আফগান মাটি ব্যবহার করে তেহরিকে তালেবানকে পাকিস্তানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আফগানিস্তানের সশস্ত্র রাজনৈতিক দল তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ। শনিবার রাতে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের এক অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমাদের মূলনীতি হচ্ছে, অন্য দেশের শান্তিতে বিঘ্নতা সৃষ্টির জন্য আমরা কাউকে আমাদের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেবো না।’
তালেবান মুখপাত্র বলেন, তেহরিকে তালেবান পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আফগানিস্তানের নয়। পাকিস্তানকেই তেহরিকে তালেবানের সমস্যা সমাধান করতে হবে। পাকিস্তানের আলেমদেরকেই এই সমস্যার সমাধানে অগ্রসর হতে হবে। এতে তালেবানের দায়দায়িত্ব নেই।
আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানের পর প্রতিবেশী পাকিস্তানে দলটির বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি হয়। পরবর্তীতে এই সমর্থকদের মধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন এক গোষ্ঠী ‘তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান’ (টিটিপি) গঠন করে। পশতুন অধ্যুষিত অঞ্চলকে ভিত্তি করে পুরো পাকিস্তানে সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে আসছে উগ্রবাদী এই সংগঠনটি। ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, ভারতের সমর্থনপুষ্ট হয়ে সংগঠনটি পাকিস্তানে সন্ত্রাস ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে কাজ করছে।
তালেবানবিরোধী পাঞ্জশিরভিত্তিক বিদ্রোহের প্রসঙ্গে মুজাহিদ বলেন, পারস্পারিক বিরোধের সমাধানে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, ‘তালেবান নেতৃত্ব ৬০ শতাংশ নিশ্চিত, আলোচনার মাধ্যমেই এই বিষয়ের সমাধান হবে।’
মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমত সকল সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি। আমরা আলেম ও সাবেক জিহাদের নেতাদের সাথে পরামর্শ করছি এবং নিয়মিতইভাবেই বার্তা আদান-প্রদান করছি।’
তিনি আশা করেন, অন্য সব প্রদেশের মতোই কোনো যুদ্ধ ছাড়া পাঞ্জশিরের নিয়ন্ত্রণ নেবে তালেবান।
জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি কোনো শক্তি প্রয়োগ ছাড়াই আমরা পাঞ্জশিরকে কাবুলের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো।’
আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠনের প্রসঙ্গে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘প্রথমত কাবুলে প্রবেশ ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণই ছিলো অপ্রত্যাশিত। সরকার গঠনের জন্য আমরা বিস্তৃত আলোচনার আশা করছি, যাতে শক্তিশালী এক সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’
মুজাহিদ বলেন, তালেবান ‘যুদ্ধ শেষ করার’ প্রত্যাশা করছে এবং আফগানিস্তানে এমন এক নতুন ব্যবস্থা তৈরির চিন্তা করছে যাতে ‘জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী সকলের অংশগ্রহণ থাকবে।’
সরকার গঠনে কাজ কিছু অগ্রসর হলেও এখনো বিপুল কাজ বাকি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার জেরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় আফগানিস্তানের তৎকালীন তালেবান সরকার পিছু হটে।
তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলে দেশটিতে।
দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দেশটি থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় ওয়াশিংটন। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।
চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্যে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাতে শুরু করে তালেবান। মে থেকে অভিযান শুরুর পর সাড়ে তিন মাসের মাথায় ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলের অধিকার নেয় তালেবান যোদ্ধারা।
সূত্র : জিও নিউজ