সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ে চাঙ্গা হয়েছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মীরা। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে একইভাবে ফলাফল ঘরে নিতে একক প্রার্থী দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি জোট। জানা গেছে, টানা কয়েক মাসের আন্দোলনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রবল আগ্রহের কারণে এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার চিন্তা করছে জোট। তবে, আন্দোলনে যেসব নেতা নিষ্ক্রিয় ছিলেন নির্বাচনে তাদের প্রার্থী করা হবে না।
বিএনপি ও জোটের নেতারা বলছেন, টানা কঠোর আন্দোলনে থাকার পরও দশম সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশ। তাই এ হতাশা কাটাতে এবং আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করতে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কাজে লাগাতে চায় বিরোধী জোট। নির্বাচনের পর শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া এ বিষয়ে কথা বলেছেন বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুসারে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ হবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি। এতে ১০২টি উপজেলায় ভোট নেয়ার কথা থাকলেও সীমানা পুনর্নির্ধারণ জটিলতায় চারটি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে না। আর দ্বিতীয় দফায় ১১৭টি উপজেলা নির্বাচন হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে কয়েক মাস ধরে টানা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি সারাদেশে সফল করতে পারলেও রাজধানীতে এর প্রভাব ফেলতে পারেনি বিএনপি জোট। যে কারণে খালেদা জিয়া ঢাকার নেতাদের ওপর নিজের ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, দল নির্বাচন বর্জন করায় সংসদ নির্বাচনে কোথাও প্রার্থী হননি বিএনপি ও জোটের নেতারা। এজন্য তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরাও ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। তাই আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রবল আগ্রহের কারণে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্বাচনের সার্বিক বিষয় দেখভাল করতে দায়িত্বও দিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও শরিক দলের স্থানীয় নেতারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। স্থানীয় নির্বাচন হলেও কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় প্রার্থীদের কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিতে শুরু করেছেন। কোথাও কোথাও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থেকেই প্রার্থী নির্বাচন করছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে এখনো বাড়িঘরে ফিরতে পারছেন না। তাই আন্দোলনের অংশ হিসেবেই উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দল সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতেও স্থানীয় নেতাদের নানা নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় হলেও এ নির্বাচনকে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করা হবে। সেজন্য অঞ্চলভিত্তিক নেতাদের সমন্বয়ে একটি টিমও করা দেয়া হয়েছে।”
তিনি আরো জানান, থানা শাখার নেতৃবৃন্দ মূলত প্রার্থী বাছাই করবেন। জেলা কমিটি তাদের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তবে একক প্রার্থী দেয়া ও জোটের অন্য দলগুলোর সমন্বয়ে নির্বাচনের বিষয়ে বেশি জোর দেয়া হবে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় যেসব নেতা আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ছিলেন এবং সরকারি দলের সঙ্গে আঁতাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশনাও রয়েছে।
বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিবে জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল অব. মাহবুবুর রহমান নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “আমাদের নেতারা আগ্রহী, তাই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। তবে, শর্ত হলো নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত হতে হবে।”
আর দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “অন্য স্থানীয় নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনেও সরকারকে আনচ্যালেঞ্জ ছেড়ে দেব না। স্থানীয় নির্বাচনে যেহেতু দলীয়ভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই তাই সেভাবেই অংশ নেয়া হবে। আর আমরাতো স্থানীয় কোনো নির্বাচনই বর্জন করিনি।”
জানা গেছে, বিএনপি জোট নির্বাচন প্রতিহত করতে না পারায় হতাশা থেকে উত্তরণে ‘ধীরে চলো’ নীতির কৌশলের মধ্যে এ নির্বাচন অন্যতম। পাশাপাশি আন্দোলনের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে কর্মসূচি দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। একই সঙ্গে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে তা পুনর্গঠনেরও চিন্তা করা হচ্ছে। আর আন্দোলনে আরো গতি আনতে জোটের পরিধি বাড়ানোর চিন্তা চলছে। যদিও ইতিমধ্যে কাজী জাফরের জাতীয় পার্টির যোগদানের মধ্য দিয়ে ১৮ দল এখন ১৯ দলীয় জোটে পরিণত হয়েছে।
এদিকে বিএপি জোটের শরিক দলগুলোর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী সংখ্যা বেশি। প্রথম দফার নির্বাচনে দলটির ৩৩জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলেছেন বলে জানা গেছে। তবে অন্য দলগুলোর কোথাও কোথাও প্রার্থী থাকবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় ১৯ দলের নেতারা প্রার্থী বাছাই করবেন বলে জোটের একজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন। তবে দল সংখ্যায় ১৯টি হলেও মূলত বিএনপিই প্রধান। জামায়াতে ইসলামীর তৃণমূলে জনসমর্থন থাকলেও দলটির সঙ্গে জোটের টানাপোড়েন চলছে। তাছাড়া জামায়াতের যারা প্রার্থী হওয়ার মতো তাদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা থাকায় অনেকেই প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় নেতারা প্রার্থী বাছাইসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করবেন। তবে, সবকিছু বিএনপিসহ জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে করা হবে।”