ব্রেকিং নিউজ
Home / বাংলাদেশ / পার্থ গোপালকে জামিন দেওয়ায় ক্ষমা চাইলেন বিশেষ জজ

পার্থ গোপালকে জামিন দেওয়ায় ক্ষমা চাইলেন বিশেষ জজ

 

 

দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলায় সাময়িক বরখাস্ত কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেওয়ার ঘটনায় ভুল স্বীকার করে হাইকোর্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ইকবাল হোসেন। তিনি এ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতেও আবেদন করেছেন হাইকোর্টের কাছে। গত বৃহস্পতিবার বিচারক ইকবাল হোসেন হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চের কাছে এই ব্যাখ্যা দাখিল করেন। এ বিষয়ে আগামী ২৬ আগস্ট বেলা ২টায় শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। লিখিত ব্যাখ্যায় বিচারক বলেছেন, ফৌজদারি আপিল নং (১০৫৩৪/১৯) মামলায় গত বছরের ২ নভেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশে পার্থ গোপাল বণিকের মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্নের জন্য জজ ইকবাল হোসেনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আদেশ যথাসময়ে না পৌঁছানোয় ছয় মাসের সময়সীমা অতিক্রম হয়েছে বলে আসামির আইনজীবী বিশেষ আদালতকে জানায়। এ ছাড়া ফৌজদারি রিভিশন মামলা নং ১৪৫/২১ মামলায় গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট অপর এক আদেশে মামলাটির বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়। গত ১০ মার্চ এই আদেশের অনুলিপি পান। এই আদেশে উল্লিখিত সময়সীমার মেয়াদ এখনো রয়েছে। বিশেষ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন ব্যাখ্যায় বলেছেন, তিনি হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালনে সদাসচেষ্ট রয়েছেন।
এর আগে হাইকোর্টে দুবার পার্থ গোপাল বণিকের আবেদন খারিজ হয়। ওই সময়ে হাইকোর্ট পৃথক আদেশে প্রথমে ৬ মাসের মধ্যে ও পরে এক বছরের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের পরও নির্ধারিত সময়ে মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। এ অবস্থায় পার্থ গোপাল বণিক গত ১৯ জুন জামিন পান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন আদেশ নিয়ে তার পরদিনই তিনি জেল থেকে বের হন।
তড়িঘড়ি করে পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেওয়ার ও কারামুক্তির বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। এ ছাড়া তার জামিন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। আদালত এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে গত ২৮ জুন হাইকোর্ট বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে কোন যুক্তিতে ওই বিচারক পার্থ গোপালকে জামিন দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা চান। এ ছাড়া এ জামিনের বিষয়ে চ্যানেল-২৪-এ প্রচারিত প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি পার্থ গোপাল বণিকের জামিনের বিরুদ্ধে দুদকের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী ব্যাখ্যা দাখিল করেন বিচারক।
২০১৯ সালের ২৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুদকের সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পার্থ গোপাল বণিককে। ঘুষ ও দুর্নীতির কয়েক লাখ নগদ টাকা তার বাসায় রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে এদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পার্থ গোপাল বণিককে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
গত বছরের ২৪ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পার্থের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এতে মোট ১৪ জনকে সাক্ষী করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, পার্থ গোপাল বণিকের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮০ লাখ টাকার কোনো বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। অর্থাৎ তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৮০ লাখ টাকা উপার্জন করে পাচারের উদ্দেশ্যে বাসায় লুকিয়ে রেখেছেন বলে প্রমাণিত হয়।
এতে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালে তিনি ৩১ হাজার ২৫০ টাকা বেতন স্কেলে কারা উপ-মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তার এই বেতন স্কেলের সঙ্গে এত টাকা অর্থ উপার্জন অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি তার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তা উত্তোলন করেননি বা তিনি কখনো এই অর্থ আয়কর বিবরণীতেও প্রদর্শন করেননি, যা দ-বিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গত বছরের ৪ নভেম্বর পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এরপর ১৫ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।