আদালতের এজলাসে বসেই সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। প্রয়োজন মতো মোবাইল ফোনে কথাও বলেন তারা। পুলিশের মোবাইল ফোন দিয়ে সাধারণত তারা কথা বলেন। এর বিনিময়ে আদালতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী আদালতে আসেন না। যে কারণে এসব সন্ত্রাসীরা আদালতে নিজেদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ে সহযোগী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর বৈঠকের এ সুযোগ করে দেয় পুলিশ।
সন্ত্রাসীদের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের কোর্ট হাজত খানার ওসি মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। তবে সন্ত্রাসীরা আদালতে এসে মোবাইলে কথা বলে থাকেন এ খবর আমি পেয়েছি। এখন থেকে কোনো সন্ত্রাসী যাতে মোবাইলে কথা বলতে না পারে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বৈঠক করতে না পারে তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান, ২১ জানুয়ারি কোতয়ালী থানায় দায়ের করা ব্যবসায়ী কামাল হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে আসেন কিলার আব্বাস। সেদিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। রাষ্ট্রপক্ষে সময়ের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে মার্চ মাসের ২৯ তারিখ নতুন তারিখ রাখেন আদালত।
ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাসে বসে শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ১৫ জন সন্ত্রাসীর সঙ্গে এজলাসে বসেই তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকের ফাঁকে ফাঁকে কিলার আব্বাস মোবাইল ফোনে কথাও বলতে থাকেন। অথচ এজলাসের খাসকামরায় বিচারক তার কাজ করছেন। পেশকার সাইদুর তার চেয়ারে বসে কাজ করছেন। পুলিশ এজলাসের মধ্যে কিলার আব্বাসদের পাহারা দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকার মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে এ খবর কেউ দেয়নি। কিলার আব্বাস আদালতের এজলাস কক্ষে মোবাইলে কথা বলার বিষয়টি তদন্ত করা হবে। সেদিন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চিহিৃত করব। যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, তবে দায়িত্বে অবহেলা করা পুলিশ কর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
একইভাবে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঢাকার বিশেষ জজ-২ আদালতে হাজিরা দেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম। সেদিন তার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্য দিতে আসেনি। বিচারক এজলাস থেকে নামার পর সুইডেন আসলাম তার কথিত স্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুইডেন আসলাম তার কথিত স্ত্রীর সঙ্গে আদালতে বসেই একান্তে সময় পার করেন। আদালতের পুলিশ, পেশকার, উমেদার, জমাদাররা এ সুযোগ করে দিয়ে এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
আইনজীবীরা জানান, আদালত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পিকনিক স্পট। আদালতে এসে ফুরফুরে মেজাজে থাকেন তারা। মোবাইলে কথা বলা, কথিত স্ত্রী ও বান্ধবীদের সঙ্গে প্রেমালাপ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ে বৈঠক, সিগারেটসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য পান। সর্বোপরি তাদের বিরুদ্ধে যাতে কোনো সাক্ষী আদালতে না আসে এর জন্য সাক্ষীদের হত্যার হুমকি দেওয়া।
আদালতের এজলাস কক্ষে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ উদযাপনেরও রেকর্ড রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের এজলাসে বসে ভালবাসা দিবস উদযাপন করেন।
এছাড়া একাধিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী টিটন কামাল পাশা, ফ্রিডম সোহেল, ফ্রিডম রাশু, আরমান ও লম্বু সেলিম আদালতে এসে মোবাইলে কথা বলে থাকেন।
London Bangla A Force for the community…
