প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছেলে হারানোর বেদনা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে তিনি যেনো আর কোনো মায়ের বুক খালি না করেন।’
বুধবার দশম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তাজুল ইসলামের (কুমিল্লা-৯) সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এমন কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এসময় সংসদে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওনার (খালেদা জিয়া) ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যু, সেটা তিনি সহ্য করতে পারছেন না। শোক সইতে না পারার কারণে তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। অথচ যে মায়ের সন্তানকে তাজা পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, এর চাইতে গুনাহের, জঘন্য কাজ আর হতে পারে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া পুত্রহারা শোকে ভুগছেন। তারপরেও ইনজেকশন দিয়ে তাকে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছে। তাকে এভাবে ঘুম পাড়ানোর প্রয়োজন হলে, যে মায়ের সন্তানদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, তাদের বিষয়টা উপলদ্ধি করতে পারবেন।’
খালেদা ছোটছেলে কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রীর দেখতে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তার ছেলে মারা যাওয়ার পরে আমি দেখতে গেছি। আমি নিরাপত্তার কথাও চিন্তা করিনি। যখন মেইনগেট যখন খুলেনি, তখন আমি ভেবেছি ছোট গেট দিয়ে যাই। তখন আমাকে জানানো হলো, সেটাতেও তালা দেয়া। আমাকে এ অপমানও করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০ দলীয় ঐক্যজোট বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যেভাবে মানুষকে পুড়িয়ে মারা, ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, কুরান পোড়ানো, চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোসহ জঘন্য কর্মকাণ্ড তারা আন্দোলনের নামে করে যাচ্ছে। অপকর্ম করে খালেদা, দোষ দেয় আমাদের। আমরা তো নির্বাচনের পর থেকে চমৎকার পরিবেশে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো কথাবার্তা ছাড়াই গত ৫ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনের নামে তারা অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছে।’
এসময় প্রশ্ন করতে গিয়ে সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম বিএনপিকে ‘ভুলবশত’ বিরোধীদল বলে জাতীয় পার্টির তোপের মুখে পড়েন। তার প্রশ্নের সময় জাপা সদস্যরা টেবিল চাপড়ে আপত্তি তোলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রশ্নকর্তাকে ‘সতর্ক’ করে দিয়ে বলেন, ‘তাদের অপকর্ম ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তারা এখন না পার্লামেন্টে না বাইরে। সংসদীয় গণতন্ত্রে তারাই বিরোধীদল যারা পার্লামেন্টে বিরোধী আসনে বসে। যেহেতু বিএনপি দীর্ঘদিন বিরোধী দল ছিল, তাই সবার মুখে চলে আসে। এখন তারা বিরোধী দল না, খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেতা না। তিনি একটা রাজনৈতিক দলের নেতা। ভবিষ্যতের জন্য এ বিষয়ে সতর্ক হোন।’
বিএনপি-জামায়াত জোটের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে’ সবাইকে পাড়া মহল্লায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘পাহারা’ দেয়ার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
অপর এক প্রশ্নে প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘জেলা আদালতের বিচারকদের পদমর্যাদা যদি সচিব পদমর্যাদার হয়, তাহলে উচ্চ আদালদের বিচারপতির মর্যাদা রাষ্ট্রপতির উপরে চলে যাবে। তাহলে প্রশাসনে সমন্বয়হীনতা তৈরি হবে। আদালত যদি নিজেকে নিজে লাভবান করে, তাহলে তা সমীচীন হবে না।’
অন্য প্রশ্নের উত্তরে গঙ্গা ব্যারেজ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ করা হবে। বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। আমাদের নদীগুলোতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার বিষয় আছে। সে কারণে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যারেজ ইনশাআল্লাহ আমরা করবো।’