৪ অক্টোবর ২০১৪: ‘মুজিব কোট ছাড়বো না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকেও বিচ্যুত হবো না। আওয়ামী লীগের সুলতান মনসুর হয়েই থাকবো। তবে, রাজনীতি থেকে আর নির্বাসনে থেকে নয়। আওয়ামী লীগের সুলতান মনসুর হয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক’র সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আর যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর জবাব দেওয়া হবে।’ তুখোড় রাজনৈতিক নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর গতকাল সিলেটে এক সংবাদ সম্মেলন করে রাজনীতিতে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। বলেছেন, ‘আমাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কারণ হচ্ছে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা। কিন্তু সে স্বপ্ন বাস্তব হবে না। সুলতান মুনসুর জনগণের জন্য রাজনীতি করবে। সুলতান মনসুরকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সম্পাদক। ঢাকসু’র সাবেক ভিপি। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিও। নিজের মুখে বললেন, ‘দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তাকে রাজনৈতিক কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। অথবা নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। আর এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- আমার জনপ্রিয়তায় ধস নামানো। কিন্তু অনেক অপেক্ষা করেছি। আর নয়। নিজের অবস্থান নিজেই গড়তে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছি। জাতীয় ঐক্যের ডাক’র সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সুলতান মনসুর হয়ে রাজনীতিতে নামছি।’ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ‘৫ই জানুয়ারির অনৈতিক নির্বাচনের জন্য স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করিনি। ওই নির্বাচন ‘সার্কাস মার্কা’ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটেনি। ১৫৪টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রতিনিধিরা পাস করেছে। আর বাকিগুলোতে হয়েছে লোক দেখানো নির্বাচন। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর সিলেটের রাজনীতিতেও পরিচিত মুখ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় গোটা বিভাগে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। এ কারণে গতকাল সিলেটে নিজ উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নতুন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা জানালেন। মতবিনিময়কালে সুলতান মনসুর আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিজ চোখে দেখার আগ থেকেই তিনি তার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছিলেন। এরপর ১৯৬৮ সাল থেকে দীর্ঘ ৪৬ বছর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অবিচল থেকে রাজনীতি করে যাচ্ছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর অনেকেই মনে করেছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখানেই শেষ। তাই অনেক নেতাই সে সময় ভিন্ন পথ ধরেছিলেন। কিন্তু তিনি আশাবাদী ছিলেন বলেই কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সুলতান বলেন, ১৯৭৫ এর পর আওয়ামী লীগের প্রথম বিজয় এসেছিল তার হাত ধরেই। ১৯৮৯ সালে ডাকসু’র ভিপি পদে তার বিজয় ছিল ’৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের প্রথম বিজয়। আর দ্বিতীয় বিজয় ছিল ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মো. হানিফের বিজয়। সুলতান মনসুর বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, অনেকেই মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ দল ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দল নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দাবি করলেও তারা কখনও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী বা প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজ উদ্দিন আহমদের জন্মবার্ষিকী পালন করেনি। বর্তমান সরকারকে অবৈধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে নির্বাচন হয়েছে তা মানুষ আশা করেনি। এই সংশোধনীর মাধ্যমে মানুষের ভোট দেয়ার স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আইনগত বৈধতা থাকলেও এটা একটি সার্কাস মার্কা নির্বাচন ছিল। দেশের বেশির ভাগ মানুষ তাদের ভোট দেয়ারই সুযোগ পাননি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বসে নেতারাই ঠিক করেছেন কোন আসনে কে কত ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। বর্তমান সরকার জনগণের সরকার নয়, এটা অনৈতিক ও অবৈধ সরকার। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রসঙ্গে সুলতান মনসুর বলেন, তার সামনে এখন দু’টি পথ, একটি রাজনীতি ছেড়ে দেয়া, আর অন্যটি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা। মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে থাকা সম্ভব না হওয়ায় তিনি দ্বিতীয়টিই বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন- ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে একমাত্র মৌলভীবাজার-২ আসনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা একক প্রার্থী হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করেছিল। বাকি প্রতিটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সকল পদ থেকে তাকে বাদ দিয়ে রাজনৈতিক কারাগারে বন্দি রাখা হয়। সাড়ে ৬ বছর অপেক্ষায় থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাকে শামিল হয়েছেন। গত ৩রা সেপ্টেম্বর গণফোরাম, জাসদ (রব), কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ (খালেকুজ্জামান) ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে ঢাকায় যে কনভেনশন হয়েছে সেখানে তিনি আওয়ামী লীগের সুলতান মনসুর হিসেবেই অংশ নিয়েছিলেন। আপাতত তিনি ওই ঐক্যের সঙ্গেই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবেন। তবে যে ফ্রন্টেই তিনি থাকেন না কেন তার পরিচয় হবে আওয়ামী লীগের সুলতান মনসুর-এমনটাই দাবি করেন তিনি। অন্তরে মুজিব আদর্শ, মুখে জয় বাংলা স্লোগান ও গায়ে মুজিব কোট পরেই তিনি আজীবন রাজনীতি করে যাওয়ারও ঘোষণা দেন।