তিস্তায় পানিপ্রবাহ বেড়েছে। এতে পানির অভাবে অকার্যকর হতে চলা দেশের বৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প আবার সচল হয়ে উঠেছে। সোমবার তিস্তার পানির প্রবাহ মাত্র ৫৬০ কিউসেক থাকলেও মঙ্গলবার তা ৩ হাজার কিউসেক ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে অন্য এক খবরে জানা যায়, তিস্তা চুক্তি নিয়ে সুর নরম করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ যদি তিস্তার ন্যায্য হিস্যা পায়, তাহলে চুক্তিতে তাদের আপত্তি নেই। বিএনপির লংমার্চের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ভারত গজলডোবা বাঁধ খুলে দেয়ায় এ পানি বেড়েছে। এতে মৃতপ্রায় নদীতে প্রাণের সঞ্চার ফিরে এসেছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৩ হাজার ৬ কিউসেক। সূত্র জানায়, ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারে ডালিয়া ব্যারাজের সেচ প্রকল্প পানির অভাবে মরতে বসেছিল। এ সময় সর্বনিম্ন পানির প্রয়োজন ৩ হাজার কিউসেক। পানির অভাবে কৃষকের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছিল। প্রকল্প এলাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে বোরো আবাদ। ধূ-ধূ বালু চরে পরিণত হয় তিস্তা।
গত বছর এপ্রিলে এখানে পানির প্রবাহ ছিল ৩ হাজার ৪০০ কিউসেক। সোমবার পানি ছিল ৫৬০ কিউসেক। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় হঠাৎ করে ভারতের গজলডোবা থেকে পানি আসতে শুরু করে। বেলা ১২টা পর্যন্ত পানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬ কিউসেক। সন্ধ্যায় পানির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে নরম সুর মমতার : তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে কিছুটা সুর নরম করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সম্প্রতি তিস্তাতীরে জলপাইগুড়ি শহরে এক নির্বাচনী জনসভায় মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ যদি তিস্তার ন্যায্য হিস্যা পায়, তাহলে চুক্তিতে তাদের আপত্তি নেই। এর আগে তিস্তা চুক্তির ঘোর বিরোধিতা করে আসছিলেন তিনি। মঙ্গলবার বিবিসি এ খবর জানায়।
মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের পানির প্রয়োজন মিটিয়ে তারপর চুক্তি করা যেতেই পারে। এ সম্পর্কে তৃণমূল নেতা রাজিব ব্যানার্জি জানান, চলতি নির্বাচনের পর হয়তো তিস্তা চুক্তি নিয়ে নতুন করে ভাবা যেতে পারে। তিনি বলেন, রাজ্যের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে পানি দেয়া সম্ভব নয়। তবে এখন যেহেতু নির্বাচন চলছে, আগে নির্বাচন হোক, পরে দেখা যাবে। দিলি্লতে সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এক মাসের মধ্যে ভারতের কেন্দ্রে নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরে নতুন গতি পাবে বলে আশা করছেন ভারতের সাউথ বস্নকের কর্মকর্তারা। অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে কথা রাখেনি ভারত। এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বলেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি আর তিস্তা ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো কথার খেলাপ করেনি ভারত। প্রসঙ্গত ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরকালে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতায় তা আর হয়নি। এরপর থেকে তিস্তা ইস্যুতে কঠোর অবস্থানেই দেখা গেছে মমতাকে। তিনি বারবার দাবি করে আসছিলেন, রাজ্যের (পশ্চিমবঙ্গ) স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তিস্তা চুক্তি সম্ভব নয়। এ ‘সম্ভব নয়’-এর জায়গা থেকে এবার খানিকটা নড়লেন মমতা।