রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ : টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে আটককৃত জেএমবির সাত সদস্য। রিমান্ডে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও কিভাবে ফারুকীকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ফারুকীকে খুনের দায় স্বীকার করেছে জেএমবি। তবে কিলিং মিশনে কারা, কিভাবে, কাদের নির্দেশে ও কতজন অংশ নিয়েছিল এ বিষয়ে তারা কিছু বলেনি।’ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মিলতে পারে বলে আশা করছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা।গত ২৭ আগস্ট বুধবার রাত আটটার দিকে ১৭৪ পূর্ব রাজাবাজারের দোতলার ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও স্বজনদের সামনে গলা কেটে হত্যা করা হয় ফারুকীকে।ঘটনার পর থেকেই ফারুকীর পরিবারের সদস্যরা দাবি করে আসছিল, ধর্মীয় মতাদর্শগত কারণেই খুন হয়েছেন ফারুকী। পুলিশও এই হত্যাকাণ্ডে উগ্র জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সন্দেহের তালিকায় শীর্ষে রেখে তদন্ত পরিচালনা করে আসছিল।গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম অবশ্য এর আগেও ফারুকী হত্যাকাণ্ডে জেএমবি এবং আনসারউল্লাহ বাংলা টিম জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।১৫ সেপ্টেম্বর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে ফারুকী হত্যার তদন্ত সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছিলেন, শুরুতে অনেক বিষয় সামনে রেখে মামলার তদন্ত করা হয়। তবে তদন্তের এ পর্যায়ে মনে হচ্ছে যে নুরুল ইসলাম ফারুকীর মতাদর্শের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে।‘হত্যাকাণ্ডে দুটি জঙ্গি সংগঠন জড়িত থাকতে পারে বলে মনে হয়েছে। রাজধানীর গোপীবাগে ইমাম মাহদির সেনাপতি দাবিদার লুৎফুর রহমান ফারুকসহ ছয় জনকে হত্যার ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারাই ফারুকীকে হত্যা করেছে বলে মনে হচ্ছে,’ জানান তিনি।গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, গ্রেফতারকৃত জেএমবির সাত সদস্য রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনা করছিল। এসব হত্যাকাণ্ডের লক্ষ্য ছিল বিশ্ব মিডিয়ায় নিজেদের তুলে ধরে ঝিমিয়ে পড়া সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চাঙ্গা করা।ডিবির উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত জঙ্গি নকি ও নাহিদ প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যের বিভিন্ন এলাকায় সফরগুলোর খবর রাখত। নিরাপত্তা ভেদ করে কিভাবে হামলা করা যায় সে বিষয়ে একটি ছকও তৈরি করে। ওই ছকে সরকারপ্রধান ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রী এবং প্রগতিশীল চেতনার রাজনৈতিক নেতার নাম রয়েছে।’
ডিবি সূত্র জানায়, কারাগারে যাতায়াত করে এমন দুজন ব্যক্তিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তারা কারাবন্দি জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এ ক্ষেত্রে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সোহেল ও শামস নামে দুজনের নাম পাওয়া গেছে।
২০০৪ এবং ২০০৫ সালে জেএমবি সদস্যরা লেখক, বুদ্ধিজীবী, আদালতসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে সারাদেশে আতঙ্ক তৈরী করেছিল।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি শাখা যৌথ অভিযান চালিয়ে আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন পার্ক এলাকা থেকে এই সাত জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে রয়েছে জেএমবির একাংশের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদ।
অপর সদস্যরা হচ্ছেন- নাঈম আলী, সিকান্দার আলী ওরফে নকি, মাহমুদ ইবনে বাশার, মাসুম বিল্লাহ, ফুয়াদ হাসান ও আলী আহম্মদ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজধানীর তুরাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা দু’টি মামলায় শুক্রবার ৪ দিনের রিমান্ডে নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।