নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সমাবেশ ও জনমত তৈরির নির্দেশ দেয়ার পর মন্ত্রী-সংসদ সদস্য শূন্য হয়ে পড়েছে রাজধানী। ঢাকার বাইরে স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্যরা অবস্থান করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকা এবং সংলগ্ন দু’একটি এলাকার মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা ঢাকায় অবস্থান করছেন।
বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান আন্দোলনে পেট্রোল বোমা মেরে সাধারণ মানুষ হত্যাসহ নানা নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদে দেশব্যাপী জনমত গড়ে তোলার জন্য ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দেয়া হয়। এজন্য দশম জাতীয় সংসদের চলমান পঞ্চম অধিবেশন ৫দিন মুলতবি করা হয়। ৫ ফেব্র“য়ারি সংসদের অধিবেশন শেষে ১০ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করা হয়। মুলত: ওই দিন থেকেই সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় যেতে শুরু করেন।
চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবারই চলে গেছেন নির্বাচনী এলাকায়। ওই অঞ্চলের মন্ত্রীদের মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় রয়েছেন ভুমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। এছাড়া সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, এম আব্দুল লতিফ, সাইমুম সরওয়ার কমল, মাহফুজুর রহমান মিতাসহ প্রায় সব সংসদ সদস্যই নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন।
নোয়াখালী অঞ্চলের সংসদ সদস্য ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়া নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর জেলার সকল সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে। সদ্য বিবাহিত রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হকও নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে। তিনি সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন নবপরিণীতা স্ত্রীকেও। এসএসসি পরীক্ষা থাকায় শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারেননি। এছাড়া সিলেট অঞ্চলের সকল মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় রয়েছেন। দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অনেকেই এলাকা ঘুরে এসেছেন। রোববার অনেক মন্ত্রী অফিস করবেন। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক থাকায় তার আগেই মন্ত্রীরা ঢাকায় ফিরবেন।
সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রোববার ১৪ দলের পক্ষ থেকে সারাদেশে মানববন্দন কর্মসূচি রয়েছে। ওই কর্মসূচিতে সিংহভাগ সংসদ সদস্যই নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন। বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, ২ আসনের তালুকদার মো. ইউনুস, সদর আসনের আফরোজা হিরণসহ সকল সংসদ্যই নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে। শেরপুরের সংসদ সদস্য ও সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক সংসদীয় এলাকায় সভা-সমাবেশ করছেন। পিরোজপুরের সংসদ সদস্য একেএম আউয়াল সাইদুর রহমান সপ্তাহ জুড়ে এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন।
জামাতের নায়েবে আমীর ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন সাইদীর এলাকা হওয়ায় সংসদ অধিবেশনের মধ্যেই তিনি এলাকায় চলে গেছেন। এলাকায় অবস্থান করে নিজেই মনিটরিং করছেন পরিস্থিতি। চলতি অবরোধে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি পিরোজপুরে। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ খুলনা-যশোর অঞ্চলের সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন।
এদিকে শুক্রবার অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠকে দলীয় সংসদ সদস্যদের অনেকেই নির্বাচনী এলাকায় না যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ওই বৈঠকের পর দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ সংসদ সদস্যদের ফোন করেন। যেসব সংসদ সদস্যরা এ সময়ে ঢাকা ছিলেন তাদের বেশিরভাগই স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় চলে গেছেন। এদিকে আগেভাগে নির্বাচনী এলাকায় কর্মসূচি পালন করে অনেকে ঢাকায়ও ফিরেছেন। পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য ঢাকায় ফিরেছেন।
এ ব্যাপারে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে দেশব্যাপী যে সন্ত্রাসের ও পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ মারার রাজনীতি শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় জনমত গড়ে তোলার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেসব সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় যাবেন না এবং যার এলাকায় নাশকতা হবে তাদেরও নিতে হবে। তিনি বলেন, এতবড় একটি সন্ত্রাসী সংগঠনকে দমাতে জনমত তৈরির বিকল্প নেই। জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুললে অচিরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
এদিকে নির্বাচনী এলাকা সফরের সময়ে দলীয় সংসদ সদস্যদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা জনপ্রতিনিধিদের উপর হামলার টার্গেট করেছে-গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পর এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছে।