গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত দেশের অন্যতম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর থেকে মুঠোফোনে এমএমএসের মাধ্যমে আসামিকে নির্যাতনের ছবি স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে টাকা আদায়ের খবর প্রকাশিত হওয়ায় প্রশাসনে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
একাধিক কারা সূত্রে জানা যায়, সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের দিয়ে ভাড়া করা সিম নিয়ে কারাগার থেকে তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। যারা এ কাজটি করে থাকেন তারা বন্দীদের নির্যাতন করে তাদের দিয়েই ক্ষতচিহ্নের ছবি মুঠোফোনে এমএমএসের মাধ্যমে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে অর্থ আদায় করেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এমন কিছু তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে হৈচৈ পড়ে গেছে প্রশাসনে। এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্যের সূত্র ধরে তিন জঙ্গি কয়েদিকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা পুরোপুরি আবিষ্কার করা সম্ভব বলেও মনে করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক একাধিক বন্দী মুঠোফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। কারাগার থেকে মুঠোফোনে ছবি পাঠিয়েছেন বন্দীরা। ওই ছবিগুলোতে কয়েদিদের ওপর নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে। গাজীপুর জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বন্দীরা বেশ কিছু নম্বর ব্যবহার করে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন মর্মে গোপন সূত্রের সংবাদ ছিল। ওই সূত্র জানায়, অনুসন্ধান করে কারাগারে ব্যবহৃত বেশ কিছু সিম নম্বর পাওয়া গেছে। ওই সব নম্বর দিয়ে বন্দীরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। ছয়টি নম্বর অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কাশিমপুর নেটওয়ার্ক থেকে ওই সব সিমে বন্দীরা কথা বলেছেন। বন্দীদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ে বন্দীকে নির্যাতন করে তাকে দিয়েই মুঠোফোনে এমএমএসের মাধ্যমে ছবি পাঠানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। কারাগার থেকে বন্দীদের পাঠানো বেশ কিছু ছবি পুলিশের জালে আটকা পড়েছে।
সূত্র জানায়, হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দীদের কাছে সিম ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা করেন এমন পাঁচ কর্মকর্তার নাম পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। আপাতত তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করছেন না তারা। তবে অভিযুক্ত পাঁচ সদস্যের কারা-সিন্ডিকেটের মধ্যে একজন জেলার, দুজন ডেপুটি জেলার ও দুজন জামাদার রয়েছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুঠোফোনে এমএমএসের মাধ্যমে এক বন্দী তার স্ত্রীর কাছে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্নসহ একাধিক ছবি পাঠিয়েছেন। স্ত্রী ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় ওই সব ছবি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। ছবিগুলো পাঠিয়ে কারা-সিন্ডিকেট নির্যাতিত ওই বন্দীর পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইতিপূর্বে কারাগারে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা বন্দীরা নির্যাতনে নিহত হয়েছেন, নাকি সত্যি সত্যি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তা তদন্তের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারাগারের ভেতর থেকে বাইরে স্বজনদের সঙ্গে বন্দীদের মুঠোফোনে কথোপকথন ও ছবি পাঠানোর বিষয় ধরা পড়ার পর তিন জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা অনেকটাই স্পষ্ট হচ্ছে। ফলে কারা-সিন্ডিকেটের মধ্যে কোনো জঙ্গি আছে কি না তাও তদন্তের দাবি উঠতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উচ্চপর্যায়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন বলেন, এমন একটি বিষয়ে তদন্ত চলছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। তবে এটুকু বলা যায়, ভালো সফলতা আছে।