১২ অক্টোবর ২০১৪: পবিত্র হজ ও তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করে বিতর্ক সৃষ্টিকারী সদ্যসাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আজ কলকাতা আসছেন বলে জানা গেছে।
দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গতকাল শনিবার রাতে তিনি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, রোববার বিকেলে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে তিনি কলকাতা পৌঁছাবেন। দু-তিন দিনের মধ্যে তিনি বাংলাদেশে আসারও চেষ্টা করবেন। দেশে ফিরে তিনি জেলে যেতেও প্রস্তুত রয়েছেন।
এদিকে ওই একই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মন্ত্রী তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেন। এসময় তিনি তার পদত্যাগপত্র পড়ে শোনান। সেখানে তিনি জানান, তিনি এখন মুক্ত জীবন উপভোগ করছেন। একই সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি নেতার (শেখ হাসিনা) মুখরক্ষা করতে পারলেন না; বরং নেতাকে বিব্রত করেছেন।
পদত্যাগপত্রে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ জনগণ- যারা মুক্তিযুদ্ধের ওপর আস্থাশীল, যারা বিব্রত জনগোষ্ঠী, যারা ধর্ম ব্যবসায়ীদের অপপ্রচারে বিরক্ত, ব্যথিত ও আহত- তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি পত্রে বলেন, আপনি আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে অপসারণ করলেও দুঃখ পাব না; বরং মনে করব, যথার্থই হয়েছে। ব্যক্তির চেয়ে দল অনেক বড়। আমি তার যথার্থ প্রমাণ রাখতে চাই। আমি আছি, থাকব। আমৃত্যু আপনার অনুগত হয়ে থাকব। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা আমার আলোকবর্তিকা। যে নেতা (শেখ হাসিনা) জনগণের কথা ভাবেন, তার জয় অবশ্যম্ভাবী। ঝড় সাময়িক। সত্য ও ন্যায় চির অম্লান।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র সমকালকে লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগপত্র পাওয়ার খবর নিশ্চিত করেননি। এ ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না।
অপরদিকে রোববার দুপুরে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অপসারণ সংক্রান্ত ফাইলে স্বাক্ষর করার পর রোববার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপনটি জারি করে।
এদিকে দৈনিক ইত্তেফাকের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সম্প্রতি দু’বার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েও পরে তা বদল করেছেন লতিফ সিদ্দিকী। তিনি দেশে ফিরবেন বলে ঢাকা থেকে মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা তার ফিরতি ফ্লাইটের টিকিটও নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু দেশ তেকে কোনো সাড়া না মেলায় এই সিদ্ধান্তের পরিবর্তন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্বসম্মেলনে অংশ নিয়ে নিউইয়র্ক ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করে তিনি দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কারো কাছ থেকে লতিফ সিদ্দিকী ইতিবাচক সাড়া পাননি। তারপরও দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করে ঈদের দিন তিনি তার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে ফোন করে ফ্লাইটের টিকিট নিশ্চিত করতে বলেন। মন্ত্রীর নির্দেশে ওই কর্মকর্তা ঈদের দুদিন পর লতিফ সিদ্দিকীর টিকিট কনফার্ম করেন। ওই কর্মকর্তাই বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্ক যাওয়ার সময় মন্ত্রীর টিকিট কেটে দিয়েছিলেন।
আরো জানা যায়, ঈদের দুদিন পর দেশে ফেরার কথা থাকলেও লতিফ সিদ্দিকী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আরো দুদিন নিউইয়র্কে অবস্থান করেন। পরে মন্ত্রণালয়ে তার একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে পুনরায় টিকিট কনফার্ম করার নির্দেশ দেন। পরে ওই কর্মকর্তা আগের সেই কর্মকর্তাকে দিয়েই দ্বিতীয় দফায় ফিরতি টিকিট কনফার্ম করেন। এই সময়ের মধ্যে লতিফ সিদ্দিকী অসংখ্যবার ঢাকায় ফোন করে তার দেশে ফেরার আগ্রহের কথা জানান। পরিবারের সঙ্গেও একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আশ্বাস পেলেও ওপর মহল থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তিনি ডালাসে চলে যান। ডালাস যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত লতিফ সিদ্দিকীর ব্যবহূত গ্রামীণফোনের নম্বরটি রোমিং অবস্থায় ছিল। নিউইয়র্কের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ওই নম্বরে ফোন করলে তিনি কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে লাইন কেটে দেন। বর্তমানে ওই ফোন নম্বরটি বন্ধ রয়েছে।