প্রথম দফা উপজেলা নির্বাচনে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও হাটহাজারী উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দুই উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে।
চেয়ারম্যান পদ তো দূরের কথা দুই উপজেলার কোনটিতেই ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থক কেউ জয়ী হতে পারেনি। চট্টগ্রামের দুটি উপজেলাতে আওয়ামী লীগের চরম ভরাডুবি ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় ভোটাররা। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলেছেন, দুই উপজেলাতেই দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে ভরাডুবি হয়েছে আওয়ামী লীগের।
গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সংসদীয় আসন মিরসরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নুরুল আমিন (আনারস) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ৫৬ হাজার ১৭৯। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গতবারের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন পেয়েছেন ৪২ হাজার ৯৫৩ ভোট।
এই উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই আসতে পারেনি। একই ঘটনা ঘটেছে অপর উপজেলা হাটহাজারীতে। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহাবুবুল আলম চৌধুরী (কাপ পিরিচ)। তিনি ৫৭ হাজার ১৪৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থক ২ নম্বর ধলই ইউপি চেয়ারম্যান আবুল মনছুরের (ঘোড়া) প্রাপ্ত ভোট ২০ হাজার ৭৯৮।
হাটহাজারীতে ভাইস চেয়ানম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সমর্থক (ইসলামী সমমনা দল) প্রার্থী নাছির উদ্দিন মুনির (বৈদ্যুতিক বাল্ব)। তার প্রাপ্ত ভোট ৫৪ হাজার ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আকতার হোসেন (তালা) পেয়েছেন ১৮ হাজার ৬০১ ভোট। এখানে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত ইসলামী সমর্থিত প্রার্থী ডা. মনোয়ারা বেগম (কলসী) প্রতীক নিয়ে ৪৯ হাজার ২৫৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সৈয়দা সাহেদা সুলতানার প্রাপ্ত ভোট ২০ হাজার ৪৫৮।
হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এসব প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. ইসমাইল (মোটরসাইকেল) প্রতীকে ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৩ হাজার ৬৭৯ ভোট।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন মূলত দলীয় কোন্দলে একাধিক প্রার্থী হওয়ার কারণে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং মিরসরাই উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন দুজন। এদের মধ্যে মূল মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান ২৪ হাজার ৭৬০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন। মিরসরাই সংসদীয় আসনের সাংসদ ও গণপূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন।
শেষ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন ভোটের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বুধবার ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর তিনি নিজ দলের গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে পদত্যাগ দাবি করেন এবং ২০টি কেন্দ্রে পুনঃ ভোট গ্রহণের দাবি জানান।