারের বাবা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ উল্লাহ মামুন সাংবাদিকদের বলেন, তার ছেলে আইনজীবীর মাধ্যমে কোর্টের অনুমতি নিয়েই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে কারাবাসে না যাওয়া পর্যন্ত যে কোনো নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।