শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ : মন্ত্রীর মেয়ের বিয়েতে দুপুর থেকেই স্রোতের মতো মানুষ প্রবেশ করছেন মৌলভীবাজার স্টেডিয়ামে। বের হয়েছেন তৃপ্তি নিয়ে। কেউ উপঢৌকন দিয়েছেন। কেউ খালি হাতেও গেছেন। গরিব-ধনী সবাই ছিলেন। নারী-পুরুষ শিশু সবাই খেয়েছেন। সে এক এলাহি কাণ্ড। প্রায় ২০ হাজার লোককে ভূরিভোজন করানো হয় । আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন প্রবেশপথসহ বিভিন্ন পয়েন্টে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দ্বিতীয় কন্যা সৈয়দা সানজিদা শারমিনের বিয়ে হয় গতকাল। বর লক্ষ্মীপুরের শ্রীরামপুর গ্রামের ইব্রাহিম পাটওয়ারীর ছেলে মোশাররফ পাটওয়ারী।
বেশি অতিথি উপস্থিতির কথা মাথায় রেখে আগেই মৌলভীবাজার এম সাইফুর রহমান স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে মৌলভীবাজার স্টেডিয়ামকে অনুষ্ঠান উপযোগী করে সাজানো হয় গত কয় দিনে। স্টেডিয়ামের ভেতরে তৈরি করা হয় পাঁচটি প্যান্ডেল। অতিথি আপ্যায়নের প্যান্ডেল ছাড়া বর ও কনের প্যান্ডেল করা হয় প্রায় মুখোমুখি। দুই প্যান্ডেলে বিশেষ ব্যবস্থায় শীতল রাখার ব্যবস্থা ছিল। আর এই প্যান্ডেল দু’টি সাজিয়েছেন ঢাকার একটি নামী প্রতিষ্ঠান।
গতকাল বিয়ে অনুষ্ঠানে প্রচুর লোক সমাগম হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগে রাখতে ব্যবহার করেন ওয়াকিটকি। মাইকে অতিথিদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানস্থলে একটি মেডিকেল টিম ছিল। সরকারি দু’জন ডাক্তার দায়িত্ব পালন করেন। জাপানের রয়েল পরিবারে ক’জন সদস্যকে দুপুরে একবার মন্ত্রী পরিচয় করিয়ে দেন কনের মঞ্চে উপস্থিত হয়ে। কনে সানজিদা আগেই ছিলেন সেখানে। তার পরনে ছিল মেরুন রঙের লেহেঙ্গা। বর আসেন বিকাল ৪টায়। পরনে ছিল ক্রিম কালারের শেরওয়ানি। আসেন পাজেরো গাড়িতে চড়ে। সঙ্গে বরযাত্রী ছিল ২৫টি গাড়িতে।
মুসলিম অতিথিদের জন্য সাদা পোলাও, রোস্ট ও গরুর রেজালা এবং অমুসলিদের জন্য খাসি ও মাছের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী গরু ও খাসি জবাই করা হয়। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল পর্যন্ত খাবার পরিবেশন করা হয়। সূত্র জানায়, তাদের হিসাব ছিল ১৮ হাজার লোক হবে। তবে অতিরিক্ত প্রস্তুতি থাকায় সমস্যা হয়নি। আগেই দেশজুড়ে আলোচনা ছিল এই বিয়ে অনুষ্ঠান নিয়ে। বিশেষত আলোচনা ছিল স্টেডিয়ামে আয়োজন করা এবং স্টেডিয়াম পশ্চিম সীমানা প্রাচীরের কিছু অংশ এবং লাগোয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসের সীমানা প্রাচীরের কিছু অংশ ভেঙে অতিথিদের গাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা করা নিয়ে। তা ছাড়া অতিথির উপস্থিতিও ছিল আলোচনার একটি বিষয়। সৈয়দ মহসীন আলী মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগের প্রথম মন্ত্রী, এ ছাড়াও এ অঞ্চলে বিয়ের অনুষ্ঠান কোন স্টেডিয়ামে আয়োজন এটিই প্রথম। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে সাবেক চিপ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল। কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে গত ক’দিন দেশজুড়ে আলোচনা ছিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর কন্যার বিয়ে নিয়ে। স্থানীয়ভাবে বেশি আলোচনা ছিল বর কিভাবে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। অতিথি কি পরিমাণ উপস্থিত হন। শৃঙ্খলা কি রকম থাকে। ভিআইপি অতিথি কে কে থাকেন। মন্ত্রী কতজন উপস্থিত হন। একদিন আগে মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভিআইপি অতিথিদের প্রটোকল দিতে সমস্যা। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রও নিশ্চিত করেছে কোন মন্ত্রী বা সমপর্যায়ের ভিআইপি কেউ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই বলেছেন যে পরিমাণ লোকজন উপস্থিত হয়েছে তাদের আপ্যায়নের জন্য স্টেডিয়াম ছাড়া অন্য কোথাও সঙ্কুলান হতো না। বিয়ে পড়িয়েছেন কাজী কুতুব উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, ২০ লাখ ১ টাকা দেনমোহরে এ বিয়ে হয়।
অনানুষ্ঠানিক সে আলোচনায় মন্ত্রিসভায় বেশ জমজমাট আলোচনায়ও হয় আসন্ন এই বিয়ে নিয়ে।
১৯৪৭ সালে জন্ম নেয়া মুজিবুল হক তিন বার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আইন পেশায় নিযুক্ত মুজিবুল হক বর্তমানে বসবাস করছেন রাজধানীর ন্যাম ভবনে।
তবে সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে ডিসেম্বরে নতুন বাসায় উঠবেন এই নবদম্পতি।
London Bangla A Force for the community…
