১৪ অক্টোবর ২০১৪: বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মরহুম ড. পিয়াস করিমের নামাজে জানাযা আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। এরআগে পিয়াস করিমের প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল দশটায় কফিন রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসকাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ্।
অন্যদিকে মরহুমের ছোট ভাই জহির করিম জানিয়েছেন, আজ বুধবার লাশ দাফনের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তার তিন বোনের মধ্যে একজন আজ মঙ্গলবার দেশে ফিরলেও বাকি দুই বোন আগামী বৃহস্পতিবার দেশে ফিরবেন। বোন এবং স্বজনদের কথা বিবেচনায় নিয়ে শুক্রবার লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা শুক্রবার সকালে স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘর থেকে লাশ বের করব। এরপর কিছু সময় ধানমন্ডির বাসায় স্বজনদের দেখানোর জন্য রাখা হবে। দুপুর বারোটায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে রাখা হবে। বাদ জুমা জানাযা নামাজ শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করব।
তিনি বলেন, আমরা চাই না ভাইয়ের লাশ নিয়ে কোনো রাজনীতি হোক। তার প্রতি কেউ অসম্মান প্রদর্শণ করুক।
এর আগে কাল বুধবার সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ড. পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের একাংশ এর প্রতিবাদ জানিয়ে লাশ শহীদ মিনারে রাখার অনুমতি না দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায়। লাশ শহীদ মিনারে নেয়া হলে আন্দোলনেরও হুমকিও দেয় তারা।
লাশ শহীদ মিনারে রাখার ঘোষণা
এদিকে শুক্রবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাশ রাখার ঘোষণা দিয়েছে নাগরিক সমাজ। যদি কোনো বাঁধা আসে তাহলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস কাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মাহফুজউল্লাহ বলেন, আমরা কখনো শুনিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাউকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত অনুমতি লাগবে। অতীতে এরকম কোনো উদাহরণ পাওয়া যাবে না। পিয়াস করিমের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পিয়াস করিমের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন ও বোন অ্যাডভোকেট তৌফিক করিম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বরাবর মঙ্গলবার লিখিত আবেদন করেছেন।
তিনি আরো জানান, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে জুম্মার নামাজের আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের মহদেহে শ্রদ্ধা নিদেবন করা হবে। পিয়াস করিমের বোন যুক্তরাষ্ট্র থাকেন। সেখান থেকে আসতে সময় লাগার কারণেই শুক্রবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। দাফনের বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের মরদেহ রাখা নিয়ে এর বিরুদ্ধে সরকারের ইন্ধন বা উসকানি রয়েছে। কিন্তু এ ধরণের কার্যক্রম কখনো ভালো ফল বয়ে আনে না। পিয়াস করিমের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর উৎসাহতে বাধা না দেয়াই ভালো।
মাহফুজউল্লাহ বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের প্রতি শ্রদ্ধা আমরা জানাতে পারি। এটি আমাদের মৌলিক অধিকার। এর বিরোধিতা করে তারা প্রমাণ করেছে যে জীবিত পিয়াস করিমের চেয়ে মৃত পিয়াস করিমের গুরুত্ব অনেক বেশি।
লাশ শহীদ মিনারে নেয়া হলে প্রতিরোধ
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ড. পিয়াস করিমের লাশ নেয়া হলে তা প্রতিরোধের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক বিভিন্ন বাম সংগঠন। এ উপলক্ষে আজ শহীদ মিনারে অবস্থান এবং চিত্রাঙ্কন কর্মসূচীও পালিত হয়েছে। আজও সেখানে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচী, সড়কে আলপনা আঁকাসহ নানা কর্মসূচী পালন করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনগুলো।
এর আগে সোমবার ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রমৈত্রী ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন শহীদ মিনারে লাশ রাখার অনুমতি না দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায়। তা না হলে প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেন তারা। গণজাগরণ মঞ্চের খন্ডিত অংশগুলোও একই ধরণের ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নয়া দিগন্তকে বলেন, পিয়াস করিমের লাশ নিয়ে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চায় না।
সৌজন্যে : নয়া দিগন্ত