ব্রেকিং নিউজ
Home / ব্রিটেন সংবাদ / বাংলাদেশে পরিষেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের পাসপোর্টকে আইডি হিসেবে গণ্য করার দাবী সিবিপিডি’র

বাংলাদেশে পরিষেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের পাসপোর্টকে আইডি হিসেবে গণ্য করার দাবী সিবিপিডি’র

 

সেন্টার ফর ব্রিটিশ বাংলাদেশ পলিসি ডায়ালগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বহির্বিশ্বের ১ কোটি ৬০ লাখ প্রবাসীর পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ দাবী উত্থাপন করা হয়েছে। দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে দুতাবাস থেকে বাংলাদেশের এনআইডি কার্ড প্রদান, বাংলাদেশী পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছরকরণ ও হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রুল অনুযায়ী বাংলাদেশে ১২২টি পরিসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে এনআইডি কার্ডের পাশাপাশি প্রবাসীদের পাসপোর্টকে আইডি হিসেবে গন্য করার নির্দেশনা জারি করা।

গত ২৫ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল রোডস্থ একটি রেস্টুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে উপরোক্ত দাবীগুলো উত্থাপন করেন সংগঠনের সদস্য ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী। এসময় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, সলিসিটর মুহাম্মদ আবুল কালাম ও সলিসিটর সহুল আহমদ ।

লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, গত ৮ মার্চ লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা প্রবাসীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে দুটি দাবি উত্তাপন করেছিলাম। দাবি দুটো হলো- প্রবাসীদেরকে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে স্মার্ট ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রদান এবং বাংলাদেশী পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ১০ বছরে উন্নতিকরণ ।এই দাবিগুলোর পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে আমরা লন্ডন, ম্যানচেস্টার, ওল্ডহাম, স্ক্যানথ্রপ, বার্মিংহামসহ বিভিন্ন শহরে সরাসরি, ব্যক্তি এবং সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে যোগাযোগ করি এবং আমাদের দাবিগুলোর পক্ষে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রেরণ করতে সকল প্রবাসীর প্রতি আহবান জানাই ।

তাছাড়া আমরা সিবিপিডির পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল যুক্তরাজস্থ বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের সাথে সাক্ষাৎ করি । অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ এ বৈঠকে সাঈদা মুনা তাসনিম আমাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট মহলে পাঠানোর পাশাপাশি আমাদের দাবির পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালনেরও কথা দিয়েছিলেন। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা করেছি।

শুধু সিবিপিডি বললে ভুল হবে আমরা মনে করি বিষয়টি উত্তাপনের পর প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছিলো, সকল প্রবাসী বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছিলেন এবং যার যার অবস্থান থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন। আমাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে ব্রিটেনের অনেকগুলো সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনও বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন-এর কাছেও তুলে ধরেন। আমরা সিবিপিডির পক্ষ থেকে যারা প্রবাসীদের এই দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে একযোগে কাজ করেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

২০১৯ সালে ২৯ জুলাই বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক সভায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনার ডঃ রফিকুল ইসলাম বলেছিলেন ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে ব্রিটেন প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে ব্রিটেন প্রবাসীদের স্মার্ট ন্যশনাল আইডিকার্ড প্রদান করা এবং প্রবাসীদের ব্রিটেনে বসে বাংলাদেশের নির্বাচনে সরাসরি ভোট প্রদানের ব্যবস্থার করণেরও আশ্বাস দিয়েছিলেন।

তাছাড়া প্রবাস থেকে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনী জটিলতা নিরসনে আইন সংশোধনেরও আশ্বাস দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনার কথা দিয়েছিলেন, সিঙ্গাপুরের পর ব্রিটেন হবে দ্বিতীয় দেশ যেখানে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করবে। নির্বাচন কমিশনের একটি প্রতিনিধি দলকে ব্রিটেনে পাঠানোরও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, করোনা মহামারীর কারণে আমরা আর বিষয়টির অগ্রগতি দেখতে পাইনি।
গত ১৪ জুন (২০২১) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান একটি রিট আবেদনের রুল জারি করার সময় বাংলাদেশে আদালত কিংবা থানায় মামলা করার ক্ষেত্রে এনআইডি কার্ড প্রদর্শন বাধ্যতামূলক বলে মৌখিক নির্দেশনা দেন । যা সর্বস্তরের প্রবাসী, বিশেষকরে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে । এই রুল জারির ১০দিনের মাথায় গত ২৪ জুন হাইকোর্ট আদালত অথবা থানায় মামলা করার ক্ষেত্রে মোট ৫ টি নির্দেশনা প্রদান করেন যা নিম্নরূপ:

প্রথম নির্দেশনা: অভিযোগ/এজাহারে অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর, ক্ষেত্রমতে পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করতে হবে। দ্বিতীয় নির্দেশনা: এজাহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে সে ক্ষেত্রে এজাহারকারীকে শনাক্তকারী ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করতে হবে। তৃতীয় নির্দেশনা: বিশেষ পরিস্থিতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট নম্বর সহজলভ্য না হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এজাহারকারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য স্বীয় বিবেচনায় অন্যান্য যথাযথ পদ্ধতি গ্রহণ করবেন। চতুর্থ নির্দেশনা: আদালত কিংবা ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট না থাকলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী অভিযোগকারীকে শনাক্ত করবেন। পঞ্চম নির্দেশনা: অভিযোগকারী প্রবাসী কিংবা বিদেশি নাগরিক হলে সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করতে হবে।

সিবিপিডির পক্ষ থেকে হাইকোর্টের এই নির্দেশনাগুলোকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি এই নির্দেশনা অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং বাস্তবতার নিরিখে প্রদান করা হয়েছে। প্রবাসীদের মধ্যে যে শংকা তৈরী হয়েছিলো এই নির্দেশনা প্রকাশের পর আশা করি তা দূর হবে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশী প্রবাসীরা এখন থেকে এনআইডি কার্ডের পরিবর্তে নিজ নিজ পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশের যেকোনো আদালত কিংবা থানায় মামলা করতে পারবেন।

প্রিয় সাংবাদিবৃন্দ আপনারা নিশ্চয় জানেন, বাংলাদেশে বর্তমানে জমি কেনা বেচা, ব্যাংক একাউন্ট খোলা কিংবা পরিচালনা, মোবাইল সিম কার্ড কেনাসহ মোট ১২২টি কাজে এনআইডি কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক। আমরা মনে করি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে আমাদের দাবি হলো, প্রবাসীরা যেন সরকারের এই পরিসেবা গ্রহণে কোনোভাবে বঞ্চিত না হোন। প্রবাস থেকে বাংলাদেশে গিয়ে অনেকেই এনআইডি কার্ড নিতে বিড়ম্বনার শিকার হয়ে থাকেন । তাছাড়া এই কার্ড ইস্যুর দীর্ঘসূত্রীতার কারণে অনেকেই প্রয়োজনীয় কাজ সঠিক সময় সমাধান করতে পারেন না। এজন্যই আমরা প্রবাস মিশন থেকে এই কার্ড ইস্যুর জোর দাবি জানিয়ে আসছি।

আমরা মনে করি বাংলাদেশ সরকার হাইকোর্টের এই নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রবাসীদের জন্য খুব সহজে ১২ টি পরিসেবা গ্রহণের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে পারে। অর্থাৎ হাইকোর্টের পঞ্চম নির্দেশনা যদি সরকার অনুসরণ করে তাহলে খুব সহজে প্রবাসীদের এনআইডি নিয়ে বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিতে পারবে।
আমরা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করেছিলাম বাংলাদেশী পাসপোর্ট এবং নো ভিসার ডাটাবেজ ব্যবহার করে প্রবাসীদের এনআইডি কার্ড প্রদানের । এতে এনআইডি ইস্যু করা খুবই সহজ হবে । কিন্তু নির্বাচন কমিশন থেকে এতদিন বলা হয়েছিলো কমিশন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ডাটাবেজ অর্থাৎ পাসপোর্ট কিংবা নো ভিসার ডাটাবেজ ব্যবহার করে এনআইডি ইস্যু করতে পারবেন না। কমিশনের নিজস্ব ডাটাবেজ লাগবে। যা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন বিশাল অংকের অর্থ এবং সরকারের সদিচ্ছা। আর এই জটিলতা কিংবা টানাপোড়েনের কারণে আমরা মনে করি এতোদিন বিষয়টি আলোর মুখ দেখেনি।
পৃথিবীতে যে সকল দেশে এনআইডি চালু আছে, সেসকল দেশে পাসপোর্ট এবং এনআইডি কার্ড একসাথে আবেদন করা যায় এবং এক সাথে ইস্যু করাও হয়। একই ডাটাবেজও ব্যবহার করা হয়।

আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, এনআইডি কার্ড বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে । সিবিপিডি মনে করে এর মাধ্যমে প্রবাসীদের আরো সহজে এনআইডি প্রদান সম্ভব হবে । অর্থাৎ পাসপোর্ট কিংবা নো ভিসার ডাটাবেজ ব্যবহার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খুব সহজেই এনআইডি কার্ড ইস্যু করতে পারবে। আমরা অনতিবিলম্বে প্রবাস-মিশন থেকে প্রবাসীদের এনআইডি কার্ড ইস্যুর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি । একই সাথে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ১২২ সরকারি পরিষেবার জন্য এনআইডি কার্ডের পাশাপাশি প্রবাসীদের জন্য হাইকোর্টের পঞ্চম নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশী পাসপোর্ট অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

পৃথিবীর সকল দেশে ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের প্রচলন রয়েছে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশেও ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের প্রচলন ছিলো । পাসপোর্ট ডিজিটালে উন্নীত করার সময় মেয়াদ কমিয়ে ৫ বছরে নিয়ে আসা হয় । যা প্রবাসীদেরকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। ২০১৯ সালে আমরা যখন বিষয়টি উত্তাপন করি তখন সরকার থেকে বলা হয়েছিলো, পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ থেকে ১০ বছরে উন্নীত করার প্রয়োজনীয় সকল কাজ সম্পাদন করা হয়ে গেছে । অচিরেই ১০ বছর মেয়াদি বাংলাদেশী পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বিষয়টি এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। প্রবাসীদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে এবং হয়রানি ও দুর্দশা লাঘবে অনতিবিলম্বে ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

আমরা মনে করি আমাদের দাবি ন্যায্য এবং যৌক্তিক। বাংলাদেশ সরকার সবসময় প্রবাসীদের ন্যায্য দাবিগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে । আমরা যদি সঠিকভাবে আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন না করি তাহলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আমরা এই এই দাবিগুলো বাস্তবায়নে সিবিপিডির পক্ষ থেকে দলমতের উর্ধে উঠে সকল প্রবাসীকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।