ঢাকা: ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে মুখোমুখি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। একদল পালন করবে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ আরেক দল ‘গণতন্ত্রের হত্যা দিবস।’ ইতোমধ্যে রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পথে কমেছে মানুষের সংখ্যা। চারিদিকে আতঙ্ক, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা।
৫ জানুয়ারি কে মাঠে থাকবে, কে থাকবে না। রাজপথে দুই দল মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি কী হবে? এসব নিয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা এখন সাধারণ মানুষের মনে।
সরকারী দলের ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’আর বিএনপির‘গণতন্ত্রের কালো দিবস’পালন নিয়ে চলছে খুনসুটি। কে মাঠে থাকবে, কে থাকবে না। চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেঝে গাড়ি পোড়ানোর খবর।
দেশের রাজনীতির সার্বিক এ পরিস্থিতিতে নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ী ও নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক উত্তাপের কারণে ঢাকার অনেক স্থানেই নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা। রাস্তায় কমে গেছে গাড়ি। আশঙ্কায় মানুষ বের হতে পারছে না ঘর থেকে। পুলিশ অধিকতর নিরাপত্তার খাতিরে বন্ধ করে দিয়েছে দোকানপাট-ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। এ অস্থিরতায় বুধবার (৫ জানুয়ারি) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ রাখতে বাধ্য হবেন ব্যবসায়ীরা। চলতি সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও রয়েছে হরতালের আশঙ্কা। সব মিলিয়ে ভালোভাবেই দগ্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, হানাহানি এসব চাই না। এসব থাকলে মিল-কারখানা, অফিস-আদালত সবই বন্ধ থাকবে। সবাই থাকবে ঘরে বসে। কোনো কাজকর্ম চলবে না। এতে করে সবার আগে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাধারণ ব্যবসায়ীরা। আর আমরা ব্যবসা না করলে কোনো রাজনীতিবিদ এসে আমাদের খাবার দিয়ে যাবে না। আমাদের রুজি-রুটির জোগাড় আমাদেরই করতে হবে।’
এজন্য রাজনৈতিক কর্মসূচী যাতে ব্যবসায়ীদের গায়ে আঁচড় না দেয় সে আহ্বান জানান কাজী আকরাম।
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা এমন কিছু করেন, যেখানে দোকান, অফিস-আদালত, কল-কারখানা বন্ধ না করতে হয়। ব্যবসায়ীরা যাতে আপনাদের ক্ষোভের আগুনে না পোড়ে এমন পদ্ধতি বের করুন।’
এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি ও বণিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ঘরে বসে থাকা মানেই আমাদের পেটে তালা মেরে দেয়া। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা মানে অর্থনীতির চাকা থেমে থাকা। একদিকে যেমন আমরা নিজেদের রুজি জোগার করতে পারবো না, তেমনি থমকে দাঁড়াবে অর্থনীতির চাকা। সাময়িকভাবে ক্ষয়ক্ষতি কম মনে হলেও এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী। এ ধরনের রাজনৈতিক আচরণ আমাদের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করে তোলে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সাধারণ মানুষগুলো যারা দিন আনে, দিন খায়; কাজকর্ম বন্ধ থাকলে তারা কোথায় যাবে, কী করবে?’ তাই তিনিও রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ জানান এসব প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি থেকে সরে আসতে। আর প্রতিবাদের ভাষা এমন হওয়ার আহ্বান জানান যেখানে কোন ধরনের হানাহানি থাকবে না।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাষ্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সদ্য বিদায়ী সভাপতি শাহজাহান খানও চান না রাজনৈতিক হানাহানি। তিনি বলেন, ‘হানাহানি করে কোনো প্রকার সমাধান আনা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন সমঝোতাপূর্ণ আলোচনা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্যে দিয়ে সব বিষয়ে সমঝোতায় আসুক। কারণ, ব্যবসা বন্ধ মানেই তো আর্থিক ক্ষতি। যার প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর পড়বেই। সুতরাং এ ধরনের কর্মসূচী থেকে বের হয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই।’
সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন বছরের শুরুতেই ফের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আলমতে বেশ হতাশ তারা। ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় যে ক্ষতি হয়েছিল তা-ই এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি অনেকে। ওই সময়ের ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল তা সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। ঠিক যে মুহূর্তে সব সূচকে ইতিবাচক দিক পরীলক্ষিত হচ্ছে সেই মুহূর্তে আবারো হরতালের মতো কর্মসূচী অর্থনীতির অগ্রযাত্রাকে ভীষণভাবে ব্যাহত করবে।
একদিনের হরতালে ব্যবসায়িক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে কর্মসূচি দিয়েছে দুই দলই। দুই দলই বলছে বিপক্ষকে প্রতিহত করবে তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক দলের হরতালে ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হলে দুই দলের সম্মিলিত আক্রমনাত্মক কার্যক্রমে (প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-প্রতিরোধ) কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি গুণতে হবে সেটাই চিন্তার মূল বিষয়।