ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / বুধবার হাজির না হলেই গ্রেফতার!

বুধবার হাজির না হলেই গ্রেফতার!

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় আগামী বুধবার আদালতে হাজির না হলে পুলিশ আদালতের হুকুম তামিল করবে।তাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হবে। এমনটা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘খালেদা জিয়া যদি স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন তাহলে সেক্ষেত্রে চিত্র ভিন্ন হতে পারে। তবে আদালতে হাজির না হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে হাজির করতে বাধ্য।’
পুলিশের ওই সূত্রটি আরো জানায়, ‘খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হওয়া মাত্রই পুলিশ তা দখলে নেবে এবং সেটি সিলগালা করে দেবে বলে যে প্রচারণা রয়েছে সে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। একই সঙ্গে ওই কার্যালয়ে আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’
তবে এদিন খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা শেষে যদি জামিন পান তাহলে তিনি তার বাসায় ফিরে যেতে পারবেন বলে দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা আভাস দিয়েছেন।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা পরিচয় প্রকাশ না করে আরো বলেন,‘চোরাগুপ্তা হামলা বন্ধ করতেই খালেদা জিয়াকে আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে খালেদা জিয়াকে একাধিক মামলায় হুকুমের আসামী করা হয়েছে। তবে তিনি গ্রেফতার হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে কি-না তা নিয়েও বিশ্লেষন করা হচ্ছে।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই গত দুমাস ধরে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশির ভাগই পুলিশ সদস্যই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এভাবে আর কতদিন একনাগাড়ে দায়িত্ব পালন করা যায়। একইভাবে র্যা ব সদস্যরাও একটানা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত।’ র্যা বের মহাপরিচালক নিজেই এক টিভি সাক্ষাৎকারে তা স্বীকার করেছেন। এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে গেলে খালেদাকে গ্রেফতারের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করেছেন ডিএমপির ওই কর্মকর্তা।
খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের বিষয়টি সরকারের এমপি মন্ত্রীরাও গত কয়েকদিন ধরেই জোরে-সোরে বলে আসছেন। মিছিল মিটিং কিংবা সংসদে সবখানে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের জন্য চাপ দিচ্ছেন সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা।
এদিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বকশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদ্দার দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়া হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই দিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা ডিএমপির তিন থানায় পাঠানো হয় বলে খবর প্রচারিত হয়।
এর পরের দিনই পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা কোনো থানায় পৌঁছায়নি। গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়া মাত্রই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তবে পুলিশের অন্য একটি সূত্র বলছে, আদালতের দেওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা ওই দিনই গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট ও রমনা থানায় পাঠানো হয়েছে। পুলিশ তা গ্রহনও করে্ছে। তবে অফিসিয়ালি রিসিভ দেখানো হয়নি। কারণ, খালেদা জিয়া যদি সেচ্ছায় আদালতে হাজির হন তাহলে পরোয়ানা তামিলের প্রয়োজন হবে না। এ জন্য সরকার ও পুলিশ প্রশাসন চাচ্ছে, খালেদা জিয়া ওই কার্যালয় থেকে বের হোক।
ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভাষায়,‘সব মহল থেকে অপেক্ষা করা হচ্ছে। খালেদা জিয়া যদি সোজা পথে না আসেন তবে তাকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আদালতের হুকুম তামিল করা হবে।’
দুর্নীতির দুই মামলায় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ৫দিন পার হলেও কেন তা থানায় পাঠানো হয়নি, তা নিয়ে জনগনের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সংক্রান্ত কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় যায়নি। তবে কেন যায়নি জানতে চাইলে আদালতের কর্মকর্তারা এড়িয়ে যান।
এ নিয়ে রাস্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন,‘আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তাতে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে কোনো বাধা নেই। পুলিশ প্রশাসন হয় তাকে গ্রেফতার করবেন। না হলে খালেদা জিয়া নিজেই আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইতে পারবেন।’
আর পাল্টা হিসেবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ ধরণের গ্রেফতারি পরোয়ানা অবৈধ। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করাও আইন ভঙ্গের শামিল। সরকারের ইশারায় আদালত প্রভাবিত হয়ে এ ধরণের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।’
মাহবুব হোসেন আরো বলেন, ‘আদালত যদি সন্তুষ্ট হন তবে তিনি (খালেদা জিয়া) জামিন পেতে পারেন। এ জন্য তাকে অবশ্যই আদালতে হাজির হতে হবে-এমন কোনো কথা নেই। আর বিচারক এই মামলার কার্যক্রম বন্ধ রাখতেও পারবেন না। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক মামলা চালিয়ে যেতে হবে।’
অন্যদিকে, রোববার ঢাকার চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত গুলশান থানার একটি বিস্ফোরক মামলায় খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তল্লাশির নির্দেশনা দিয়েছেন। গুলশান থানার এক কর্মকর্তা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় তল্লাশির অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে আদালত এ নির্দেশনা জারি করেন।
এ আদেশ জারি হওয়ার পরপরই খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়। গুঞ্জন শুরু হয় রোববার রাতেই খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে।
তবে খালেদা জিয়ার গ্রেফতার বিষয়ে গুলশান থানার এক কর্মকর্তা জানান, তল্লাশির সময় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা না হলেও কার্যালয়ের ভেতরে আর কেউ থাকতে পারবেন না। তাছাড়া কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কম্পিউটারসহ অন্যান্য মালামালও জব্দের আওতায় আনা হতে পারে।
খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে কোথায় রাখা হবে এমন প্রশ্নও করা হয় পুলিশের ওই উর্ধতন কর্মকর্তাকে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে কোথায় রাখা হবে তা এক প্রকার ঠিক করাই আছে। এ জন্য বিকল্প হিসেবে রাজধানীর কোনো একটি বাড়ি জেলখানা বানিয়ে সেখানে রাখা হতে পারে। সেটি কোথায় হবে তা নিশ্চিত করে এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে বাড়িটি মিরপুরের কোথাও হতে পারে। আর সেটি এরই মধ্যে পুলিশ প্রধান ও আইজি প্রিজন পরিদর্শনও করেছেন।