ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণি র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর মুখ খুলেছেন তার প্রথম স্বামী সৌরভ। গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, পরীমনির একাধিক বিয়ে হলেও তাদের এখনো তালাক হয়নি।
নিজের জীবনযাপনের ধরনের জন্য একদিন ভুগতে হবে- পরীমনিকে এ কথা পরীর প্রথম স্বামী ফেরদৌস কবীর সৌরভ অনেক আগেই বলেছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। বর্তমান অবস্থায় পরীমনির পরিণতি কী হবে তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।
সৌরভ জানান, ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল যশোরের কেশবপুর শহরের অফিসপাড়ায় ফতেমা মঞ্জিলে পৌরসভার এমএমআরও কাজী এম ইমরান হোসেন এক লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। বিয়ের কাবিনে (নিকাহনামা) পরীমণি সই করেন শামসুন্নাহার স্মৃতি নামে। ৬ নং ক্রমিকে জন্ম তারিখ ১৫/১২/১৯৯২ লেখা হয়। তবে ৪ নং ক্রমিকে তার স্থায়ী ঠিকানায় পিতা মৃত মনিরুল ইসলাম, মাতার নাম মৃত সালমা সুলতানা, গ্রাম বাকা, পোস্ট ও উপজেলা কালিয়া, জেলা নড়াইল উল্লেখ রয়েছে।
সৌরভ গণমাধ্যমকে জানান, ২০১২ সালে সৌরভ ছিলেন এলাকার তুখোড় ফুটবলার। সে বছর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে ঢাকার একটি ক্লাবে ফুটবল খেলার ডাক পান তিনি। তখন স্ত্রী স্মৃতিকে নিয়ে রাজধানীতে চলে যান। ঢাকার বনশ্রীতে বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রীকে মিরপুরের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করেন। সেখানে থাকার এক পর্যায়ে মিডিয়ায় জড়িত এক ব্যক্তির সম্পর্ক হয় স্মৃতির। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তার বিভিন্ন স্টাইলের ছবি তুলে পত্রিকায় ছেপে তাকে মডেল ও নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখান ওই ব্যক্তি। এরপর শামসুন্নাহার স্মৃতি নাম পাল্টে পরীমনি করেন তিনি।
সৌরভ আরও জানান, মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পরই পরী ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনায় উৎসাহিত করে। পরে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের ব্যাপারটি টের পেয়ে ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন সৌরভ। এরই ভেতর দূরত্ব তৈরি হয় তাদের মধ্যে। একসময়ে ২০১৫ সালে কেশবপুরে চলে আসেন সৌরভ।
এ সব ঘটনার মধ্যেই নানীর দেওয়া নাম পরিবর্তন করে ‘পরীবানু’ হয়ে যান ‘পরীমনি’। মিডিয়াজগতে তর তর করে পরিচিতি পেতে থাকেন তিনি। প্রথম স্বামী সৌরভ জানান, সর্বশেষ ২০১৬ সালে তাদের কথা হয়েছিল।
এদিকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাত সাড়ে আটটার দিকে আদালতে হাজির করা হয় চিত্রনায়িকা পরীমনিকে। ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ অন্য ৩ আসামিও।
রিমান্ড শুনানির আগে পরীমনির পক্ষে একাধিক আইনজীবী মামলা লড়তে চাওয়া নিয়ে হয় হইচই। বিব্রত বিচারক ত্যাগ করেন এজলাস। পরে রাষ্ট্রপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শুরু হয় রিমান্ড শুনানি।
শুনানি শেষে মাদক মামলায় পরীমনি, রাজসহ প্রত্যেক আসামির ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ইয়াবা, আইস, এলএসডি এগুলো অনেক মারাত্মক ধরনের মাদক। এগুলো কীভাবে তাদের কাছে এসেছে, কারা এসব সেবন করে বা বিক্রি করে এসব খুঁজে বের করতে হবে।
এদিকে পরীমনির আইনজীবি নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী বলেন, তার বাসার মদের বোতলগুলো সে শখ করে কিনেছে। এগুলো খালি বোতল। তার বাসায় এসব মদ পাওয়া যায়নি।
এদিন কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অবস্থায় আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয় পরীমনির। কী কথা হয়েছিল জানতে চাইলে তার আইনজীবী জানান, এ ঘটনায় লজ্জিত পরীমনি। এ ঘটনায় তার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি।
এর আগে র্যাব সদরদপ্তর থেকে এদিন বিকেলে পরীমনিসহ আসামিদের নেওয়া হয় বনানী থানায়। করা হয় মাদক মামলা। জমা দেওয়া হয় উদ্ধার হওয়া মাদকসহ মামলার যাবতীয় আলামত।