ব্রেকিং নিউজ
Home / প্রচ্ছদ / “বাংলাদেশ এখন প্যারালাইসড সিচুয়াশনে” -একান্ত সাক্ষাৎকারে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বৃটিশ আইনজীবি টবি কেডম্যান

“বাংলাদেশ এখন প্যারালাইসড সিচুয়াশনে” -একান্ত সাক্ষাৎকারে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বৃটিশ আইনজীবি টবি কেডম্যান

imageইব্রাহিম খলিল যুক্তরাজ্য (লন্ডন) থেকে : টবি এম কেডম্যান। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাসবাদ ও মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনজীবি। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচারের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে দেশে তার নাম আলোচিত হতে থাকে। সবচেয়ে বেশী আলোচনায় আসতে থাকে যখন ঢাকায় জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর (তৎকালীন) থেকে সরকার তাকে ফিরিয়ে দেয়। এর পর থেকে নানা সময় মিডিয়ার বদৌলতে তার বক্তব্য বিবৃতি আসতে থাকে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে। গত ৭ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার বাংলাদেশ বিষয়ে লন্ডনে তার নিজ চেম্বারে আয়োজন করেন সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনের এক ফাকে কথা বলেন ঐ প্রতিবেদকের সাথে।

বাংলাদেশ সরকার যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে একের পর এক রায় ও সাজা কার্যকর করছে, তখন একই অভিযোগে অর্থাৎ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে খোদ বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করেছেন যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ একদল বৃটিশ আইনজীবি। এসকল আইনজীবিদের সমন্বয় করছেন টবি কেডম্যান। জুডিশিয়াল কিলিং, গনহত্যা, মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্ব, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর বিষয়গুলো তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে দাখিল করেছেন। সম্প্রতি বহুল আলোচিত সিরিয়ায় গনহত্যার দায়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে আন্তর্জাতিক কাঠগড়ায় দাড় করাতে একটি মামলা তিনি পরিচালনা করে যাচেছন। এছাড়াও বসনিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড. গানিককে লন্ডনে গ্রেফতারের পর তিনি মামলাটি সফলতার সাথে পরিচালনা করেন। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে নানা মামলায় লড়াই করে যাচেছন বৃটেনের এই ব্যারিস্টার। মামলা পরিচালনায় অতীতে সফলতার অনেক ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে তার। বাংলাদেশ বিষয়ে টবি কেডম্যানের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, তিনি বাংলাদেশ নিয়ে খুব স্টাডি করেন। দেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে দারুন আপডেট টবি। তবে টবি কেন বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলেন ? কিংবা তাকে কি বাংলাদেশের কোন গোষ্ঠি সহযোগিতা করছে এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি উত্তর “বাংলাদেশ এখন প্যারালাইসড সিচুয়াশনে উপনীত হয়েছে। দেশে মানবাধিকার বলে কিছু নেই। পুলিশের অস্ত্র আর ক্ষমতাসীনদের কাছে সবকিছুই জিম্মি হয়ে আছে। বাংলাদেশের মতো একটি সম্ভাবনাময় রাস্ট্রে এমন অবস্থা যতই দীর্ঘস্থায়ী হবে ততই অমঙ্গল দেশের শান্তিকামী মানুষের জন্য। আমরা মনবতার জন্য কাজ করি । তাই সেই দায়িত্ববোধ থেকেই এই মামলা করেছি।”

টবি বলেন , যদিও বাংলাদেশের মানুষ মনে করতে পারে আমি জামায়াতে ইসলামীর জন্য আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুানালের মামলায় সহযোগিতা করছি। কিন্তু পরিস্কারভাবে বলতে চাই এ মামলার সাথে কারো কোন সম্পৃক্ততা নেই। এই মামলায় লড়তে আমার সাথে আছেন যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশ্বখ্যাত একদল আইনজীবি। আমাদের টিমে রয়েছেন খ্যাতনামা মানবাধিকার ও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক আইনজীবি স্টিফেন কে কিউসী, জন কেমী, ম্যারিজা বারকোবিস ও লিনার্ট পোলসেনের মতো মেধাবীরা। আমরা এই মামলায় যতেস্ট তথ্য-উপাত্ত দাখিল করেছি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমানে সাধারন মানুষকে হত্যা করা হচেছ ও রাজনৈতিক নিপিড়ন চলছে তার জন্য একদিন আন্তর্জাতিক কাঠগড়ায় দাড়াতেই হবে বর্তমান শাসকদের।

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অতীতে আরো অনেক মামলা ও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতে। কিন্তু তাতে কোন কার্যকর ফলাফল এখনো দেখা যায়নি। আপনাদের মামলায়ও কি তেমনি ? এমন প্রশ্নের জবাবে টবির দৃর উত্তর “বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অতীতে কে বা কারা করেছে সেটা দেখা ও ফলাফল মূল্যায়ন করার সময় আমাদের নেই। তবে আমাদের মামলার ফলাফল কি দাড়াবে তা সময়ই বলে দেবে।”

কোন কোন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে টবি কেডম্যান “জুডিশিয়াল কিলিং, গনহত্যা, মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্ব, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্গনের মতো গুরুতর বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দাখিল করা হয়েছে । মিডিয়া ও অন্যান্য সতন্ত্র মানবাধিকার সংগঠন সমূহের হিসেব অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৭০০ মানুষকে বিনা বিচারে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে সরকারী বাহিনী হত্যা করেছে বলে জানান টবি কেডম্যান। তবে এ সংখ্যা আরো বেশী রয়েছে বলে তার ধারনা। হেফাজতে ইসলাম , জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের নানা সচিত্র তথ্য উপাত্ত আদালতে দাখিল করা হয়েছে জানিয়ে শ্রীঘ্রই এই মামলার প্রথমিক তদন্ত শুরু হবে বলে আশাবাদী তিনি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বৃটিশ এই আইনজীবি বলেন, মেধাবী ও সৎ নেতৃত্বকে বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচিত করা উচিত। তাতেই দেশে শান্তি ও ন্যায় বিচার প্রতিস্টা হবে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এর প্রেসিডেন্ট আদিলুর রহমানের পরিবারকে হয়রানি করছে সরকারের এজেন্সি বলে তিনি এসময় অভিযোগ করেন।

কথা বলেছেন, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকরের ব্যাপারেও। এই রায় কার্যকরকে জুডিশিয়াল কিলিং উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের সচেতন ও মানবতাবাধীরা কখনো মৃত্যুদন্ডকে সমর্থন করেনা। মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ব্যাপারেও তার গভীর উদ্বেগ রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।