ইসরাইল গাজায় গনহত্যা চালাচেছ। বিগত কয়েক মাসে ২০০০ (দুই হাজার) নারী-পুরুষ ও শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। ইসরাইলী বিমান ও স্থল পথে হামলায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরাইলি বোমার আঘাতে এক বিধ্বস্ত জনপদে পরিনত হয়েছে গাজা। এক লক্ষ মানুষ বাড়ি-ঘর হারিয়ে রাস্তায় ও খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছেন। ফিলিস্তিনী মুসলমানদের ক্রন্দনে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচেছ। চারিদিকে এক হাহাকার রব-অন্ন চাই, ওষধ চাই, পানি চাই, বস্ত্র চাই, মাথা গোজার ঠাই চাই, এ অর্তনাদ উচছারিত হচেছ। বর্বর ইসরাইলী সৈন্যদের পৈশাচিক হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ ‘শ শিশু শাহাদাত বরন করেছে। বিশ্ব সংস্থার কোন আবেদন ইসরাইল মানছেনা। পশ্চিমা নেতাদের আস্কারা ও আরব নেতাদের নিরবতার কারনে ইসরাইল গাজায় মুসলমানদের নিশ্চিহ করার গভীর ষড়যন্ত্র মেতে উঠেছে।
ইসরাইলকে তার বর্বর আচরন থেকে থামানোর জন্য আর্ন্তজাতিক ক্যাম্পেইন কমিটি বিডিএস, যুক্তরাজ্যের ফ্রেন্ডস অব প্যালেস্টাইন, আল কুদ্দুস কমিটি, সলিডারিটি ফর গাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন ইসরাইলী পন্য বর্জন করে অর্থনৈতিক অবরোধ সৃষ্টির আহবান জানিয়েছে। এর কারন হচেছ- বহুজাতিক সুপার মার্কেটগুলো ইসরাইলী রাষ্ট্রের সমর্থনে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। বেশীরভাগ সুপার মার্কেটগুলো ইসরাইলী পন্য বিক্রি করছে যার অর্থ ইসরাইলী সরকারকে গাজায় ফিলিস্তিনী হত্যায় সহায়তা করছে।
গত মাসে হোয়াইটচ্যাপলে সুপার মার্কেট সেইন্সবারীর সামনে ইসরাইলী পন্য বর্জনের জন্য ক্যাম্পেইন হয়েছে। ক্রেতারা সেইন্সবারীতে শপিং বন্ধ করলেই কর্তৃপক্ষ ইসরাইলী পন্য বিক্রি বন্ধ করবে বলে ক্যাম্পেইনাররা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
ক্যাম্পেইনাররা আরো বলেছেন, যে সব পন্যে ’মেইড ইন ইসরাইল’ লেখা আছে তা বর্জন করা উচিত। বিশেষ করে ইসরাইলী কোম্পানী মেহাডরীন ও হাডিকলাইম দ্বারা প্রস্তুুত পন্য কেনা বন্ধ করতে হবে।
গ্লোবাল মুভমেন্টে যোগ দিন :
২০০৫ সালে ফিলিস্তিনী কমিউনিটি গ্রুুপ বিশ্বব্যাপী ইসরাইলী পন্য বর্জনের ডাক দেয়। গত কয়েকযুগ ধরে ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতার অধিকার ও সমানাধিকার প্রদানে অস্বীকার করছে। ইসরাইলী পলিসির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ও অন্যান্য আর্ন্তজাতিক সংস্থার নিন্দা জানানোর পরও কোন কিছুর তোয়াক্ষা করছেনা। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস ইসরাইলী অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরাইলী ওয়ালকে অবৈধ বলেছে। দি বিডিএস ক্যাম্পেইন কমিটি ১৯৬৭ সালে অধিকৃত ফিলিস্তিনী ও আরব ভূখন্ড ছেড়ে দেয়া দেওয়াল নির্মান ভেঙ্গে জাতিসংঘের ১৯৪ নং প্রস্তাব অনুযায়ী ফিলিস্তিনী শরনার্থীদের বাড়িঘরে দিয়ে আসা ও পূর্নবাসনসহ কোন কিছুই ইসরাইল মানছেনা। এরি পরিপ্রেক্ষিতে বিডিএস ক্যাম্পেইন ২০০৭ সালে রামাল্লায় সম্মেলন করে আর্ন্তজাতিকভাবে ইসরাইলী পন্য বর্জনের ডাক দেয়।
ইসরাইলী পন্য বর্জনে কিভাবে অংশ নেওয়া যায় :
ইসরাইলী যে সব পন্য বর্জন করা উচিত তা হচেছ- বিভিন্ন সুপার স্টোরে বিক্রিকৃত ইসরাইলী টাটকা ফল ও শাক সবজী যেমন-জাফা সিট্রাস ফ্রুটস ও মেডজাল খেজুর, আহাবা কসমেটিক্স, সোডাস্ট্রিম ড্রিংকস মেশিন, এডেন স্প্রিং বোতলজাত পানি, গোলান হাইটস মদজাত দ্রব্য ও ইসরাইলী মদ প্রভূতি।
ক্যাম্পেইন কমিটি বিশেষ করে বৃটিশ মুসলিমসহ পুরো বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেছে যে- সুপার মার্কেট ফ্রুটস ও ভেজিটেবল কেনার আগে লেভেল পড়ুন, ইসরাইল বা ওয়েস্ট ব্যাংকের প্রডাক্ট দেখলে কিনা ঠিক নয়, কারমেল ও জাফা প্রডাক্ট কিনবেন না।
এছাড়াও —-
-অবৈধ ইসরাইলী সেটেলমেন্টের যে কৃষিপন্য ও প্রডাক্ট বৃটেনের বৃহৎ সুপার মার্কেট ’সেইন্সবারী’তে বিক্রি হচেছ তা কেনা বন্ধ করুন। এ বয়কটের জন্য জাতীয় ক্যাম্পেইন হচেছ। সেইন্সবারীতে ওয়েস্ট ব্যাংক থেকে আসা ফ্রেস ফুড বিক্রি হয়। তা কেনা বন্ধ করতে হবে। কসমেটিক কোম্পানী , গার্নিয়ার, তাদের বিউটি প্রডাক্ট এবং সাবান ইসরাইলী মহিলা সৈন্যদের জন্য পাঠাচেছ। তাই গার্নিয়ার ও তাদের প্যারেন্ট কো: ল‘ওরিয়েলের প্রডাক্ট কেনা বন্ধ করুন।
– টেসকো সুপার স্টোর বলেছে যে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে তারা ওয়েস্ট ব্যাংক থেকে আসা প্রডাক্ট বিক্রি বন্ধ করবে।
– ইসরাইল ও পশ্চিম তীর থেকে আসা ফ্রেস ফ্রুট সেইন্সবারী বন্ধ না করলে সেইন্সবারীতে শপিং বন্ধ করতে হবে।
আর্ন্তজাতিক বাধাকে ইসরাইলের বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন :
আর্ন্তজাতিক আদালতে অধিকৃত এলাকায় দেওয়াল নির্মান নিষিদ্ধ করার পরও ইসরাইল বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে নির্মান কাজ অব্যাহত রেখেছে। বিগত ৩৮ বছর ধরে তারা পশ্চিম তীর, গাজা স্ট্রিপ, সিরিয়ান গোলান হাইট, পূর্ব জেরুজালেম, মসজিদে আল আক্বসা তাদের দখলে রেখেছে। ফিলিস্তিনীদের নিজস্ব আবাসভূমিতে ইহুদী বসতি স্থাপনা নির্মান ও বসবাসের ব্যবস্থা করে চলেছে। ১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘের শত শত প্রস্তাবকে তারা বাস্তবায়ন না করে আর্ন্তজাতিক কমিউনিটির প্রতি চ্যালেঞ্জ দিচেছ।
বর্বর ইসরাইলীদের নৃশংসতা থামাতে একমাত্র পন্য বর্জন ও ইসরাইলকে একঘরে করাই হবে বিবেকবান মানবতাবাদী বিশ্ব সম্প্রদায়ের মূল কাজ বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রদান করেছেন।