বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের পুত্র-সন্তানরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দম্ভের সঙ্গে নিজেদের ‘আমি রাজাকারপুত্র’ বলে ঘোষণা দেওয়ার দুঃসাহস পায় কীভাবে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ।
ড. বেনজীর বলেছেন, বাংলার মাটিতে যারা দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম হরণ করেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে খুন করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে তাদের পক্ষ নিয়ে দম্ভ করার দুঃসাহস তারা পায় কিভাবে?’
‘স্বাধীনতার মাত্র পঞ্চাশ বছরের মধ্যে আস্ফালন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোটি কোটি মানুষের সামনে বলে তারা নাকি রাজাকারপুত্র। এদেশের মানুষকে সম্মিলতিভাবে এই দম্ভ চূর্ণ করতে হবে।’
বুধবার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য ‘নির্ভীক’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ-নোয়াখালী জেলা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে আইজিপি একথা বলেন বলে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এআইজি মো. সোহেল রানা জানিয়েছেন।
আইজিপি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে আমাদের পূর্বসূরীরা যে দেশটিকে আমাদের জন্য উপহার দিয়েছেন, তাদের যে অনবদ্য আত্মত্যাগ, সে আত্মত্যাগের মর্যাদা ধরে রাখার অন্যতম উপায় হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা। এটি একটি ঐতিহাসিক দায়, একটি ঐতিহাসিক কর্তব্য।’
দেশ ও মানুষের জন্য, স্বাধীনতার জন্য স্ত্রী ও সন্তানসহ স্বপরিবারে নোয়াখালী জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার আবদুল হাকিমসহ আত্মত্যাগকারী নোয়াখালী জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা ও বীর পুলিশ সদস্যদের অবদানের কথা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন আইজিপি।
বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রকাশিত বইটি সম্পাদনা করেছেন মো. আলমগীর হোসেন। গবেষণায় ছিলেন এ কে এম গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ, আবু নাছের মঞ্জু ও মো. এনায়েত করিম।
ড. বেনজীর বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ যে দুর্নিবার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিল আমাদেরকে সেই অহংকারের জায়গাগুলোকে আরও সুসংহত করতে হবে। এক্ষেত্রে এ ধরনের পুস্তক, ভাস্কর্য হতে পারে অন্যতম নিয়ামক, যাতে আমরা কখনো ইতিহাস বিস্মৃত না হই।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের যে অবদান, ভূমিকা রয়েছে তা দুটি কারণে ডকুমেন্টেড হওয়া দরকার। একটি হলো জাতির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ হিসেবে এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাস, ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে।’
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের বীরত্বগাথাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে ডকুমেন্টেড করতে হবে, যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এর মর্যাদা অনুভব করতে পারে, অহংকার করতে পারে। তারা যেন একটা মর্যাদাবান জাতি হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।’
নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সভাপতি হাবিবুর রহমান, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা নোয়াখালী জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার শহিদ আব্দুল হাকিমের মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়া পুলিশ সদরদপ্তর থেকে অতিরিক্ত আইজি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, অতিরিক্ত আইজি এস এম রুহুল আমিন, অতিরিক্ত আইজি মো. মাজহারুল ইসলাম, এটিইউর অতিরিক্ত আইজি মো. কামরুল আহসান প্রমুখ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
সূত্র ঢাকা টাইমস