ব্রেকিং নিউজ
Home / সিলেট / মোটর সাইকেল আটকের পর ফেসবুকে লাইভ, সেই ফয়ছল কাদির র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

মোটর সাইকেল আটকের পর ফেসবুকে লাইভ, সেই ফয়ছল কাদির র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

 

মোটরসাইকেল আটকের পর ফেসবুকে লাইভ করে ভাইরাল হওয়া কথিত সাংবাদিক ফয়ছল কাদিরকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৯।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে সিলেট সদর উপজেলার পীরের বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান র‌্যাব-৯ এর এসএসপি সামিউল আলম।

এরআগে রোববার রাতে সিলেট নগরের শাহপরান থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

লকডাউন চলাকালে গত ৯ জুলাই নিজের কাগজপত্রবিহীন মোটরসাইকেল আটক করায় ক্ষুৃব্দ হয়ে ফেসবুক লাইভ করেন ফয়ছল কাদির (৪০) নামের এক ব্যক্তি। লাইভে যিনি নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন।

ফেসবুকে লাইভ করার ঘটনায় রোববার রাতে সিলেট নগরের শাহপরান থানায় ফয়ছল কাদিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া। এরপর থেকে তাকে গ্রেপ্তারের অভিযান চালাচ্ছিলো পুলিশ। এরমধ্যে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

ফয়ছল কাদির ‘পৃথিবীর কণ্ঠ (পিকে) টিভি’ নামে ফেসবুক ভিত্তিক একটি পেজ পরিচালনা করেন। ফেসবুকে নিজেকে পিকে টিভির সম্পাদক ও মাতৃজগত নামের একটি পত্রিকা সিলেট ব্যুরো প্রধান হিসেবে দাবি করেছেন ফয়ছল।

তবে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ বলেন, ‘মাতৃজগত নামে কোনো পত্রিকার নাম কখনও আমি শুনিনি। এই নামে কোনো পত্রিকা আছে কি না, আমার জানা নেই। ফয়ছল কাদির নামে কোনো সাংবাদিককেও চিনি না। তিনি সিলেটের কোনো সাংবাদিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত নন।’

তিনি বলেন, ‘এখন যে কেউ একটি ফেসবুক পেজ খুলে নিজেকে সাংবাদিক, এমনকি সম্পাদক পরিচয় দিয়ে দিচ্ছেন। এতে প্রকৃত সাংবাদিকেরাও বিপাকে পড়ছেন। দায়িত্ব পালনে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা চাই এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হোক। যাতে কেউ সাংবাদিক পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।’

পুলিশের সাথে আলাপকালে জানা যায়, লকডাউন চলাকালে গত ৯ জুলাই বিকেলে সিলেট-তামাবিল সড়কের সুরমা গেট এলাকায় তিন আরোহি নিয়ে চলা একটি মোটরসাইকেল আটক করে পুলিশ। ফয়ছল কাদির এই মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন। এসময় তার মাথায় হেলমেট ছিলো না। আটকের পর তিনি মোটর সাইকেলের কাগজপত্র এবং নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেখাতে পারিনি।

ওইদিন ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ সদস্য বলেন, মোটরসাইকেল আটকের পর ফয়ছল কাদির নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুলিশের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং মোটর সাইকেল ছাড়িয়ে নিতে চান। এতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ফেসবুকে লাইভ করা শুরু করেন। তবে তার মোটাসাইকেলটি ওইদিন আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ সদস্য।

তবে পরদিন জরিমানা দিয়ে মোটরসাইকেলটি তিনি ছাড়িয়ে নেন বলে জানায় পুলিশ।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওতে দেখা যায়, মোটর সাইকেল আটকের ঘটনায় ক্ষুব্দ হয়ে কথা বলছেন ফয়ছল কাদির। তার সাথে কেনো এমন আচরণ করা হলো বারবার তা দায়িত্বরত পুলিশের কাছে জানতে চান। পুলিশের উর্ধতন কর্তপক্ষ এবং সাংবাদিকদকের ফোন করে এই ঘটনা জানাচ্ছেন বলেও লাইভে বলতে শোনা যায় ফয়ছলকে।

মোটর সাইকেলটি আটককালে সুরমা গেইটে চেকপোস্টের দায়িত্বে ছিলেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া।

ফয়সাল কাদিরের লাইভ চলাকালেই সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসারকে বলতে শোনা যায়, আপনার গাড়িতে ৩ জন তুলছেন কেনো? গাড়ির কাগজ কই? ড্রাইভিং লাইসেন্স কই?

এসব প্রশ্নের জবাবে ফয়ছল বলেন, আমার গাড়ির সেল রিসিট আছে। আমি অসুস্থ। একটি জরুরী নিউজের খবর পেয়ে তাড়াহুড়ো করে বের হয়েছি। তাই এটি সাথে আনতে পারিনি। একটু সময় দিলে নিয়ে আসবো।

এসময় সার্জেন্ট নুরুল লাইভ ক্যামেরার সামনে মুখ নিয়ে একাধিকবার বলেন, সাংবাদিক বলে কি সবকিছু মাফ?

জবাবে ফয়ছল বলেন, ‘আপনার গাড়ির কাগজ কই? পুলিশেরও হেলমেট থাকে না। আমি সর্যি বলেছি। তারপরও আমার গাড়ি রেকার করছেন কেনো। সিলেটেরর মানুষ খুব ভালো। এই মাটি খুব ভালো। তাই সিলেটের মানুষ এতো আদর করে সোহাগ করে। আর আপনি আইনের ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। গাড়ি চলতেছে। গাড়ি চলার সুবিধা দিয়ে সাধারণ সংবাদকর্মীর সাথে এমন আচরণ করছেন।…’

এই বাদনাবাদুনের লাইভ ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুক লাইভেই অনেকে ফয়সাল কাদিরের আচরণের নিন্দা করে মন্তব্য করেন। সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা, ক্ষমতা প্রদর্শনের নিন্দা করেন মন্তব্যকারীরা। একইসাথে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের আচরণের প্রশংসা করেন তারা।

এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে রোববার রাতে ফয়ছল কাদিরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সেদিন মোটরসাইকেল আটককারী সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া।

মামলার এজাহারে ফয়ছল কাদিরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য সরাসরি প্রচার করে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার রাতেই ফেসবুকে পিকে টিভি পেজ থেকে দেয়া একটি লাইভে ফয়ছল কাদির বলেন, ‘ওই দিন আমি অসুস্থ ছিলাম। একটি পারিবারিক ঝামেলার কারণে আমার মনমানসিকতাও ভালো ছিল না। তাই কিছু উল্টাপাল্টা ব্যবহার করে ফেলেছি। পুলিশ সদস্যদের মনে কষ্ট দিয়েছি। এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’
সৌজন্যে- সিলেট টুডে ২৪