ক্ষমতাসীন দল এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের কথাবার্তায় পরিষ্কার, উভয়পক্ষই তাদের চলমান কর্মসূচি এবং পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে অনড়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে পিছু না হটে বরং দেশব্যাপী চলমান অবরোধ এবং হরতালের মাধ্যমে যেভাবেই হোক সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করতে দৃঢ় সংকল্প। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট চাইছে যে কোনও মূল্যে বর্তমান বিশৃঙ্খল অবস্থার অবসান ঘটাতে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৩ সালের মতো বিএনপি এবং জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে চলমান পরিস্থিতির অবসান ঘটানো সম্ভব। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীও বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এরই মধ্যে শুক্রবার গভীর রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ডেসকো। অবশ্য এ ঘটনার ১৯ ঘণ্টা পর শনিবার রাত ১০টায় বিদ্যুত সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়। তার কার্যালয়ের কেবল টিভি ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ এবং মোবাইল সংযোগও পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়া হলেও রাতের মধ্যে তা আবার চালু করা হয়। এছাড়া অাত্মগোপনে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে অাটক করেছে র্যাব। পরে তাকে পেট্রোল বোমা হামলার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। অজ্ঞাত স্থানে থেকে তিনি দলের হয়ে বিবৃতি দিয়ে কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছিলেন। খালেদার কার্যালয়ের পরিসেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও যুগ্ম মহাসচিব রিজভীকে গ্রেফতারের ঘটনায় ধারণা করা হচ্ছে ২০ দলীয় জোট অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহার না করলে চরমপন্থার পথে যাবে সরকার।
ধারণা করা হচ্ছে, গত ৩ জানুয়ারি থেকে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করা খালেদা জিয়াকে দলীয় কার্যক্রম থেকে দূরে সরাতে যে কোনও সময় গ্রেফতার করে ঢাকা সিএমএইচে নেওয়া হতে পারে। তবে এখনও এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে বাস্তবেই এরকম সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে কিনা।
আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা এবং মন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করা থেকে পিছু হটবেনা সরকার বরং এ প্রক্রিয়া অব্যহত থাকবে। যদি এতেও সহিংসতা বন্ধ না হয় তবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, তবে সরকার পুলিশ বা অন্য কোনও বাহিনীর মাধ্যমে গ্রেফতার করবেনা তাই তাকে কোনও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকতে হবেনা।
গত ২১ জানুয়ারি সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার দায়ে হুকুমের আসামি করে খালেদাকে গ্রেফতার করা যুক্তিযুক্ত হবে।
এর পরদিনই সেনা প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে দেখা করেছেন।
তবে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ওই সাক্ষাতের বিষয়ে বলেন, সাক্ষাতকালে সেনাপ্রধান রাষ্ট্রপতিকে সম্প্রতি চালু হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্মিত পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ সম্বন্ধে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল শনিবার বলেন, এখনও আমরা সরকারের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ পাইনি। তবে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেই আমরা খালেদাকে যে কোনও সময়ে গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুত আছি।
খালেদাকে সিএমএইচে পাঠানোর বিষয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এটা প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের বিষয়।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসার জন্য যে কেউ চাইলে অথবা যে কাউকে সিএমএইচে পাঠানো যেতে পারে।
ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট সূত্র জানায়, কঠোর হস্তে চলমান অরাজকতা দমনে ইতোমধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে যৌথবাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েক হাজার বিএনপি-জামায়াত কর্মী এবং বেশ কিছু শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াত জোট আরও বেপরোয়া হয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের মধ্যে আজ থেকে ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে।