দেশের খ্যাতিমান লেখক ও গবেষক, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব এবং বৃহত্তর সিলেটের কৃতি সন্তান দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী আজ সকালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন )। সততার মূর্ত প্রতিক মরহুম নূরুল আনোয়ার চৌধুরী ছিলেন সিভিল সার্ভিসের আইকন ৷তিনি ১৯৩৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ মহকুমার নবীগঞ্জের দিনারপুর সদরঘাট গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ৷
তিনি সরকারি আমলা হওয়ার পাশাপাশি একজন লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক, সিনিয়র গবেষক এবং গবেষণা সংগঠক ছিলেন। তিনি একজন উচুঁমাপের গবেষক ও শিকড় সন্ধানী লেখক ছিলেন৷বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত জালালাবাদের কথা , সিলেট বিভাগের ইতিহাস ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সিলেটসহ প্রায় ৩০টির অধিক মূল্যবান গ্রন্থের রচয়িতা ৷ প্রধানত সিলেটের ও সিলেটিদের আইডেন্টিটি ও অ্যাচিভমেন্টস অনুসন্ধান করা তার প্রধান লক্ষ্য ছিল। হজরত শাহজালাল (রহ.) ও সিলেটের ইতিহাস পুনর্গঠনের মাধ্যমে তিনি এ-কাজটি করতে প্রয়াস পেয়েছেন। সাথে বাংলাদেশকেও তিনি তুলে আনতে সক্ষম হয়েছেন। স্বকীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যকে গাইড করাও তার লেখালেখির অন্যতম উদ্দেশ্য। দেশি-বিদেশি লেখকদের আগ্রাসন থেকে সঠিক ইতিহাসকে যথার্থ গাইড করেছেন তিনি। এ কারণে গেজেটিয়ার (১৯০৫) প্রণেতা বি সি এলেন, অধ্যাপক আর এম ইটন, অধ্যাপক ডেভিড লাদেন, এইচ ব্লকম্যান, ড. আহমদ শরীফ, ড. এ এ ইরানী ও অন্যদের তার মতে বিভ্রান্তিকর মতবাদের চ্যালেঞ্জ করতে হয়েছে তাকে। এ কারণে তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তার ‘জালালাবাদের কথা’, ‘সিলেটী নাগরী’, ‘শিলালিপি ও সনদ’, ‘ঐতিহাসিক রূপরেখা, ‘হজরত শাহজালাল (রহ.)’ সংক্রান্ত গ্রন্থাদি লেখক ও গবেষকদের উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কর্মজীবনে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইন কর্মকর্তা ছিলেন। আইনের ওপর তার পাণ্ডিত্য, সকল মহলে স্বীকৃত।
উল্লেখ্য, সিলেট জজ কোর্টে আইন পেশায় যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন ৷১৯৬৯ সালে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন৷ সুদীর্ঘ কর্মজীবনে পাবনা সদর মহকুমার SDO, পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, শ্রম ও কর্মসংস্থান, সংস্থাপন ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, দূর্নীতি দমন ব্যুরোর ডাইরেকটর এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ছিলেন৷ ১৯৯৭ সালে যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন ৷
দেওয়ান নূরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী সহজ সরল জীবনে অভ্যস্থ মানুষটি ছিলেন নিরহংকারী, সদালাপী ও খোদাভীরু। মৃত্যুকালে ৩ পুত্র রেখে গিয়েছেন৷ তাঁর স্ত্রী সৈয়দা তাহেরা খাতুন চৌধুরী ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হুসেন সাহেবর কন্য৷ তাহেরা খাতুন গত বছর ইনতেকাল করেন৷
মরহুমকে তাঁর স্ত্রীর কবরের পাশে আজিমপুর কবরাস্থানে দাফন করা হবে৷
আমরা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি
বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল
লেখক ও প্রকাশক
পাণ্ডুলিপি প্রকাশন,সিলেট।