দেশের বর্তমান বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গেলেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তার এই না যাওয়া নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা। ঘনিষ্ঠদের মধ্যে খানিকটা অস্বস্তিও দেখা দিয়েছে।
যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন না এটা আগে থেকেই এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। কারণ শহীদ মিনারে গেলে তাকে কর্মসূচি শিথিল করতে হবে।
অথচ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় শতাধিক প্রাণহানী, বিশ্ব ইজতেমা, মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুও বিএনপির এক দফা দাবির চলমান চিড় ধরাতে পারেনি। খালেদা জিয়া ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কার্যালয়েই থাকতে চান তিনি। তাই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে খালেদা জিয়াকে চলমান অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করতে হবে। তাছাড়া কার্যালয় থেকে বের হলে দলীয় কার্যালয়ের মতো তার রাজনৈতিক কার্যালয়ের অবস্থাও ‘ভূতুড়ে’ হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কাও করেন খালেদা জিয়া। আর সে কারণেই এবার নিজ দলের সঙ্গে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যাননি তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন কেন শহীদ মিনারে যাননি জানতে চাইলে দলটির সহ-সভাপতি বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘কীভাবে যাবেন? সরকার ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) অবরুদ্ধ করে রেখেছে।’
বেগম খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে যেতে পারেননি, এতে জনমনে কোনো প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জনগণ ভালো-মন্দ সব বুঝে।’
শহীদ মিনারে বেগম খালেদা জিয়ার না যাওয়া এবং এ কারণে জনসাধারণের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের জোট সঙ্গী মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, ‘এটা আমার বলার কী আছে? এটা কি আমার বলার জিনিস? সব কিছুতে বলাটা তো মানানসই না, তাই না?’
তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে আপনি আমার সঙ্গে আলোচনা বাড়াবেন না, নিজে বুদ্ধি খরচ করে লিখেন।’
তবে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘চিন্তা-ভাবনা করেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে যাননি। কি কারণে যাননি সেটা আমার বলার কথা না। তার কাছাকাছি যারা আছেন তারা বলতে পারবেন।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব ও বিএনপির সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন তার কার্যালয় থেকে বের হলে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের মতো বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ও পুলিশ দখলে নিতে পারে- এ আশঙ্কায় তিনি যাননি। বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি শহীদ মিনারে না যাওয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না।’
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে নিজের গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখান থেকে ৫ জানুয়ারি বের হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। যা এখনো অব্যহত। অবরোধের পাশাপাশি চলছে হরতাল কর্মসূচিও।
এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধে পেট্রোলবোমায় প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক। আর দগ্ধ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় ছটপট করছেন আরো কয়েকগুণ মানুষ।