বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মোবাইলে গোপন কথোপকথন নিয়ে মন্ত্রিসভায় তোলপাড় হয়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে খালেদা জিয়ার বেশ কয়েকটি মোবাইলে গোপন কথোপকথনের অডিও বার্তা শোনানো হয়।
এক অডিওতে খালেদা জিয়া মোবাইলে চট্টগ্রামের এক নেতাকে বলেন, ‘আপনার এটা করেন, খসরুর বাধা শোনবেন না। বাধা দিলে তাকে বের করে দেবো।’ এ অডিও রেকর্ডসহ খালেদা জিয়ার আরো কিছু দিকনির্দেশনামূলক মোবাইল কথোপকথন মন্ত্রিসভায় বাজিয়ে শোনানো হয়।
তবে খালেদা জিয়ার এসব কথোপকথন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো মন্তব্য না করলেও, মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই বলেছেন- ‘এটি চিহ্নিত করা উচিৎ।’
অপর এক অডিও বার্তায় খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘রাজধানীতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কেন লোক হয় না?’ এ বিষয়ে খালেদা জিয়া বিভিন্ন নেতাকর্মীদের কাছে তা জানতেও চেয়েছেন।
এক বিশ্বস্ত সূত্র মন্ত্রিসভায় খালেদা জিয়ার কথোপকথন নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকের নির্ধারিত আলোচ্যসূচি শেষ হওয়ার পর সেখানে বসেই খালেদা জিয়ার ফোনালাপের অডিওগুলো শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদের উপস্থিত সদস্যরা।
উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয় ও তার আশপাশে বর্তমানে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে কার্যালয়ে থাকা টেলিফোন লাইনটিও বিচ্ছিন্ন।
খালেদার কন্ঠ বিকৃতি করে অডিও ছড়াচ্ছে কারা?
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইউটিউবে ‘বাংলা লিকস’ নামের একটি একাউন্টে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সঙ্গে দলটির নেতাদের ফোনালাপ পাওয়া যাচ্ছে অডিও আকারে। যাতে খালেদা জিয়া নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন। এসব নির্দেশ ছিল নাশকতার উদ্দেশ্যে- এমনটি অডিও ফাইলগুলির শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে এসব অডিও ফাইল কতটুকু গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে রয়েছে নানা ধরণের প্রশ্ন।
প্রথমত: এসবের কোনোটিতে খালেদা জিয়া কোনো নেতাকে গাড়িতে অগ্নি সংযোগ, সড়ক অবরোধ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ কিংবা অন্য কোনো উপায়ে জনজীবন সংহারক কর্মকা- পরিচালনার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি।
দ্বিতীয়ত: কয়েকটি অডিও ফাইলে খালেদা জিয়ার কণ্ঠের সামান্য বিকৃতিও ধরা পড়ে। একই সঙ্গে পেইজটিতে আপলোড থাকা বিএনপির অন্য নেতাকর্মীদের ফোনালাপের অডিও ক্লিপেও কণ্ঠস্বর বিকৃতির আলামত দৃশ্যমান।
তৃতীয়ত: পেইজটিতে কেবল সরকার বিরোধীদের অডিও রয়েছে।
চতুর্থত: তথ্য প্রযুক্তির আর্শীবাদে আধুনিক যুগে কারও কণ্ঠ বিকৃত করে এ ধরণের ফোনালাপ প্রস্তুত মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুগল প্লে স্টোর, নোকিয়া স্টোর, অ্যাপল স্টোরে এমন অনেক ফ্রি অ্যাপ রয়েছে যা দ্বারা খুব কম সময়ে এ ধরণের অডিও ক্লিপ বানানো সম্ভব। কোনো পয়সাও লাগে না। একটি মাঝারি মানের স্মার্ট ফোনই যথেষ্ট।
পঞ্চমত: অডিও ক্লিপগুলোয় স্থান ও নানা ব্যক্তির নাম শোনা গেলেও কী উপায়ে নাশকতা করতে বলেছেন খালেদা জিয়া তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা নেই।
এতো গেল কেবল ইউটিউবের কথা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে খালেদা জিয়া তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও নিয়ে নানা ধরণের বিকৃত তথ্য, ছবি উপস্থাপন করা হয় অহরহ। সরকার প্রধান হওয়ায় শেখ হাসিনাকে নিয়ে কেউ সামান্যতম আপত্তিকর মন্তব্য করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা আদাজল খেয়ে তাদের আইনের আওতায় আনেন। কিন্তু খালেদা জিয়া কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধানকে নিয়ে তালসম আপত্তিকর মন্তব্য, বিকৃত ছবি বা অন্য কিছু উপস্থাপন করলে সেক্ষেত্রে কিছুই হয় না।
ফলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে খালেদা জিয়া বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় আপত্তিকর মন্তব্য, বিকৃত ছবি বা অন্য কিছু উপস্থাপন কে বা কারা করছেন?