বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাড়ির গেটে এসে ফেরত গেছেন এটা শুনে মর্মাহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শনিবার রাত আটটা ৩৬ মিনিট থেকে যখন তার গেটের বাইরে আটটা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তখন তিনি ঘুমিয়ে। ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িযে রাখার কারণেই প্রধানমন্ত্রীর গেটের বাইরে অপেক্ষা করার খবর দেওয়া ও দেখা করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু তার বাসার সামনে থেকে যখন প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এটা তাকে কষ্ট দিয়েছে। আর তিনি এখন এতটাই শোকাহত যে তার ইচ্ছে থাকলেও প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করবেন সেই মনোবল নেই। ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে তিনি একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছেন। শোকে কাতর। কোকো ছিল তার সবচেয়ে আদরের। এই জন্য ছেলের মৃত্যুর খবর মেনে নিতে পারছেন না। তবে দুই একদিনের মধ্যে তিনি কিছুটা স্বাভাবিক হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে তার তরফ থেকে এটাও বলা হয়েছে, কোকোর লাশ আসার পর প্রধানমন্ত্রী সেখানে যেতে পারবেন। দলের যুগ্মা মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এটা জানিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী আবার সেখানে যাবেন কিনা তা এখনও ঠিক হয়নি।
তবে অনেকেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী সব ভুলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে শোক ও সমবেদনা জানাতে যান খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে ছুটে গিয়ে বিরল মমতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি চাইলেই কোকোর লাশ আসলে আবার যেতে পারেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। সেটা গেলে দেখা হবে দুই নেত্রীর মধ্যে, কথাও হতে পারে। আর দুই নেত্রী দূরে দূরে থাকায় ও তাদের মধ্যে কথাবার্তা না হওয়ার কারণেই তাদের মধ্যে দিনে দিনে দূরত্ব বেড়েছে। বিরোধও বেড়েছে। এই কারণে মাঝখানে যারা চান যে দুই নেত্রীর মধ্যে বিরোধ জিইয়ে থাক তারা দুই নেত্রীর ব্যাপারে একজনের কাছে আরেকজনের বিরুদ্ধে বলে বিষয়গুলো উস্কে দিয়েছেন। এটাও কেউ কেউ বলছেন, কোকোর মৃত্যু দু:খজনক হলেও এটা দুই নেত্রীর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ও দূরত্ব কমিয়ে আনার সুযোগ করে দিয়েছেন। দুই নেত্রীও অতীতের ভুলগুলো ভুলে যেতে পারেন। ভুলে যেতে পারেন হিংসা ও বিদ্বেষ। নতুন করে একটা ইতিবাচক সম্পর্কের সূচনা করে তারাই হাল ধরতে পারেন দেশের চলমান সকর সংকট দূর করার। সেটা দেখার জন্য গোটা দেশবাসি অপেক্ষা করছে।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট ও পারিবারিক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার উপর বেগম খালেদা জিয়ার অনেক রাগ, অভিমান রয়েছে। রয়েছে ক্ষোভও। এই ক্ষোভের অনেক কারণ রয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসনকে শেখ হাসিনা বার বার অপমান করেছেন। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও সবচেয়ে বড় বিরোধের সূচনা হয় যখন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করা হয়। এই ঘটনায় তিনি ভীষণ কষ্ট পান। এরপর আরো ঘটনা ঘটেছে। ওয়ান ইলেভেনের সময়ে দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে ওই সময়ের সরকার ও তাদের লোকজন মামলা করেছে। খালেদা জিয়ার দুই ছেলেকে নিয়ে নির্যাতন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, নির্যাতন করেছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো নিস্পত্তি করিয়েছেন ও কিছু প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও কোকোর বিরুদ্ধে কোন মামলা প্রত্যাহার করেননি। উল্টো ওয়ান ইলেভেনের সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওই সব মামলা চালিয়ে যেতে থাকে। কোকো দুর্নীতির করে টাকা বিদেশে না পাঠালেও ও ওয়ান ইলেভেনের সময়ে কোকোর হিসাবে বিশেষ কায়দায় টাকা জমা হওয়া ও ওই টাকা আবার দেশে ফেরত আনা হয়, কোকোও শাস্তিও দেওয়া হয়। এই ঘটনাটি সহজভাবে শেখ হাসিনার কাছ থেকে মেনে নিতে পারেননি খালেদা। তিনি মনে করেন হাসিনা চাইলেই তার ছেলের সুবিচার হতো। তিনি দেশেও মায়ের কাছে ফিরতে পারতেন।
এদিকে তিনি আরও কষ্ট পান যখন তার বড় ছেলে তারেক রহমানের নামে যখন আজে বাজে কথা বলা হয়। তাকে মিথ্যে ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলায় ফাঁসানোর জন্য চার্জশিটে আসামি করা হয়। তারেক রহমানকে একজন বিচারক দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস দেন বলে ওই বিচারককে দেশ ছাড়া করা হয়। এখনও পর্যন্ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোন মামলায় অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ার পরও তাকে সরকার ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তাকে দেশে ফেরত আনার জন্য লন্ডনে তার নামে নানা ধরনের অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করছে। দেশে এনে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারেও রাখতে চাইছে। এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়া এটাও মনে করছে তার বিরুদ্ধে ওয়ান ইলেভেনের সরকার যে দুটি মামলা করে ওই মামলায় কোন অভিযোগ সত্য নয় এটা প্রধানমন্ত্রী জানার পরও ওই মামলায় তাকে হেয় করা হচ্ছে। বিচার করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চাইলেই এইসব মামলা থেকে তিনি ও তার ছেলেরা রেহাই পেতেন।
সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়া মনে করেন শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর চাইলেই খালেদা জিয়া তার দুই ছেলে ও পরিবার পরিজন নিয়ে একসঙ্গে বাস করতে পারতেন। হাসিনা তার ছেলেদের ফেরত আনার সুযোগ দিলে তারা দেশে অসতে পারতো। কিন্তু তিনি সেটা দেননি। তার কারণে খালেদাকে পুত্রদের ছাড়া আজও পর্যন্তÍ একাকি জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আর এই ছেলেরা কাছে থাকলেও এত আগেও কোকোর অকাল মৃত্যু হতো না বলেও বিশ্বাস করেন। এই কারণে খালেদা জিয়া মনে করেন তার ও তার দুই ছেলের কষ্টের জন্য ওয়ান ইলেভেনের সরকারের মূল পাঁচজন নায়ক সহ কয়েকজন আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দায়ী। এই কারণে তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে চান না।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার আরো রাগ হচ্ছে বিএনপি সংলাপে বসতে ও চলমান সংকটের সমাধানের জন্য সরকারের সঙ্গে তিনি সংলাপে বসতে চাইছেন সরকার সেটা না করে তার বিরুদ্ধে ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে অকথ্য কথা বলছেন। এতে করে তিনি কষ্ট পেয়েছেন। কোকো মারা যাওয়ার আগের দিনও অনেক গালমন্দ করেছেন। তার নবম শ্রেণীতে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বলে আরো কতদিনের পালানোর ঘটনা বলেছেন। এই সব ব্যক্তিগত আক্রমণের বিষয়গুলো তিনি মেনে নিতে পারছেন না। এই সব খালেদা জিয়া সহ্য করতে পারেন না।
সূত্র জানায় একদিকে খালেদা জিয়া শনিবার দুপুরে পেলেন ছেলে মৃত্যু সংবাদ আর একদিকে তখন তার নামে ও তার দলের নেতাদের নামে ও তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নামে যাত্রাবাড়ি থানায় গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা করা হয়। এতে তাকে হুকুমের আসামি করা হয়। এর একদিন আগেই শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই সব ঘটনার জন্য হুকুমের আসামি করে মামলা করা হওয়া যুক্তিযুক্ত। এর ২৪ ঘন্টা পাড় হতে না হতেই যাত্রাবাড়ি থানার এক এসআই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সরকারের এই আচরণ তাকে কষ্ট দিয়েছে।
সূত্র জানায়, এক দিকে তিনি শোক জানাতে আসছেন অন্য দিকে তাকে ছেলেদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন, আবার খালেদা জিয়া ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলছেন, গালমন্দ করছেন আবার তার বিরুদ্ধে দুপুরে মামলা করিয়ে রাতে সমবেদনা জানাতে গেছেন এই সব বিষয়ও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিবেচনা করেছেন।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, আরো নানা কারণেই হাসিনার উপর ক্ষুব্ধ খালেদা। তারপরও তিনি যেহেতু তার সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন বলে দেখা হয়নি। এখন শেখ হাসিনা চাইলে তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে চান।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার শঙ্কা তিনি তার সঙ্গে দেখা করার পর দুইজনের মধ্যে যে সব কথা হবে, সেটা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করে দিতে পারেন, এখন সেটা হলে খুব বিব্রতকর হবে। এছাড়াও আরো আশঙ্কা তার সঙ্গে যারা সেখানে যাবেন এমন কোন কিছু লাগিয়ে করে আসতে পারেন যাতে করে তারা নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার ও গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে এটাও তার ভয় রয়েছে তার ছেলের মৃত্যুর খবরের বিষয়টি নিয়ে এবং দুইজনের মধ্যে দেখা করার বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারে। সেই ধরনের কোন রাজনীতি বেগম খালেদা জিয়া এখন চাইছেন না।
এদিকে তার সঙ্গে যারা যাবেন তারা খালেদা জিয়া আছেন সেখানকার ছবি তুলে সেটা প্রকাশ করে দিয়ে এটাও প্রমাণ করতে চাইতে পারেন তিনি সেখানে অনেক আরামে ও বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। এতে করে ওই সব ছবি প্রকাশ করে এই ধরনের প্রচারণা চালালে এতে করে তার নেতা কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে পারে, এতে আন্দোলনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এইসব নানা দিক বিবেচনা করেই তিনি দেখা করতে চান না।
তার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, যেহেতু তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী একবার দেখা করতে গেছেন কিন্তু দেখা হয়নি এই কারণে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার সঙ্গে দেখা করতে চান।
এদিকে লন্ডন থেকে তারেক রহমানও এই সব কারণে প্রধানমন্ত্রীর উপর ক্ষুব্ধ ও নাখোশ হলেও প্রধানমন্ত্রীর মানবিক দিকে ও তার সম্মান বিবেচনা করে তার আম্মাকে প্রধানমন্ত্রী আবার চাইলে তার সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দিয়েছেন। এটা নিয়ে যাতে কোন ধরনের রাজনীতি কেউ করতে না পারেন সেটা নিয়েও সতর্ক থাকার কথা বলেছেন।
তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার কেবল শেখ হাসিনার উপর রাগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কি নেই। তিনি কি প্রধানমন্ত্রীকে কম অপমান করেছেন। তিনি তাকে গণভবন থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তার নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছিলেন। তিনিওতো প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধুকে ছোট করে কত কথা বলেন। তার ছেলে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকেও ছোট করে কথা কথা বলেন। অপমানও করেন। এগুলোতো সহ্য করা যায় না। তাছাড়া ওয়ান ইলেভেনের সরকার খালেদা, তারেক, কোকোর বিরুদ্ধে যেসব মামলা করেছে সেই সব মামলা রুটিন মাফিক চলছে। সরকার কোন ধরনের প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে করছে না। যদি তাই হতো তাহলে সরকার আরো আগেই খালেদাকে গ্রেফতার করতে পারতো। সেটাতো করেনি। তিনি তার মতো করে আদালতে যাচ্ছেন। সেটাই কেবল নয় তারেক রহমান এত বেশি বাড়াবড়ি করছিলেন যে এটা সরকারের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। এরপরও প্রধানমন্ত্রী সব ভুলে কোকোর মৃত্যুতে খালেদা জিয়ার কাছে ছুটে গেছেন। এটা নিয়ে কেউ রাজনীতি করলে হবে না। প্রধানমন্ত্রী কোন রাজনীতি করার জন্য সেখানে যাননি। লাভ ক্ষতির হিসাবও করেননি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও তার একটি উদ্দেশ্য ছিল। কারণ ড. ওয়াজেদ মিয়া মারা যাওয়ার পর ওই সময়ে হাসিনার কাছে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেই কথা তিনি ভুলেননি বলেই নিজের আবেগ ধরে রাকতে পারেননি। ছুটে গেছেন। দুই জনের মধ্যে যত বিরোধই থাক না কেন এইটুকু সৌজন্যবোধওতো থাকতেই পারে। এছাড়াও বড় কথা হলে শেখ হাসিনা অনেক মমতাময়ী। এইকারণে তিনি এই সব বিষয়ে শোক ও সমবেদনা জানাতে কখনো কার্পন্য করেন না। যেমন তিনি দেশের কোন বিজয়ে আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করতে ও বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানাতেও ভুল করেন না।
Good post
Good post