বাংলাদেশে সাংবাদিকতার নামে কী হচ্ছে তার একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে আল কায়দা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির কথিত ভিডিও বার্তাটি। আলোচিত ওই বার্তাটি আদৌ আল কায়দা বা জাওয়াহিরির কিনা তা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠলেও বাংলাদেশের প্রায় সব গণমাধ্যমেই এ নিয়ে রীতিমত ‘তোলপাড়’ চলছে।
বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে যেন ভিডিওটি গতকালই পোস্ট করা হয়েছে এবং এটি নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই।
তবে প্রকৃত ঘটনা ঠিক এর বিপরীত।
প্রথমত, এটা আল কায়দা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির ভিডিও হলে পশ্চিমা দুনিয়ায় ঝড় সৃষ্টি হতো। আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের অনেক গোয়েন্দা ও বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছেম যারা এই আন্তর্জাতিক উগ্র সংগঠনটির গতিবিধির ওপর কড়া নজর রাখে, প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে।
আল কায়দা প্রধান কোনো বিবৃতি দিলে নানা পন্থায় সেটার সত্যাসত্য যাচাই করা হয় ত্বরিতগতিতে এবং পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। হোক তা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যাপারে কিংবা আরব জাহানের কোনো ইস্যুতে। এক্ষেত্রে এতো দীর্ঘ একটি বিবৃতি নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়া কোনো খবরই পেল না, আর সব জেনে ফেলল বাংলাদেশের সাংবাদিকরা!
কে না জানে আল কায়দার একটি হুমকিতে এখনও কেঁপে ওঠে পুরো পশ্চিমা দুনিয়া।
দ্বিতীয়ত, এটি যদি আল কায়দা প্রধানের বিবৃতি হয়ে থাকেও (তর্কের খাতিরে সত্য ধরে নিলে), সেটি নতুন কোনো বিষয় নয়। গত নভেম্বরে এটি আপলোড করা হয় বলে খবরে বলা হয়েছে। তাহলে এতোদিন পর এটা নিয়ে মাতামাতির কী কারণ থাকতে পারে?
আল কায়দা যদি বাংলাদেশের মুসলমানদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের ডাক দিয়েই থাকে, সেটা কী তারা গোপনে করবে। কোনো হামলা চালালে সেটা হয়তো গোপন রাখা হতে পারে।
জনগণের উদ্দেশ্যে দেয়া কোনো বিবৃতি তো গোপন রাখার কথা নয়। আর আল কায়দা যদি চায় যে তার কোনো বিবৃতি প্রচারিত হোক তবে সেই ব্যবস্থা নিশ্চয়ই তাদের আছে। আল কায়দার বিবৃতি প্রচারের জন্য বিশ্বের সব গণমাধ্যম তো মুখিয়ে থাকে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, জাওয়াহিরির এই ভিডিও বার্তাটির খবরটি নতুন নয়। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদপত্র ‘পরিবর্তন ডটকম’ এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে (পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি প্রতিবেদনের শেষে তুলে ধরা হয়েছে)। তাদের শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশকে আল কায়দার হুঁশিয়ারি’।
সেদিন সেই সংবাদটি এই প্রতিবেদকসহ অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে এর সত্যাসত্য নিয়ে নিশ্চিত হতে না পারায় সেই সংবাদটি প্রকাশ করা হয়নি।
সেই বাসি সংবাদটিই রোববার ও সোমবার বাংলাদেশের প্রায় সব গণমাধ্যমেই শীর্ষ সংবাদ বা লিড নিউজ হিসেবে প্রচার করে। কোনো কোনো সংবাদপত্র এর ফলোআপ সংবাদকেও লিড নিউজ হিসেবে প্রচার করছে।
ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সমকাল, জনকণ্ঠ, সকালের খবর, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ আওয়ামীপন্থী পত্রিকারগুলোর ১৬ ফেব্রুয়ারির সংখ্যার প্রধান সংবাদ শিরোনাম ছিল আল কায়দার কথিত সেই বিবৃতি।
এর মধ্যে ডেইলি স্টার আবার দাবি করে বসে যে, গত ১৪ জানুয়ারি ভিডিওটি পোস্ট করা হয় এবং গতকাল (১৫ ফেব্রুয়ারি) সেটি গণমাধ্যমের নজরে আসে।
ডেইলি স্টারের সহযোগী প্রকাশনা প্রথম আলো আবার বলেছে ভিন্ন কথা। তাদের খবরে বলা হয়, ‘আল কায়দার প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত আস-সাহাব ফাউন্ডেশন গত নভেম্বরে বার্তাটি তৈরি করেছে।’
বাদ যায়নি বিবিসিও। বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেও এ সংক্রান্ত কোনো খবর না থাকলেও বাংলা সার্ভিসে ঠিকই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে খবরটি প্রচার করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বক্তব্যও নেয়া হয়।
এভাবে মনগড়া তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের মানুষকে আল কায়দা ‘ভয়’ দেখায়।
প্রশ্ন উঠেছে, গণমাধ্যমগুলোর এই মতলবি প্রতিবেদন প্রকাশের কারণ কী?
অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীকে আল কায়দার সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশের কিছু আওয়ামী ও ভারতপন্থী গণমাধ্যম জন্মলগ্ন থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য পশ্চিমা বিশ্বের কৃপাদৃষ্টির জন্য তাদের চেষ্টা বিরামহীন। কিন্তু এতে তারা খুব একটা সফল হতে পারেনি।
এর মধ্যে ঘটে গেছে কিছু অভিনব ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সেক্যুলার এবং ইসলামী রাজনীতির ঘোর বিরোধী আওয়ামী লীগকে মিত্র মনে করে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কিন্তু গত বছর দুয়েকের মধ্যে সেই সম্পর্কে চরম টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। কার্যত পশ্চিমা দুনিয়া এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেছে।
এ অবস্থায় পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা আল কায়দার ধোঁয়া তুললে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কৃপাদৃষ্টি মিলতে পারে মনে করছে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমমনা গণমাধ্যমগুলো।
এ কারণে একটা উড়ো ভিডিও নিয়ে কথিত তোলপাড় মার্কা শিরোনামে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। অবস্থা কান চিলে নেয়ার মতোই।
পরিবর্তন ডটকমের সেই প্রতিবেদন
এবার আসুন দেখিন পরিবর্তন ডটকমে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদেনে কী ছিল। আগেই বলা হয়েছ যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে। সংবাদটি পোস্ট করা হয় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে।
শিরোনামসহ প্রতিবেদনটি হুবহু প্রকাশ করা হলো :
বাংলাদেশকে আল কায়দার হুঁশিয়ারি
২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৬:২০
বাংলাদেশে প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি। তিনি অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে ওলামাদের শহীদ করা হচ্ছে। তাদের কারাগারে বন্দি করা হচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে হাজার হাজার সাধারণ মুসলমানকেও শহীদ করা হচ্ছে। সেখানকার সরকার প্রকাশ্যে নবী করিম (স.)-কে উপহাসকারী ইসলামবিরোধীদের সাহায্য করছে।
চলতি মাসের ৮ ডিসেম্বর ইউটিউবে প্রকাশিত এক অডিওবার্তায় এ হুঁশিয়ারি দেন জাওয়াহিরি। অডিওবার্তায় এশিয়ার, বিশেষ করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মুসলামানদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে বক্তব্য দেন জাওয়াহিরি।
ইউটিউবে ‘ইসলামের আলো’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে জাওয়াহিরির এই অডিওবার্তাটি প্রকাশ করা হয়েছে। অ্যাকাউন্টটি তাদের সম্পর্কে লিখেছে ‘ইসলামি দাওয়াহ ও শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা’।
২০১১-এর ১ আগস্ট ইউটিউবে যুক্ত হয় ইসলামের আলো। আরবি ভাষায় দেয়া জাওয়াহিরির বক্তব্যটি ইসলামের আলোর পক্ষ থেকে বাংলা ভাষায় ডাবিং করে অডিও রেকর্ড আকারে প্রচার করা হয়।
জাওয়াহিরির বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো
আমি আমার বক্তব্য শেষ করার পূর্বে এশিয়ার মুসলমানদের এমন দুটি মর্মান্তিক ঘটনা তুলে ধরতে চাই যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে একটি ঘটনা মিয়ানমারের মুসলমানদের ওপর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সেখানকার বর্বর বৌদ্ধ পশুরা মিয়ানমারের মুসলমানদের শরীরের রক্ত প্রবাহিত করেছে। এমনকি তাদের শরীরকে টুকরো টুকরো করেছে। যাদের সম্পর্কে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ গোটা বিশ্ব নীরবতা অবলম্বন করেছে।
পক্ষান্তরে তারা মিয়ানমারকে গণতন্ত্রের নামে এই জঘন্য কার্যকলাপের জন্য নানা সম্মানে সম্মানিত করেছে। সেই গণতন্ত্র যা মুসলমানদের মৃতদেহ ও হাড়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
আর দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে চলেছে বাংলাদেশের মাটিতে। সেখানে প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। সেখানকার ওলামাদের শহীদ করা হচ্ছে। তাদের কারাগারে বন্দি করা হচ্ছে। এবং তাদের সঙ্গে হাজার হাজার সাধারণ মুসলমানকেও শহীদ করা হচ্ছে। সেখানকার সরকার প্রকাশ্যে নবী করিম (সা.)-কে উপহাসকারী ইসলামবিরোধীদের সাহায্য করছে।
আমি এসব মুসলমানসহ পৃথিবীর বুকে সকল নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার মুসলমানদের বলতে চাই, আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহর আদেশে আফগানিস্তানে আমেরিকার পরাজয় এবং নতুন করে ইসলামি ইমারতের প্রতিষ্ঠা অতি সন্নিকটে। আপনারাসহ পৃথিবীর প্রতিটি নির্যাতিত মুসলিম ও অমুসলিম সব মানুষের জন্যই এটা সুসংবাদ। তাই আপনারা দ্বীনের ওপর অটল থাকুন। এবং নবী (সা.)-এর সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে আঁঁকড়ে ধরুন। পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হোন। এবং মতানৈক্য পরিত্যাগ করুন। আপনারা পিছু হটবেন না। দুর্বল হবেন না।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে, তোমরা বেহেশত প্রবেশ করেই ফেলবে অথচ তোমাদের অবস্থা এখনো তাদের মতো হয়নি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল। এবং তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। এমনকি রাসুল ও তার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ বলেছিলেন কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে। সতর্ক হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।’
অতএব ধৈর্য ধারণ করুন, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।
তবে প্রকৃত ঘটনা ঠিক এর বিপরীত।
প্রথমত, এটা আল কায়দা প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরির ভিডিও হলে পশ্চিমা দুনিয়ায় ঝড় সৃষ্টি হতো। আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের অনেক গোয়েন্দা ও বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছেম যারা এই আন্তর্জাতিক উগ্র সংগঠনটির গতিবিধির ওপর কড়া নজর রাখে, প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে।
আল কায়দা প্রধান কোনো বিবৃতি দিলে নানা পন্থায় সেটার সত্যাসত্য যাচাই করা হয় ত্বরিতগতিতে এবং পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। হোক তা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যাপারে কিংবা আরব জাহানের কোনো ইস্যুতে। এক্ষেত্রে এতো দীর্ঘ একটি বিবৃতি নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়া কোনো খবরই পেল না, আর সব জেনে ফেলল বাংলাদেশের সাংবাদিকরা!
কে না জানে আল কায়দার একটি হুমকিতে এখনও কেঁপে ওঠে পুরো পশ্চিমা দুনিয়া।
দ্বিতীয়ত, এটি যদি আল কায়দা প্রধানের বিবৃতি হয়ে থাকেও (তর্কের খাতিরে সত্য ধরে নিলে), সেটি নতুন কোনো বিষয় নয়। গত নভেম্বরে এটি আপলোড করা হয় বলে খবরে বলা হয়েছে। তাহলে এতোদিন পর এটা নিয়ে মাতামাতির কী কারণ থাকতে পারে?
আল কায়দা যদি বাংলাদেশের মুসলমানদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের ডাক দিয়েই থাকে, সেটা কী তারা গোপনে করবে। কোনো হামলা চালালে সেটা হয়তো গোপন রাখা হতে পারে।
জনগণের উদ্দেশ্যে দেয়া কোনো বিবৃতি তো গোপন রাখার কথা নয়। আর আল কায়দা যদি চায় যে তার কোনো বিবৃতি প্রচারিত হোক তবে সেই ব্যবস্থা নিশ্চয়ই তাদের আছে। আল কায়দার বিবৃতি প্রচারের জন্য বিশ্বের সব গণমাধ্যম তো মুখিয়ে থাকে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, জাওয়াহিরির এই ভিডিও বার্তাটির খবরটি নতুন নয়। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদপত্র ‘পরিবর্তন ডটকম’ এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে (পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি প্রতিবেদনের শেষে তুলে ধরা হয়েছে)। তাদের শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশকে আল কায়দার হুঁশিয়ারি’।
সেদিন সেই সংবাদটি এই প্রতিবেদকসহ অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে এর সত্যাসত্য নিয়ে নিশ্চিত হতে না পারায় সেই সংবাদটি প্রকাশ করা হয়নি।
সেই বাসি সংবাদটিই রোববার ও সোমবার বাংলাদেশের প্রায় সব গণমাধ্যমেই শীর্ষ সংবাদ বা লিড নিউজ হিসেবে প্রচার করে। কোনো কোনো সংবাদপত্র এর ফলোআপ সংবাদকেও লিড নিউজ হিসেবে প্রচার করছে।
ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সমকাল, জনকণ্ঠ, সকালের খবর, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ আওয়ামীপন্থী পত্রিকারগুলোর ১৬ ফেব্রুয়ারির সংখ্যার প্রধান সংবাদ শিরোনাম ছিল আল কায়দার কথিত সেই বিবৃতি।
এর মধ্যে ডেইলি স্টার আবার দাবি করে বসে যে, গত ১৪ জানুয়ারি ভিডিওটি পোস্ট করা হয় এবং গতকাল (১৫ ফেব্রুয়ারি) সেটি গণমাধ্যমের নজরে আসে।
ডেইলি স্টারের সহযোগী প্রকাশনা প্রথম আলো আবার বলেছে ভিন্ন কথা। তাদের খবরে বলা হয়, ‘আল কায়দার প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত আস-সাহাব ফাউন্ডেশন গত নভেম্বরে বার্তাটি তৈরি করেছে।’
বাদ যায়নি বিবিসিও। বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেও এ সংক্রান্ত কোনো খবর না থাকলেও বাংলা সার্ভিসে ঠিকই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে খবরটি প্রচার করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বক্তব্যও নেয়া হয়।
এভাবে মনগড়া তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের মানুষকে আল কায়দা ‘ভয়’ দেখায়।
প্রশ্ন উঠেছে, গণমাধ্যমগুলোর এই মতলবি প্রতিবেদন প্রকাশের কারণ কী?
অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীকে আল কায়দার সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশের কিছু আওয়ামী ও ভারতপন্থী গণমাধ্যম জন্মলগ্ন থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য পশ্চিমা বিশ্বের কৃপাদৃষ্টির জন্য তাদের চেষ্টা বিরামহীন। কিন্তু এতে তারা খুব একটা সফল হতে পারেনি।
এর মধ্যে ঘটে গেছে কিছু অভিনব ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সেক্যুলার এবং ইসলামী রাজনীতির ঘোর বিরোধী আওয়ামী লীগকে মিত্র মনে করে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কিন্তু গত বছর দুয়েকের মধ্যে সেই সম্পর্কে চরম টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। কার্যত পশ্চিমা দুনিয়া এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেছে।
এ অবস্থায় পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা আল কায়দার ধোঁয়া তুললে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কৃপাদৃষ্টি মিলতে পারে মনে করছে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমমনা গণমাধ্যমগুলো।
এ কারণে একটা উড়ো ভিডিও নিয়ে কথিত তোলপাড় মার্কা শিরোনামে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। অবস্থা কান চিলে নেয়ার মতোই।
পরিবর্তন ডটকমের সেই প্রতিবেদন
এবার আসুন দেখিন পরিবর্তন ডটকমে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদেনে কী ছিল। আগেই বলা হয়েছ যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে। সংবাদটি পোস্ট করা হয় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে।
শিরোনামসহ প্রতিবেদনটি হুবহু প্রকাশ করা হলো :
বাংলাদেশকে আল কায়দার হুঁশিয়ারি
২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৬:২০
বাংলাদেশে প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি। তিনি অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশে ওলামাদের শহীদ করা হচ্ছে। তাদের কারাগারে বন্দি করা হচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে হাজার হাজার সাধারণ মুসলমানকেও শহীদ করা হচ্ছে। সেখানকার সরকার প্রকাশ্যে নবী করিম (স.)-কে উপহাসকারী ইসলামবিরোধীদের সাহায্য করছে।
চলতি মাসের ৮ ডিসেম্বর ইউটিউবে প্রকাশিত এক অডিওবার্তায় এ হুঁশিয়ারি দেন জাওয়াহিরি। অডিওবার্তায় এশিয়ার, বিশেষ করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মুসলামানদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে বক্তব্য দেন জাওয়াহিরি।
ইউটিউবে ‘ইসলামের আলো’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে জাওয়াহিরির এই অডিওবার্তাটি প্রকাশ করা হয়েছে। অ্যাকাউন্টটি তাদের সম্পর্কে লিখেছে ‘ইসলামি দাওয়াহ ও শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা’।
২০১১-এর ১ আগস্ট ইউটিউবে যুক্ত হয় ইসলামের আলো। আরবি ভাষায় দেয়া জাওয়াহিরির বক্তব্যটি ইসলামের আলোর পক্ষ থেকে বাংলা ভাষায় ডাবিং করে অডিও রেকর্ড আকারে প্রচার করা হয়।
জাওয়াহিরির বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো
আমি আমার বক্তব্য শেষ করার পূর্বে এশিয়ার মুসলমানদের এমন দুটি মর্মান্তিক ঘটনা তুলে ধরতে চাই যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে একটি ঘটনা মিয়ানমারের মুসলমানদের ওপর দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সেখানকার বর্বর বৌদ্ধ পশুরা মিয়ানমারের মুসলমানদের শরীরের রক্ত প্রবাহিত করেছে। এমনকি তাদের শরীরকে টুকরো টুকরো করেছে। যাদের সম্পর্কে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ গোটা বিশ্ব নীরবতা অবলম্বন করেছে।
পক্ষান্তরে তারা মিয়ানমারকে গণতন্ত্রের নামে এই জঘন্য কার্যকলাপের জন্য নানা সম্মানে সম্মানিত করেছে। সেই গণতন্ত্র যা মুসলমানদের মৃতদেহ ও হাড়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
আর দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে চলেছে বাংলাদেশের মাটিতে। সেখানে প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। সেখানকার ওলামাদের শহীদ করা হচ্ছে। তাদের কারাগারে বন্দি করা হচ্ছে। এবং তাদের সঙ্গে হাজার হাজার সাধারণ মুসলমানকেও শহীদ করা হচ্ছে। সেখানকার সরকার প্রকাশ্যে নবী করিম (সা.)-কে উপহাসকারী ইসলামবিরোধীদের সাহায্য করছে।
আমি এসব মুসলমানসহ পৃথিবীর বুকে সকল নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার মুসলমানদের বলতে চাই, আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহর আদেশে আফগানিস্তানে আমেরিকার পরাজয় এবং নতুন করে ইসলামি ইমারতের প্রতিষ্ঠা অতি সন্নিকটে। আপনারাসহ পৃথিবীর প্রতিটি নির্যাতিত মুসলিম ও অমুসলিম সব মানুষের জন্যই এটা সুসংবাদ। তাই আপনারা দ্বীনের ওপর অটল থাকুন। এবং নবী (সা.)-এর সুন্নতকে দৃঢ়ভাবে আঁঁকড়ে ধরুন। পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হোন। এবং মতানৈক্য পরিত্যাগ করুন। আপনারা পিছু হটবেন না। দুর্বল হবেন না।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে, তোমরা বেহেশত প্রবেশ করেই ফেলবে অথচ তোমাদের অবস্থা এখনো তাদের মতো হয়নি, যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে। তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল। এবং তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল। এমনকি রাসুল ও তার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ বলেছিলেন কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে। সতর্ক হও। নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।’
অতএব ধৈর্য ধারণ করুন, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।
উৎসঃ amardesh