পুলিশের আরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন হলে সেটা ডিবি কার্যালয়ের বদলে জেলগেটে করার পক্ষে মত দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ডিবি কার্যালয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বদলে নির্যাতন করা হয়। তার কাছে কী এমন তথ্য আছে যে, বারবার নির্যাতন করতে হবে। আর নির্যাতনের কারণেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর রিমান্ডের নামে আবারও তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন করা হতে পারে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন মান্নার সঙ্গে কথা বলে তার স্বজনরা এসব বলেছেন।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় গত মঙ্গলবার রাতে মাহমুদুর রহমান মান্না অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৪ দিনের রিমান্ডকালে মান্না অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুস্থ হলে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হতে পারে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মান্নাকে ডিবিতে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। যথাযথ আইন ও বিধি অনুসরণ করেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার বলেন, দুই দফায় টানা জিজ্ঞাসাবাদে মান্না মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার হার্টে ৩টি ব্লক ধরা পড়েছে। আবারও তাকে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করা হলে তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হতে পারে। তিনি জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে মান্নাকে বাসায় রান্না করা সবজি ও ঝালমুক্ত মাছ খাওয়ানো হচ্ছে।
মাহমুদুর রহমান মান্নার স্ত্রীর এক আত্মীয় জানান, আগের চেয়ে মান্না কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে রক্তচাপ স্বাভাবিক হলেও তার বুকের ব্যথা কমেনি। তার রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি নমুনা পাঠানো হয়েছে। ওইসব নমুনা দেখে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড হয়তো তাকে সুস্থ করে তুলতে পরবর্তী উপদেশ দেবেন।
মান্নার এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালের বেডে শুয়ে-শুয়ে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত নিজের লেখা ‘বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ’ বইটি ও অন্যান্য রাজনীতিবিষয়ক বই পড়ছেন মান্না। পাশাপাশি আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার খোঁজ-খবর রাখছেন।
তিনি আরও জানান, নাগরিক ঐক্য থেকে ডিসিসি নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও নগরবাসী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে মান্না শঙ্কায় রয়েছেন। মান্না বলছেন, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সরকার-দলীয় প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে। ঘোষণার বাইরেও সরকারের দু-একজন করে ছায়া প্রার্থী রয়েছেন। যেভাবে ধরপাকড় হচ্ছে তাতে ভোটকেন্দ্রে সরকারবিরোধীদের এজেন্টদেরও হয়তো থাকতে দেওয়া হবে না। তবু ভোটার ও ভক্তরা চাইলে নির্বাচনে অংশ নিতে চান মান্না। এ জন্য জামিনে মুক্তিও চান তিনি।
মান্না তার স্বজনদের আবারও বলেছেন, সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে তিনি ভাইবারে যে কথা বলেছেন সেখানে তিনি মোটেই দেশবিরোধী, সেনাবিরোধী ও খুনখারাবির পক্ষে বলেননি। বরং তিনি খোকাকে বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আন্দোলন করতে হবে। তখন খোকা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন করলে তো পুলিশ গুলি করে লাশ বানিয়ে দেবে। জবাবে মান্না বলেছেন, লাশ তো এখনো পড়ছে। কিন্তু যারা ভাইবার রেকর্ড করেছে তারা বিশেষ কায়দায় অডিও সম্পাদনা করে তার বিরুদ্ধে উল্টো প্রচার করছে। মান্নার বক্তব্য, দেশের সুশীল সমাজের মুখ বন্ধ করার জন্যই এভাবে তার ভাইবার কথোপকথন সম্পাদনা করে গণমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
manna is culprit
manna is culprit