মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪: নজরুল সংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগম আর নেই। রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
ফিরোজা বেগমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করেছেন।
মৃত্যুকালে তিনি তিন সন্তান তাহসিন আহমেদ, হামিন আহমেদ, শাফিন আহমেদ ও অসংখ্য ভক্ত রেখে গেছেন। তিনি হৃদযন্ত্র ও কিডনির জটিল রোগে ভুগছিলেন। কয়েকদিন আগে তার শরীরে জন্ডিস ধরা পড়ে।
এর আগে গত সপ্তাহে ফিরোজা বেগমকে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর বুধবার তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত শুক্রবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।সেখানে চিকিৎসকরা ফিরোজা বেগমের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা খুঁজে পান। একইসঙ্গে হৃদযন্ত্র ও কিডনি স্বাভাবিকভাবে কাজ না করায় অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটোছে তার।
১৯৩৪ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে ফিরোজা বেগমের জন্ম। তার বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল, মা বেগম কওকাবুন্নেসা এবং স্বামী কমল দাশগুপ্ত। ১৯৪২ সালে ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে ইসলামী গান নিয়ে তার প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড হয়। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। ১৯৫৬ সালে বিশিষ্ট সুরকার ও সংগীতশিল্পী কমল দাশ গুপ্তের সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
ফিরোজা বেগম কবি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্য পেয়েছেন। নজরুলসংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক, শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক, সেরা নজরুলসংগীতশিল্পী পুরস্কার (অনেকবার), নজরুল আকাদেমি পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিটসহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার রাতে ফিরোজা বেগমের মরদেহ অ্যাপোলো হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে।
বুধবার সকাল নয়টার দিকে ফিরোজা বেগমের মরদেহ রাজধানীর ইন্দিরা রোড়ের বাসা কালিন্দিতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা দুইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁর মরদেহ রাখা হবে। সেখান থেকে লাশ জানাজার জন্য গুলশান আজাদ মসজিদে নেওয়া হবে। এরপর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।