লন্ডনবাংলা রিপোর্ট : সম্প্রতি অপারেশন ব্লাক ভোটের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ব্লাক ভোট ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ১৬৮টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে- যা সম্ভবত আগামী ৭ই মে নির্বাচনে সরকার গঠনে মূখ্য ভূমিকা পালন করবে। ১৬৮টি আসন ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের জাতীয় সংসদের ২৯% এর সমান। এই ১৬৮টি আসনের মধ্যে ৭৪টি আসনে এশিয়ান বংশোদ্ভুতদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। যাদের মধে মুসলিম ভোটাররাই কে জিতবে তা নির্ধারিত করবে। বর্তমান রাজনৈতিক বিশেষকদের মতে ১০০ থেকে ১৩০ আসনের মধ্যেই নির্ধারিত হবে কে ২০১৫ সালের সরকার গঠন করবে। গবেষনায় দেখাগেছে এসকল আসনের অধিকাংশই ৬হাজাটর বা ৭হাজার ভোটের ব্যবধানে যে কেউ বিজয়ী হয়ে থাকেন। আর এ কারনে আগামী নির্বাচনে মুসলিম ও ব্যাক ভোটাররাই মূল আলোচনায় থাকবে।গত ১০ ফেব্রুয়ারী সোমবার মুসলিম প্রফেশনাল ফোরামের উদ্যোগে পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে আয়োজি সংবাদ সম্মেলনে এসকল তথ্য উপাৎ তুলে ধরা হয়। আর এতে বলায় হয় নির্বাচনে পূর্বে ভোটার রেজিষ্ট্রেশন গুরুত্বপূর্ণ। রেজিষ্ট্রেশনে সবাইকে অংশ গ্রহন ও কোন মাইনোরিটি থেকে এসেছেন তাও উলেখ করা উচিত। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় ৮ জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রার্থীসহ ২০০ এর অধিক কালো জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিনিধি হয়েছেন প্রত্যেকটি প্রধান দলের প্রার্থী হিসেবে। কিছু আসন নিরাপদ আছে, অন্যান্যরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আসন জিতার অবস্থায়। কিন্তু, যদি ইগঊ সম্প্রদায়ের সদস্যগণ নির্বাচনে এইসব প্রার্থীদের ভোট দিতে উৎসাহী হন, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের চেয়ারপার্সন মোহাম্মদ খালেদ নূর। এসময় উপস্থিত ছিলেন অপারেশন ব্লাক ভোটের সাইমন ওউলি, সিটিজেন ইউকের নিল জনসন, সাবেক কাউন্সিলার আব্দুল আজিজ সরদার, হাবিবুর রহমান।“ভোটার রেজিষ্ট্রেশন এবং মুসলিম/জাতিগত সংখ্যালঘুু সম্প্রদায়” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের গুরুত্ব সম্পর্কে কালো জাতিগত সংখ্যালঘু (ইগঊ) এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের অবস্থানের উপর আলোকপাত, ভোটার রেজিষ্ট্রেশন এবং প্রার্থীর জয় ও পরাজয়ের ক্ষেত্রে ইগঊ ভোটের শক্তি, নীতি প্রভাবিত করা এবং এই নির্বাচনে ইগঊ কমিউনিটির জন্য সম্ভ্যাব্য এজেন্ডা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা স্থানীয় [বাংলা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক] মিডিয়ার সাথে শেয়ার করা হয়।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের আদমশুমারী প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস্রে জনসংখ্যা ৫৬ মিলিয়ন ছিল। এই ৫৬ মিলিয়নের মধ্যে- ৪৮ মিলিয়ন লোককে “সাদা” বিভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় এবং অবশিষ্ট ৮ মিলিয়ন লোক কালো এবং জাতিগত সংখ্যালঘু (ইগঊ)। আদমশুমারী হতে এটাও দেখা যায় যে ২.৭১ মিলিয়ন মুসলিম ইংল্যান্ড ও ওয়েলস্ে আছেন- যা জনসংখ্যার ৪.৮%। স্কটল্যান্ডে ৭৭,০০০ জন এবং নরদান আয়ারল্যান্ডে আনুমানিক মুসলিম জনসংখ্যা ৪,০০০জন। মুসলিম হল বৃটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গ্রুপ।২০১১ খ্রিষ্ট্রাব্দের আদমশুমারীর তথ্যানুযায়ী, মুসলমানরা সব ধর্মীয় দলের চেয়ে জাতিগতভাবে বৈচিত্রময়। সাউথ এশিয়ান, আফ্রিকান এবং মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে বেশ কিছু সংখ্যক মুসলমান আছেন, পাশাপাশি সাদা এবং কালোরা মুসলমান হচ্ছেন। বাংলাদেশীরা হল ইউকের একটি বৃহত্তম অভিবাসী গ্রুপ, আনুমানিক ৫০০,০০০ জনসংখ্যা নিয়ে তারা কনিষ্ঠ এবং দ্রুততম ক্রমবর্ধমান সম্প্রদায়। মুসলিম জনসংখ্যার ১.২ মিলিয়ন মুসলমানদের জন্ম বৃটেনে তারা দ্বিতীয় প্রজন্ম।সংখ্যালঘ সম্প্রদায়ের পলিটিক্যাল ইন্টিগ্রেশন সম্পর্কে- অধ্যাপক হিথ উলেখ করেন যে, দ্বিতীয় প্রজন্মের মুসলিমরা বেশি বৃটিশ বোধ করে এবং তারা স্থানীয় রাজনীতিতে আগ্রহী। যদিও, ইউকের সামগ্রিক মুসলিম সম্প্রদায় নাগরিক অংশগ্রহনে কম সক্রিয় এবং গবেষণায় দেখা যায় যে, ভোটার রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে মুসলমানদের গ্রুপ সর্বন্নি।জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস যখন ২০১১ আদমশুমারী প্রথম প্রকাশ করে, তখন মিডিয়ার কিছু বিভাগে কয়েকটি অতিনাটকীয় শিরোনাম ছিল। যেমন:- “আমি যেখানে বাস করি সেখানে আমাকে অপরিচিত মনে হয়। এতে মনে হয় এটি তাদের দ্বারা [মুসলিমদের] অধিগৃহীত।” -জন কেলি, দ্যা টেলিগ্রাফ, ২৯ শে জানুয়ারী ২০১৩ খ্রিষ্ট্রাব্দ।মুসলিম কাউন্সিল অফ বৃটেন এর ডঃ জামিল শেরিফ ২০১১ খ্রিষ্ট্রাব্দের আদমশুমারী রিপোর্ট থেকে তথ্য উলেখ করেন এবং বৃটেনে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি উপমা দিয়েছেন এবং কিভাবে কিছু প্রধান ধারার মিডিয়া রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন এই ধরনের কিছু রিপোর্ট, যেমন “মনে হয় যে তারা (মুসলিমরা) অধিগ্রহন করেছে” একটি ভীতিকর রিপোর্ট। তিনি প্রশ্ন করে বলেন কিভাবে ৪.৮% (মুসলিম জনসংখ্যা) বৃটেনকে অধিগ্রহণ করে নিতে পারে?জাতীয় আলাপ আলোচনায় মুসলমানদেরকে প্রায়ই সন্ত্রাসবাদী এবং চরমপন্থী হিসেবে উলেখ করা হয়। আদমশুমারী রিপোর্ট মুসলিম সিভিল সোসাইটির জন্য বাস্তব উদ্বেগ এবং নীতি অগ্রাধিকারের বিষয়ে কি করা উচিত সেই বিষয়ে নিজস্ব বিয়ষসূচী তৈরী করতে একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। মুসলিম জনসংখ্যার একটি বৃহত্তর অংশ তরুণ বয়সের গ্রুপ (২১% বয়স ৫-১৫) এবং জনসংখ্যার কম অংশ বৃদ্ধ বয়সী গ্রুপ (৪%)। ১৫ বছর বয়সী কিংবা তার নিচের বয়সী লোক মুসলিম জনসংখ্যার ৩৩% কিন্তু সামগ্রিক জনসংখ্যার ১৯%; এবং মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যমা বয়স ৩৫ বছর কিন্তু সামগ্রিক জনসংখ্যার মধ্যমা প্রায় ৪০ বছর। তাই আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের মুসলিম যুবকদের সম্পদ হিসেবে সনাক্ত করা প্রয়োজন এবং তাদেরকে গধৎমরহধষরংব করা বন্ধ করতে হবে।মুসলিম, কালো এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগণ জনপ্রিয় সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং বিনোদন, ব্যবসা-বাণিজ্বের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছেন। এবং বৃটেনের অর্থনীতিতে প্রতি বছর ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি কন্ট্রিবিউশন করছেন। তবুও আমরা ক্ষমতার পাশাপাশি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের টেবিল থেকে অনেক দূরে। কেন? কারণ- যতক্ষণ না আমরা ভোটার রেজিষ্ট্রেশন এবং বৃহত্তর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করব, ততক্ষণ পর্যন্ত এদেশের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু ওয়েষ্টমিনিষ্টার এবং অন্যান্য জায়গায় যারা আছেন তারা আমাদেরকে অব্যাহতভাবে উপেক্ষা করে যাবেন। ৫ই ফেব্রুয়ারী জাতিসংঘের সারা বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক ভোটার রেজিষ্ট্রেশন দিন। ১৬ বছরের অধিক বয়সী যে কোন ইউকের নাগরিক রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবেন। পুরাতন পদ্ধতি যেখানে ঘরের প্রধান কর্তা সকলের রেজিষ্ট্রার করতেন তা বর্তমানে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ব্যক্তি নিজের রেজিষ্ট্রার নিজেকেই করতে হবে। অনুমান করা হয় যে প্রায় ১ মিলিয়ন জনগণ এই পরিবর্তনের ফলে জাতীয় নিবন্ধন থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবেন।