ঢাকা: দেশের প্রধান বড় দুই রাজনৈতিক দলের ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ বনাম ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস পালন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ। কী হতে যাচ্ছে সোমবার? গণতন্ত্রের বিজয় নাকি হত্যা? আশঙ্কায় সেদিকেই তাকিয়ে আছে সবাই।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির বেড়াজালে ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সবখানে আগুন, বোমা আর গ্রেপ্তার আতঙ্ক।
রাজধানীতে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যে কোনো মূল্যে সমাবেশ করেত চায় বিএনপি। অন্যদিকে ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কোনো সভা সমাবেশ করবে না বলে জানিয়েছে। তবে যে কোনো ধরণের সহিংসতা প্রতিহত করতে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। দশম সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের রাজপথ দখলে রাখার এমন পাল্টাপাল্টি হুমকিতে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। সবখানেই প্রশ্ন, কী হতে যাচ্ছে?
এদিকে শনিবার রাত থেকেই খালেদা জিয়াকে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষে থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। রোববার দুপুরের দিকে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অনেককে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
তবে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ। ডিএমপি কমিশনার মাসুদুর রহমান রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মলনে বলেন, খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষে থেকে বলা হচ্ছে, ‘সমাবেশের অনুমতি দেয়া না দেয়া সরকারের বিষয়। আমরা পাঁচ তারিখ কর্মসূচি দিয়েছি, পালন করবো। কর্মসূচি সফল করতে যা যা করা দরকার আমরা তা করবো।’
রোববার রাতে সর্বশেষ বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া বলেছেন, সোমবারের কর্মসূচি চলবেই। তিনিও সমাবেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
অন্যদিকে বিএনপির হুমকির জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘আমারা কারো হুংকারে ভয় পাই না। কে কি হুংকার দিল, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মাথাব্যথা নেই। তবে দেশে কাউকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। কেউ অরাজকতার চেষ্টা করলে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- ২৭ ডিসেম্বর যে কোনো মূল্যে গাজীপুরে সমাবেশ করার কথা বলেছিল বিএনপি। এমনকি দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়াও বলেছিলেন- তিনি গাজীপুর যাবেনই, কে তাকে বাধা দেয় সেটি তিনি দেখবেন। তবে ওই সমাবেশের ওপর স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করার পর রাস্তায় সাংগঠনিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে হরতাল ডেকে অবস্থান থেকে সরে যায় বিএনপি।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বরও ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’র ডাক দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপির কাউকেই কোথাও রাস্তায় দেখা যায়নি।
সমাবেশের জন্য প্রশাসনের অনুমতি না পেলেও বিএনপি নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করতে পারে এমন আশঙ্কায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেসহ আশপাশের এলাকায় শক্ত অবস্থান নিয়েছে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সাদা পোশাকেও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা সেখানে অবস্থান করছেন। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে আটক করা হয়েছে গতকাল শনিবার।
এদিকে সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। দূরপাল্লার বাস মালিকরা ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে লঞ্চ চলাচল।
অন্যদিকে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। হোটেলে নতুন করে কোনো বুকিংও নেয়া হচ্ছে না।
রোববার বিকেল থেকেই রাজধানীতে যান চলাচল কমতে থাকে। বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়ার ফলে সন্ধ্যার পর প্রধান সড়কগুলো কার্যত বাসহীন হয়ে পড়ে। রাস্তায় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষকে।