২৪ অক্টোবর ২০১৪: বিএনপির বিরুদ্ধে ১৪ দলের সঙ্গে জোট করার মাধ্যমে অর্জিত বিজয় হাতছাড়া হওয়ায় ভীষণ অনুতপ্ত ড. কামাল হোসেন। এজন্য তিনি তার নিজের ফাঁসি চেয়েছেন। গতকাল তিনি একটি মতবিনিময় সভা আহ্বান করেছিলেন তার বেইলি রোডের বাসভবনে। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত গড়ালো এক অন্তরঙ্গ আলোচনায়। শুরুতেই তিনি প্রথা ভাঙতে চাইলেন। বাসভবনে আয়োজন হলেও তার জন্য একটি বিশেষ চেয়ার রাখা হয়েছিল। তিনি তাতে বসতে অস্বীকৃতি জানালেন। বললেন, আমরা এভাবে সিংহাসন সৃষ্টি করে গণতন্ত্র নষ্ট করেছি। মানুষের চেয়ে নেতা অনেক বেশি বড় হয়ে গেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীর জন্য রাখা মাইক্রোফোনগুলো তার জন্য সংরক্ষিত চেয়ারের সামনে রাখা হয়েছিল। তিনি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের অনুরোধ জানালেন তার আসনের পাশে বসতে। মিডিয়া কর্মীদের জন্য সেটা অসুবিধাজনক বিবেচনায় তারা সেখানে বসতে চাইলেন না। এরপর ড. কামাল নিজেই এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে তার সূচনা বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন। তিনি ৬ দফা দিলেন। বললেন- ১. কার্যকর গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মূল সূত্র হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। কিন্তু সংবিধানের এই ঘোষণা আজ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণ তার হারানো অধিকার ফিরে পেতে পারে। ২. সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের বিকল্প নেই। ৩. বিচারবিভাগ জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সকল সাংবিধানিক সংস্থায় নিয়োগে দলীয়করণ বাদ দিয়ে যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধার প্রাধান্য দিতে হবে। ৪. সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা ৫. শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করা। ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেয়া। ৬. সমগ্র জাতির মধ্যে একটি প্রচ্ছন্ন ঐক্য গড়ে উঠেছে। এখন দরকার এই ঐক্যকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির আওতায় এনে ব্যাপকভাবে সংগঠিত করা। বিভক্তকরণের যে যুক্তি অনেকেই দিচ্ছে তার সঙ্গে তিনি দ্বিমত পোষণ করেন। তার মতে, সমাজ এখনও ঐক্যবদ্ধ আছে। এখন যদি ভোটাভুটি হয় যে, জনগণ ক্ষমতার মালিক। এটা আপনারা বদলাতে চান কিনা? তাহলে কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধভাবে এর পক্ষে ভোট দেবে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে যা হারিয়েছিলাম, ৩রা নভেম্বরে যা হারিয়েছিলাম তা ২০০৮ সালের ২৯শে নভেম্বরে জনগণ ১৪ দলকে তা ফিরিয়ে দিয়েছিল। ভেবেছিলাম আমরা আইনের শাসন পাবো। কিন্তু তারপর কি হয়েছে সে আলোচনায় আর যেতে চাই না। কারণ আমার ভীষণ দুঃখ। এত বড় অর্জনকে আমরা বিসর্জন দিলাম। সবকিছু ফেলে দিলাম। ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে যেটা করা হলো সেটা কিন্তু দুনিয়ার কেউ খাচ্ছে না। আপনারা তো বাইরে যান। বলেন, কেউ কি এটা খাচ্ছে? সাবের চৌধুরীর বিলবোর্ড উঠেছে। তাকে একজন শিক্ষিত ভদ্রলোক বলেই জানতাম। এখন লজ্জা পাচ্ছি। কারণ তিনি তো ভালই জানেন আইপিইউ কি জিনিস। স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী কেম্যান আইল্যান্ডের দলকে হারিয়ে এসেছেন। তবু তিনি বিল বোর্ড তোলেননি। কারণ তার বাবা এত টাকা রেখে যাননি। সাবের চৌধুরীর বাবা অগাধ টাকা রেখে যাওয়ার কারণে শান্তিনগরে বিরাট বিলবোর্ড উঠেছে। যেন তিনি সারা পৃথিবী জয় করে এসেছেন। জোহরা তাজউদ্দিন কি মন ভেঙে মারা যাননি? কারণ অসুস্থ অবস্থায় তাকে কেউ দেখতে যাননি। এর কারণ হলো আমাদের যে আওয়ামী লীগ ছিল সেটা হাইজ্যাকড হয়েছে। এই দলের প্রতি আমাদের দুর্বলতা সকলেরই আছে। এখনও অনেক মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা রাখেন। কারণ, এ ছাড়া তারা অন্য কিছু দেখেন না। ভেবেছিলাম আওয়ামী লীগ তার ভেতর থেকে কি করে রিফর্ম হয়ে আসতে পারে। সবার সমর্থনযোগ্য হতে পারে। আমাকে অনেকে বলেছেন, আপনারা ভেতর থেকে তো এটা করতে পারতেন। সেটা আমরা অনেকটাই বুঝলাম যে এটা সম্ভব নয়। তবে আওয়ামী লীগের আজও অনেকে সেই ৫০ বছরের রাজনীতির ঐতিহ্য ধরে আছেন। আমরা কোথায় যাচ্ছি? নারায়ণগঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই যে র্যাব, ছয় কোটি টাকা দিয়ে মানুষ খুন করা যায় সেটা দেখালো। মাথাপিছু এক কোটি টাকা। চার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুট করে বলা হয় এটা কোন টাকাই না। এই বাস্তবতা তো ভয়াবহ বাস্তবতা।
সৌজন্যে: মানবজমিন