ইব্রাহিম খলিল : রোশানারা আলী। বাঙালীর গর্ব। বৃটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাঙালী এমপি। বৃটেনের রাজনীতিতে বাঙালী নারীদের রোল মডেল। আরো অনেক বিশেষন তার নামের সাথে সংযুক্ত করা যায়। ২০১০ সালে বৃটেনের জাতীয় নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনের বেথনালগ্রীন ও বো আসন থেকে এক ঐতিহাসিক বিজয়ের মধ্য দিয়ে রোশানারা আসীন হন বৃটিশ পার্লামেন্টে। ২ বছরের মাথায় এসে মনোনিত হন লেবার পার্টির শ্যাডো ইন্টারন্যাশনাল ডেভোলাপমেন্ট মিনিস্টার। বর্তমানে শ্যাডো এডুকেশন মিনিস্টার। অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট রোশানারার টেলেন্টকে মূল্যায়ন করেছে তার দল লেবার পার্টি। প্রথমবার এমপি হয়ে রাজনীতিতে এমন সাফল্য খুব কম এমপির ভাগ্য জুটেছিলো। বাঙালী কন্যা রোশানারা এগিয়ে যাচেছন। অগ্রযাত্রায় যুক্ত হচেছ একের পর এক চমক। এবার তিনি ব্যতিক্রর্মী এক উদ্যোগ নিয়ে নজর কেড়েছেন পুরো বৃটিশ পার্লামেন্টের। সমাজের সুবিধা বঞ্চিত তরুন প্রজন্মকে নেতৃত্ব ও যোগ্যতার বিকাশের অঙ্গিকার নিয়ে চালু করেছেন এক অনন্য প্রজেক্ট আপরাইজিং। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী অধম্য মেধাবী তরুণ-তরুনীদের লীডারশীপ ডেভেলাপমেন্ট, মিডিয়া, সোশাল একশন ক্যাম্পেইনিং স্কীল ডেভেলাপমেন্ট, পাবলিক স্পিকিং বিষয়ে ট্রেনিং দিয়ে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ করবে। ৯ মাসের পার্র্ট টাইম এই কোর্সে ট্রেনিং নিয়ে তরুণরা একটি সংগঠিত নেটওয়ার্কিং পোগ্রামের অধীনে মূলধারার রাজনীতি, ব্যবসায়া, সিভিল প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোক্ত হতে পারবেন। রোশনারার এমন ইনোভেটিভ আইডিয়ায় ইতিমধ্যে সঙ্গী হয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন, ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ও নিজ দল লেবাার পার্টির লিডার এড মিলিবান্ড। গর্ডন ব্রাউন আপরাইজিংয়ের অন্যতম এ্যাম্বেসেডর। আর প্রধানমন্ত্রী, ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা রোশনারার ডাকে সাড়া দিয়ে হলেন সংগঠনটির প্রেট্রন। একটি সংগঠনে শুরুতে প্রথম সারির নেতাদের এমন স¤পৃক্ততা বৃটেনে বিরল উদাহরন। আজ থেকে ৫ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৮ সালে থিংক ট্যাংক ইয়ং ফাউন্ডেশনের একটি অনন্য প্রজেক্ট হিসাবে আপরাইজিং এর যাত্রা শুরু হয়। গত ২৭ জানুয়ারী সোমবার বৃটেনে একটি স্বতন্ত্র চ্যারিটি হিসাবে যাত্রা শুরু করলো রোশানারার স্বপ্নের এই সংগঠনটি। এমপি রোশানারা আলী হচ্ছেন আপরাইজিংএর কো-ফাউন্ডার এবং চেয়ারম্যান। আপরাইজিং এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে তরুণদের মধ্যে লীডারশীপের যোগ্যতাকে বিকশিত করা। সমাজের বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত হোয়াইট ওয়ার্কিং ক্লাস, ব্ল্যাক এন্ড এথনিক মাইনোরিটি এবং শারীরিকভাবে অক্ষম মেধাবী তরুণরা হচেছ এর টার্গেট গ্রুপ। আপরাইজিং ২০০৮ সালে ইয়ং ফাউন্ডেশনের একটি প্রজেক্ট হিসাবে ইস্ট লন্ডনে কাজ শুরুর পর আপরাইজিং এ পর্যন্ত ৪৫০ জন তরুন-তরুণীকে ট্রেনিং দিয়েছে। ট্রেনিং পোগ্রামের পর এদের মধ্যে ৬৬% তাদের কমিউনিটিতে সোশাল একশন ক্যাম্পেইনেম্ব নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিপরীতে সারা দেশে গড়ে এই সংখ্যা মাত্র ২৯%। সার্ভেতে দেখা গেছে প্র্যাকটিক্যাল লীডারশীপ এক্সপেরিয়েন্স, চাকুরীর পাবার যোগ্যতা বৃদ্ধি, ভাল নেটওয়ার্ক আপরাইজারদের এই সাফল্যের পিছনে কাজ করেছে। ৯৬% তরুণ তাদের বিভিন্ন দক্ষতা বৃদ্ধিতে আপরাইজ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। আপরাইজিং এর কার্যক্রম লন্ডন ছাড়াও ২০১০ সালে বার্মিংহামে, ২০১১ সালে বেডফোর্ডে, ২০১২ সালে ম্যানচেষ্টারে বিস্তৃত করা হয়। পর্যায়ক্রমে এটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
রোশানারার এমন উদ্যোগে দারুন আনন্দিত তার নেতা এড মিলিবান্ড। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২০ এর কেবিনেটে আপরাইজিং থেকে বেরিয়ে আসা কাউকে দেখতে পেলে আমি বিশেষভাবে আনন্দিত হবো।
রোশানারা চান সমাজের বিভিন্ন ¯তরে ঘাপটি মেরে থাকা অযোগ্য ও অদক্ষ এলিট গোস্টির কর্তৃত্বের অবসান। তিনি জানিয়েছেন আগামী দিনগুলোতে সকল কমিউনিটির শত শত তরুণ রাজনীতি, সিভিল সোসাইটি এবং প্রাইভেট সেক্টরের প্রভাবশালী স্থানগুলোতে জায়গা করে নিবে সুবিধা বঞ্চিত মেধাবীরা। আর অবসান হবে এদেশের রাজনীতি, মিডিয়া, ব্যবসাসহ সর্বত্র তীব্রভাবে আকড়ে রাখা একটি ক্ষুদ্র এলিট গোষ্ঠির।
রোশানার এমন চিন্তুা চেতনায় সূর মিলিয়েছেন বৃটিশ নেতারাও। সোমবার হাউস অব কমন্সের স্পীকার রাইট অনারেবল জন বারকো এমপিম্বর স্বাগত ভাষনের মধ্যে দিয়ে স্পীকার হাউসের স্টেইট রুমে আপরাইজিং এর যখন উদ্বোধন ঘোষনা করা হয় তখন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাফল্য কামনা করেন বেশ কজন সেক্রেটারী, মিনিস্টার, শ্যাডো মিনিস্টার, এমপি, আপরাইজিং এ্যা“াসেডর, ফান্ডার, ট্রাস্টিসহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।মিনিস্টার ফর সিভিল সোসাইটি নিক হার্ড এমপি এবং শ্যাডো এডুকেশন সেক্রেটারী ট্রিসট্রাম এমপি এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, লিবডেম লীডার নিক ক্লেগ, লেবার লীডার এড মিলিব্যান্ড ভিডিও ম্যাসেজের মাধ্যমে আপরাইজিং এর প্যাট্রন হওয়ার ঘোষণা দেন এবং সংগঠনের সাফল্য কামনা করেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এমপি স্বতন্ত্রভাবে আপরাইজিং এর যাত্রা উপলক্ষে এক বিবৃতিতে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই সংগঠনের মূখ্য আদর্শের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বৃটেনের জন্য আর হতে পারে না। আর সেই আদর্শ হচ্চেছ, তুমি কোথায় জন্ম গ্রহন করেছ অথবা তোমার পিতামাতা কে, তা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়, বিবেচ্য হচ্চেছ তুমি কে এবং তুমি আমাদের দেশের জন্য কী করতে যাচ্চছ। এই আদর্শই আমাদের দেশের জন্য দরকার এবং আপরাইজিং^ এই আদর্শের ভিত্তির উপরই দাঁড়িয়ে আছে। এজন্য এর প্যাট’্রন হিসাবে যোগ দিয়ে আমি খুবই আনন্দিত।
Gud
welcome—–