লন্ডনবাংলা রিপোর্ট : লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কনস্যুলার সেকশনে দুম্বজন কন্যা সন্তানের নতুন পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে চরম হয়রানীর সম্মুখীন অক্সফোর্ড শায়ারের ওয়ানটেজ শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এ ব্যাপারে লন্ডনবাংলা দফতরে তিনি লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
অভিযোগে জানা যায়- বাংলাদেশে জন্মগ্রহনকারী ৮ ও ৬ বছর বয়সী দুম্বটি শিশু সন্তানের নতুন পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে তিনি ভীষন হয়রানীর শিকার হন। দীর্ঘ নয় মাস হাইকমিশনের কনস্যুলার সেকশনে লেফট- রাইট করার পর গত ২৬ আগস্ট মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ফিরে পেয়েছেন। তিনি অভিযোগে বলেন, ২০১০ সালে স্কুল শিক্ষকের পরামর্শে পারিবারিক নামের সাথে মিল রেখে আমার দুই মেয়ের নাম পরিবর্তন করে আগস্ট মাসে নতুন নামে পাসপোর্ট বানাতে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাই। পরিবর্তিত নামে পাসপোর্ট বানাতে হলে, নাম পরিবর্তন ডকুমেন্ট (ডিড পুল) ব্রিটিশ ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিস হতে সত্যায়িত করে হাইকমিশনে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
২০১০ সালে মেয়েদের পাসপোর্ট জরুরী ছিল না বিধায় হাইকমিশনের সাথে আর যোগাযোগ করা হয়নি। ২০১৩ সালের ডিসে“রে পাসপোর্ট দরকার হওয়ায় আবারো হাইকমিশনে যাই। যথারীতি একই পরামর্শ দিলে আমি ব্রিটিশ ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিস হতে সত্যায়িত করে পাসপোর্ট এপ্লিকেশন ফরম পূরন করে হাইকমিশনে ফোনে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে নিজেই হাইকমিশনে যাই। হাতে পূরণ করা ফরম অচল এছাড়া ওই(ডিড পুল) নাম পরিবর্তন ডকুমেন্ট বাংলাদেশের সত্যায়িত লাগবে এবং নাম পারবর্তন সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশের যে কোন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত করে তার প্রমান লাগবে বলে আমাকে জানানো হয়। হাইকমিশন হতে আমাকে অনলাইনে এমআরপি ফরম পূরন ও বুকিং দিয়ে সব কাগজ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। দীর্ঘ চার মাস অনেক কষ্ট করে আমি মেয়েদের সব কাগজপত্র প্রস্তুত করে ৩০ মার্চ ২০১৪ হাইকমিশনের এপয়েন্টমেন্ট নেই আমি। ৩০ মার্চ হাইকমিশনে যাওয়ার পর অন্য কোন কাগজ বাকী আছে এমন অযুহাত যেনো ফিরে আসতে না হয় তাই আমি সেদিনের আগে একদিন হাইকমিশনে গিয়ে সব কাগজপত্র দেখিয়ে আসি।
৩০ মার্চ হাইকমিশনে যাওয়ার জন্য মেয়েদের স্কুল থেকে ছুটি নেই। নির্দিষ্ট সময়ে যেনো লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে পৌছতে পারি সেজন্য একটু সকাল করেই অক্সফোর্ডের বাসা থেকে রওয়ানা হই। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হওয়ায় দুই ঘন্টার রাস্তায় সময় লাগে চার ঘন্টার মতো। হাইকমিশনে যখন পৌছি তখন বেলা ১টা। আমার সামনে দরজা বন্ধ করে দিচ্চেছ দেখে কয়েকবার অনুরোধ করি ছোট মেয়েদের কষ্টের কথা বিবেচনা করার জন্য। কিন্তু কোন অনুরোধে কাজ হয়নি । ২ টা ৩০ মিনিটে পুনরায় অফিস খোলা হবে, সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পরামর্শ দেয়া হয় আমাকে।
২ টা ৩০ মিনিটে কাউন্টারে গেলে ওই ব্যক্তি উনার স্যারের অনুমোতি ছাড়া গ্রহন করতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে ১ নং রুমে বসা উনার স্যারের কাছে আমাদের পাঠালেন। আমার এপয়েন্টমেন্ট ১ টার আগে ছিল কিন্তু আমি সময়মতো পৌছতে পারিনি তাই তিনি মেয়েদের পাসপোর্টের দরখাস্ত নিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। অনেকবার অনুরোধ করলেও তিনি নিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। ছোট মেয়ে দুম্বটোকে স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে কষ্ট করে দূর থেকে এসেছি বলে আবার অনুরোধ করতেই তিনি ক্ষেপে যান।
গত ৩০ মে ২০১৪ আবার এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে হাইকমিশনে মেয়েদের দরখাস্ত জমা দিতে গেলে পুনরায় ঝামেলায় পড়ি। কারন তখনকার ১নং রুমের স্যারের প্রমোশন হয়ে তিনি বাংলাদেশে হলিডেতে গেছেন। আগে আমার সাথে উনার যে কথা হয়েছিল তা তাদের কারো জানা নেই, তাই তারা আমার ফরম জমা নিতে আবারো অপারগতা প্রকাশ করে। অনেক অনুরোধ ও কথা বার্তার পর তাদের বড় স্যার মিনিস্টার কনস্যুলার আজিম উদ্দিন সাহেবের অনুরোধে আমার মেয়েদের দরখাস্ত জমা নেয়া হয়। দেড় মাস পর বড় মেয়ের পাসপোর্ট পাই কিন্তু ছোট মেয়ের পাসপোর্ট না পেয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা অপেক্ষা করতে বলেন। বড় মেয়েরটা পেয়েছি কিন্তু ছোট মেয়েরটা না পাওয়ায় আমার ধারনা হচ্চিছল নিশ্চয় কোন সমস্যা হয়েছে । তাই বার বার তাদের সাথে যোগাযোগ করলে, অনেক সময় বেশি দিন লাগে বলে তারা আমাকে আশ্বস্ত করে আরো অপেক্ষা করতে বলেন। আবার আজিম উদ্দিন সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলে তার অনুরোধে কনস্যুলারের এক ব্যক্তি জানান, ছোট মেয়ের ছবি সমস্যা ছিল তাই আরেকদিন তাকে নিয়ে এসে ছবি উঠাতে হবে। এ ঘটনার দুই সপ্তাহ পর ছোট মেয়ের ছবি উঠিয়ে তাদের দিয়ে যাই। এরপর দীর্ঘ নয় মাস পর এ বছরের ২৬ আগস্ট ছোট মেয়ের পাসপোর্ট পাই । অভিযোগে হাবিবুর রহমান জানান, কনস্যুলার সেকশনের জৗনক অফিসার খুবই বদমেজাজী। লোক মুখে প্রকাশ তার খুঁটির জোর নাকি খুব বেশি। একবার কনস্যুলার অফিস থেকে বলা হয়, নাম পরিবর্তন ডকুমেন্ট (ডিড পুল) ব্রিটিশ ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিস হতে সত্যায়িত করে আনতে হবে। আরেকবার বলা হয়, বাংলাদেশের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে সত্যায়িত করে আনতে হবে। তিনি বাংলাদেশের নোটারী পাবলিক থেকে সত্যায়িত করে আনার পর তা গ্রহণ করা হয়নি। অথচ বাংলাদেশ থেকে আনলে হবে বলে আরেকবার বলা হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফোন করলে ফোন কেউ ধরে না ।
প্রবাসী হাবিবুর রহমান আরো জানান, কনস্যুলারে কোন অফিসারের নাম জানতে চাইলে তারা বলতে চায় না। তাদের বুকের মাঝে নামের কোন ব্যজও লাগানো নেই । মিনিস্টার কনস্যুলার সহযোগিতা না করলে তাকে মেয়েদের পাসপোর্টের জন্য আরো কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হতো। মেয়ে সন্তান দুম্বটির পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে দীর্ঘ ৬৮ মাইল যাত্রা করে হাইকমিশনে এসে বার বার হয়রানীর সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। এ ব্যাপারে লন্ডন বাংলা অফিস থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কনস্যুলারের প্রেস সেকশনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বার বার বলা হয়– দু:খিত ! আপনার কািিখত ন“রে এই মুহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্চেছ না । আবার চেষ্টা করুন। বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া গেলে পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে ।