১৭ অক্টোবর ২০১৪: হাজারো মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেণ্য শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিয়াস করিম। আজ বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মরহুমের জানাজা নামাজ শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার নামাজে জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ নামাজে জানাজায় শরিক হন। বায়তুল মোকাররমের ভেতরে এবং বাইরের বারান্দা, উত্তর ও দক্ষিণ প্লাজায় ব্যাপক লোকসমাগম চোখে পড়ে। পিয়াস করিমের জানাজাকে ঘিরে মসজিদের চারপাশে কড়া নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
এরআগে সকাল ৯টা ৪০ থেকে ১১টা ২০ পর্যন্ত পিয়াস করিমের কফিন ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডের ৩২ নং বাসায় রাখা হয়। সেখানে তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন, বিশিষ্ট ব্যক্তি, কলামিষ্ট, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদসহ সর্বস্তরের জনগণ তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে পরিবারের সিদ্ধান্তে ধানমন্ডিস্থ বাসার পাশে ‘বায়তুল আমান’ মসজিদের সামনে পিয়াস করিমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর দুপুর সোয়া বারোটায় পিয়াস করিমের লাশ বায়তুল মোকাররম মসজিদে নেয়া হয়। সেখানে বাদ জুমা তার দ্বিতীয় জানাজার নামাজে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব মাওলানা সালাহউদ্দিন। জুমার নামাজের আগে এবং জানাজা শেষে পিয়াস করিমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন তিনি।
জানাজার নামাজে পরিবারের পক্ষে মরহুমের ভাই জহির করিম ও অন্যান্য স্বজন, বিএনপি নেতাদের মধ্যে- ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক এম এ মান্নান, মোসাদ্দেক আলী ফালু, রুহুল কবির রিজভী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আনোয়ার হোসাইন, শামীমুর রহমান শামীম, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিশের আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামিক পার্টির আবদুল মোবিন, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা ও মঞ্জুর হোসেন, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ ভাসানীর অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম সহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা শরিক হন।
জানাজার পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দণি প্লাজায় পিয়াস করিমের কফিন রাখা হয়। সেখানেও বিভিন্ন দল ও সংগঠনের প থেকে হাজার মানুষ তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
বায়তুল মোকাররমে জানাজার পর লাশবাহী গাড়িতে করে পিয়াস করিমের কফিন বনানী কবরস্থানে নেয়া হয়। সেখানে বিকেল ৩ টা ২৫ মিনিটে দাফন করা হয় বলে নিশ্চিত করেন মরহুমের ছোট ভাই জহির করিম।
সরকারি রোষাণলের শিকার পিয়াস করিম : ফখরুল
পিয়াস করিমের কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, মরহুম পিয়াস করিম অত্যন্ত স্পষ্টভাষী বক্তা ছিলেন। তিনি সমাজের অসঙ্গতি ও রাজনীতির কঠিন সত্য কথাগুলো অবলীলায় বলতেন। এ জন্য তিনি সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন। তার কথা ও লেখনিতে ফ্যাসিবাদ এবং একনায়কতন্ত্রে বিরুদ্ধে জনগণ আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ড. পিয়াস করিম। তার বয়স হয়েছিলো ৫৬ বছর। মরহুমের তিন বোন এবং অন্য স্বজনেরা বিদেশে থাকায় আজ সকাল পর্যন্ত স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে লাশ রাখা ছিল। বরেণ্য শিক্ষক পিয়াস করিমের মৃত্যুতে দেশের বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, রাজনৈতিক মহল সহ সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে।